IPL 2024: জমে উঠেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) সপ্তদশতম মরসুম। আজ টুর্নামেন্টের প্রথম রবিবার রয়েছে দুটি ম্যাচ। দিনের প্রথম খেলায় জয়পুরের সোয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো রাজস্থান রয়্যালস ও লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস। গত মরসুমে রাজস্থানের ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে দিয়েছিলো লক্ষ্ণৌ। আজ সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিলেন সঞ্জু স্যামসন, রিয়ান পরাগ’রা। ২০ রানের ব্যবধানে সুপারজায়ান্টসদের হারিয়ে মরসুমের প্রথম ২ পয়েন্ট ঝুলিতে পুরে নিলেন তাঁরা। টসের মুদ্রা আজ পড়েছিলো হোম টিমের পক্ষেই। প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। ওপেনিং জুটি সফল হয় নি তাদের। তবে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। সঞ্জুর অর্ধশতক, রিয়ান পরাগ, ধ্রুব জুড়েলের ক্যামিও ৪ উইকেটের বিনিময়ে তাদের পৌঁছে দেয় ১৯৩ রানে।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে মুশকিলে পড়েছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসও। ট্রেন্ট বোল্ট, নান্দ্রে বার্গারদের সামনে বেশ অসহায় লাগলো লক্ষ্ণৌ টপ-অর্ডারকে। ক্যুইন্টন ডি কক, দেবদত্ত পাডিক্কাল, আয়ুষ বাদোনি-রান পান নি কেউই। ১৩ বলে ক্যামিও ইনিংসের পর সাজঘরে ফেরেন। এরপর নিকোলাস পুরানকে সাথে নিয়ে লক্ষ্ণৌকে লড়াইতে ফেরান অধিনায়ক কে এল রাহুল। অর্ধশতক করেন দুজনেই। কিন্তু যথেষ্ট হয় নি তা। এই মরসুমের আগে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস থেকেই ট্রেডিং পদ্ধতিতে আবেশ খানকে দলে নিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। শেষ ওভারে তফাৎ গড়ে দিলেন আবেশই। দুরন্ত বোলিং করে মারমুখী পুরানকে রুখে দিলেন তিনি। ১৭৩-এর বেশী এগোতে পারে নি লক্ষ্ণৌ। হেরেই মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।
Read More: স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে টিম ইন্ডিয়ার, অবসর কাটিয়ে ফিরছে এই পাকিস্তানি বোলার !!
সঞ্জু-রিয়ানের ব্যাটে বড় রান রাজস্থানের-
প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয় নি রাজস্থান রয়্যালসের। তাদের তারকাখচিত ওপেনিং জুটি বিশেষ সাফল্য এনে দিতে পারে নি দল’কে। প্রথমেই উইকেট হারান জস বাটলার। মাত্র ১১ রান করে আফগানিস্তানের নবীন উল হকের বলে উইকেটরক্ষক কে এল রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ৩১ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় রাজস্থান। এরপর ঝোড়ো ইনিংস খেলার প্রয়াস ছিলো যশস্বী জয়সওয়ালের। কিন্তু মুম্বইয়ের তরুণ তুর্কি ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারলেন না আজ। ১২ বলে ২৪ রানের বেশী আজ এগোনো সম্ভব হলো না তাঁর পক্ষে। মহসীন খানের বলে যশস্বী ধরা পড়েন ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার হাতে। দুই ওপেনাররকে হারানোর পর রাজস্থান রয়্যালস ঘুরে দাঁড়ায় অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের ব্যাটে ভর দিয়ে।
২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩-টানা চার বছর মরসুমের প্রথম ম্যাচে অর্ধশতক বা তার বেশী রান করেছেন সঞ্জু স্যামসন। রয়েছে একটি শতরান’ও। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৪-এ এসেও বজায় রাখলেন তিনি। অনবদ্য ব্যাটিং করলেন আজ। মহসীন খান, নবীন উল হক, রবি বিষ্ণোই-লক্ষ্ণৌর বোলিং লাইন আপ বেশ শক্তিশালী ছিলো আজ, তা সত্ত্বেও নিখুঁত ক্রিকেট খেলে রাসস্থানের স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন তিনি। ৩টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে ৮২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সঞ্জুর সাথে যোগ্য সঙ্গত করলেন অসমের তরুণ রিয়ান পরাগ। গত কয়েক মরসুমে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। নিন্দুকদের আজ চুপ করালেন তিনি। ২৯ বলে করেন ৪৩ রান। শিমরন হেটমায়ার ৫ রান করে আউট হলেও শেষবেলায় ঝড় তোলেন ধ্রুব জুড়েল। ১২ বলে তাঁর ২০* রানের ইনিংস রাজস্থানকে পৌঁছে দেয় ১৯৩ রানে।
রাহুল-পুরানের লড়াই সত্ত্বেও হার লক্ষ্ণৌ’র-
কে এল রাহুল কোন পজিশনে ব্যাটিং করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো ক্রিকেটজনতার মনে। বিশেষত প্রথম ইনিংসে তাঁকে উইকেটকিপিং করতে দেখার পর অনেকেই মনে করেছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপ’কে মাথায় রেখে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে পারেন তিনি। কিন্তু চেনা ওপেনিং স্লটকেই বেছে নিলেন লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস অধিনায়ক। ইনিংসের শুরুতে আজ তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যুইন্টন ডি কক। যদিও রান পান নি তিনি। মাত্র ৪ করে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হন তিনি। পাওয়ার-প্লে’তে উইকেট পাওয়ার জন্য সুনাম রয়েছে বোল্টের। বাম হাতি কিউই পেসার’ও আজও নতুন বল হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। ডি ককের পর তিনি ফেরান দেবদত্ত পাডিক্কালকে। রাজস্থান থেকেই লক্ষ্ণৌতে গিয়েছেন দেবদত্ত। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৩ বলে ০ করলেন তিনি।
চার নম্বরে আয়ুষ বাদোনিকে নামিয়েছিলো লক্ষ্ণৌ। ব্যর্থ তিনিও। ১ রান করে নান্দ্রে বার্গারের বলে ফেরেন সাজঘরে। ধুঁকতে থাকা লক্ষ্ণৌ ইনিংসের হাল ধরেন কে এল রাহুল ও দীপক হুডা। হুডা’র ১৩ বলে ২৬ রানের ক্যামিও সুপারজায়ান্টসদের খানিক অক্সিজেন যোগায়। এরপর রাহুল ও নিকোলাস পুরানের জুটি ম্যাচে ফেরায় তাদের। চোট সারিয়ে ফিরে ৪৪ বলে ৫৮ করলেন রাহুল। সন্দীপ শর্মার বলে তিনি আউট হতে ফের ব্যাকফুটে চলে যায় লক্ষ্ণৌ। বিস্ফোরক ব্যাটিং করে শেষ ওভার অবধি আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিকোলাস পুরান। ৬ বলে বাকি ছিলো ২৭। আবেশ খান প্রথম বলটি ওয়াইড করলেও বাকি ডেলিভারিগুলিতে দুরন্ত নিয়ন্ত্রণ রেখে বড় শট খেলতে দেন নি পুরান’কে। শেষমেশ তিনি অপরাজিত থাকেন ৪১ বলে ৬৪ করে।