IPL 2024: বিশ্বকাপ শেষ। এখন ক্রিকেটজনতার ফোকাস সরেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) দিকে। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই কর্তৃক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার সপ্তদশ মরসুম শুরু হতে বাকি এখনও মাসখানেক। কিন্তু সামনেই রয়েছে ‘মিনি’ নিলাম। আপাতত তা জায়গা করে নিয়েছে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভারতীয় বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে যে আগামী ১৯ ডিসেম্বর আয়োজিত হতে চলেছে ‘মিনি’ নিলাম। গত বছর কেরলের কোচিতে আয়োজন করা হয়েছিলো। এবার দেশ ছাড়িয়ে তা পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে বসতে চলেছে আসর। প্রস্তুত দশ ফ্র্যাঞ্চাইজিই। গত ২৬ নভেম্বর নিজেদের রিলিজ ও রিটেনশন তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে তারা। কারা থাকছেন আগামী মরসুমে, আর কারাই বা পড়ছেন বাদ, প্রকাশ করা হয়েছে যাবতীয় তথ্য।
ষোলো মরসুম আইপিএলে (IPL) অংশ নিলেও এখনও ট্রফি জয় সম্ভব হয় নি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) পক্ষে। কখনও ফাইনাল আবার কখনও প্লে-অফ থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। সপ্তদশ মরসুমে ব্যর্থতার ধারাবাহিক চিত্রে বদল আনতে মরিয়া তারা। নতুন উদ্যমে দল গড়তে ঝাঁপিয়েছে আরসিবি কর্তৃপক্ষ। তাদের রিটেনশন তালিকায় জায়গা হয়েছে ১৭ জনের। বেঙ্গালুরু রিলিজ করে দিয়েছে ১১ জন’কে। ট্রেডিং পদ্ধিতিতে শাহবাজ আহমেদের (Shahbaz Ahmed) বদলে সামিল করেছে মায়াঙ্ক ডাগারকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স থেকে ১৭.৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়েছে অজি অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন’কে (Cameron Green)। আরসিবি’র হাতে স্লট ফাঁকা রয়েছে ৬টি। ‘অকশন পার্সে’ অর্থের পরিমাণ ২৩.২৫ কোটি। এই অর্থ আসন্ন নিলামে তারা তিন তারকা ক্রিকেটারের পিছনে খরচ করতে পারে।
Read More: “বিরাটকে আমি সরাই নি…” কোহলির ক্যাপ্টেন্সির প্রসঙ্গে মুখ খুললেন সৌরভ গাঙ্গুলী, দিলেন বড় বয়ান !!
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-

শ্রীলঙ্কার টি-২০ সুপারস্টার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে (Wanindu Hasaranga) ২০২২ সালের মেগা অকশনে ১০.৭৫ কোটি টাকার বিনিময়ে দলে সামিল করেছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। ২০২২-এ প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছিলো বেঙ্গালুরু। শেষমেশ রাজস্থানের বিরুদ্ধে হেরে ফাইনাল থেকে এক ধাপ আগে যাত্রা শেষ হয় তাদের। সেই সাফল্যের অন্যতম কাণ্ডারী হয়েছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga)। মাত্র ১৬ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। দ্বিতীয় মরসুমটা অবশ্য আশানুরূপ যায় নি তাঁর। তিনি দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন দেরীতে। আট ম্যাচ খেলে ৯টির বেশী উইকেট পান নি।
‘মিনি’ নিলামের আগে হাসারাঙ্গাকে (Wanindu Hasaranga) ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। নিলামে অপেক্ষাকৃত কম দামে শ্রীলঙ্কান তারকাকে দলে ফেরানোর জন্য ঝাঁপাতে চলেছে তারা। বেঙ্গালুরু স্কোয়াডে তারকা ব্যাটারের ছড়াছড়ি হলেও স্পিনারের আকাল। হাসারাঙ্গার মত প্রতিভাবান কাউকে দলে অবশ্যই চাইবেন কোহলি,দু প্লেসি, ম্যাক্সওয়েল’রা। হাসারাঙ্গার (Wanindu Hasaranga) অন্যতম ইতিবাচক দিক তাঁর উইকেট তোলার পাশাপাশি রান আটকানোর ক্ষমতা। একই সাথে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতেও বড় ভূমিকা নিতে পারেন তিনি। চোটের কারণে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ খেলা হয় নি তাঁর। কিন্তু তার আগে লঙ্কা প্রিমিয়ার লীগের (LPL) সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে আরও একভার হাসারাঙ্গার উপর বাজি ধরতে পারে বেঙ্গালুরু।
মিচেল স্টার্ক-

গত ২৬ নভেম্বর বেঙ্গালুরু (RCB) যে রিলিজ তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম রয়েছে একাধিক পেসারের। হর্ষল প্যাটেল, জশ হ্যাজেলউড (Josh Hazlewood), ওয়েন পার্নেল, ডেভিড উইলি’দের
(David Willey) মত তারকাদের বিদায় জানিয়েছে বিরাট কোহলির ফ্র্যাঞ্চাইজি। বোলিং বিভাগকে শক্তপোক্ত করতে হলে তাই এক বা একাধিক ফাস্ট বোলারকে আসন্ন নিলাম থেকে ছিনিয়ে নিতেই হবে বেঙ্গালুরুকে। তাদের নিশানায় তাই থাকতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার বাম হাতি পেস তারকা মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc)। ২০১৫ সালের পর থেকে আইপিএলের আসরে নাম লেখান নি অজি ক্রিকেটার। কখনও চোট-আঘাত তাঁকে বাইরে রেখেছে, আবার কখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফোকাস করার জন্য নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগ থেকে। এবার যে তিনি নিলামে অংশ নেবেন তা বেশ কয়েক মাস আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
আইপিএলের (IPL) আঙিনায় মাত্র দুই মরসুম অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে স্টার্কের (Mitchell Starc)। ২০১৪ ও ২০২৫ সালে তিনি খেলেছিলেন বেঙ্গালুরু জার্সি গায়ে চাপিয়েই। দুই মরসুম মিলিয়ে তাঁর পারফর্ম্যান্স’ও ছিলো চমকপ্রদ। ২৭ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩৪ উইকেট। পরে নিলাম থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্স ৯ কোটি টাকা মূল্যে স্টার্ককে (Mitchell Starc) সই করালেও শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান তিনি। সদ্যই ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতেছেন স্টার্ক। স্বভাবতই চড়া দামে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকবে তাঁকে সই করানোর দৌড়ে। কিন্তু নিজেদের পুরনো ক্রিকেটারকে ফেরাতে মরিয়া হতে দেখা যাবে বেঙ্গালুরুকেও (RCB)। নতুন বল হাতে মহম্মদ সিরাজের সাথে মিচেল স্টার্কের জুটি ঘাতক হয়ে উঠত পারে আইপিএলের সপ্তদশ মরসুমে।
মুজিব উর রহমান-

বেঙ্গালুরুর রিটেনশন-রিলিজ তালিকায় চোখ বোলালেই দেখা যায় যে তারা নিজেদের ব্যাটিং ‘কোর’কে অপরিবর্তিতই রাখতে চেয়েছে। কোহলি, দু প্লেসি, ম্যাক্সওয়েল এমনকি দীনেশ কার্তিক বা মহীপাল লোমরোরদেরও ধরে রেখেছে বেঙ্গালুরু (RCB)। রিলিজ লিস্টের সিংহভাগ জুড়েই কেবল বোলারেরা। হ্যাজেলউড, হর্ষল প্যাটেলদের মত পেসারদের পাশাপাশি স্পিন বিভাগেও ব্যাপক রদবদল করেছে তারা। ছেঁটে ফেলেছে শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা’কে। ট্রেডিং পদ্ধতিতে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (Shahbaz Ahmed) হাতে তুলে দিয়েছে শাহবাজ আহমেদকেও। এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞ স্পিনার বলতে বেঙ্গালুরুর হাতে কেবল কর্ণ শর্মা (Karn Sharma) ও মায়াঙ্ক ডাগার। আগামী নিলামে তাই অভিজ্ঞ স্পিনার দলে নেওয়াও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের জন্য।
বেঙ্গালুরুর জন্য আদর্শ স্পিন বিকল্প হতে পারেন আফগানিস্তানের মুজির উর রহমান (Mujeeb Ur Rahman)। ২০১৮ সালের আইপিএলে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন মুজিব। ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ২০.৬৪ গড় ও ৬.৯৯ ইকোনমি রেটে তুলে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। এরপর অবশ্য বিশেষ সুযোগ পান নি তিনি। কখনও ৫টি আবার কখনও মরসুমে ১ বা ২টি ম্যাচও খেলানো হয়েছে তাঁকে। ২০২১-এর পর আইপিএল খেলাই হয় নি তাঁর। তবে এইবার পরিস্থিতি খানিক ভিন্ন। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে বেশ ভালো বোলিং করেছেন মুজিব (Mujeeb Ur Rahman)। ৮টি উইকেট নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সময় সাম্প্রতিক বেশ কিছু ম্যাচে ব্যাট হাতেও কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছেন। ২২ বর্ষীয় ক্রিকেটারের ফর্ম মাথায় রেখে তাঁকে দলে সামিল করতেই পারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।