IPL 2024: টানা চার ম্যাচে সাফল্যের পর গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলো রাজস্থান রয়্যালসের (RR) বিজয়রথ। রশিদ খান-রাহুল তেওয়াটিয়ার সৌজন্যে সেদিন যেভাবে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছিলো, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই আজ লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন সঞ্জু স্যামসন’রা। আইপিএলের রীতি মেনেই রুদ্ধশ্বাস লড়াই হলো পাঞ্জাব কিংস ও রাজস্থান রয়্যালসের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে দুই পয়েন্ট সঙ্গে করেই মাঠ ছাড়লো লীগ লিডার্স’রা। এই নিয়ে ছয় ম্যাচে পাঁচ জয়ের সুবাদে ১০ পয়েন্ট হলো সঞ্জু স্যামসন, যশস্বী জয়সওয়ালদের। প্লে-অফের দিকে নিঃসন্দেহে এক পা বাড়িয়ে দিলো তারা। পক্ষান্তরে মরসুমের চতুর্থ ম্যাচ হেরে বেশ বেকায়দায় পাঞ্জাব কিংস।
টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠান সঞ্জু। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় একটা সময় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিলো পাঞ্জাব ব্যাটিং। ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন আবেশ খান, কুলদীপ সেন, কেশব মহারাজ’রা। তারপর জিতেশ শর্মা, লিয়াম লিভিংস্টোন ও আশুতোষ শর্মা’র সৌজন্যে লড়াইতে ফেরে পাঞ্জাব। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা থামে ১৪৭ রানে। রান তাড়া করতে নামা রাজস্থান পাওয়ার প্লে’তে উইকেট খোয়ায় নি ঠিকই, কিন্তু তাদের চাপে ফেলেছিলো মন্থর ক্রিকেট। মুল্লানপুরের পিচে আজ যশস্বী থেকে সঞ্জু-দাগ কাটতে পারেন নি তেমন কেউই। চাপের পাহাড় মাথায় নিয়ে শেষ ওভারে রাজস্থানকে জয় এনে দেন শিমরণ হেটমায়ার। এক বল বাকি থাকতেই দুই পয়েন্ট নিশ্চিত করে ক্যারিবিয়ান তারকার ব্যাট।
Read More: IPL 2024, KKR vs LSG, Match-28, Preview: ক্রিকেটের নন্দনকাননে মুখোমুখি কলকাতা-লক্ষ্ণৌ, মর্যাদার লড়াই জিততে বদ্ধপরিকর দুই শিবিরই !!
নড়বড়ে ব্যাটিং পাঞ্জাব কিংসের-
চোটের কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান। জনি বেয়ারেস্টোর সাথে আজ ইনিংসের সূচনা করতে মাঠে নেমেছিলেন অথর্ব তাইডে। দীর্ঘস্থায়ী হয় নি নতুন ওপেনিং জুটি। প্রথমে ফেরেন তাইডেই। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে আবেশ খানের শিকার হন তিনি। ১৫ রান করে ক্যাচ তুলে দেন কুলদীপ সেনের হাতে। এরপর উইকেট হারান প্রভসিমরণ সিং। পাঞ্জাবের তরুণ ক্রিকেটারের ব্যাটে রান খরা অব্যাহত। আজ ১৪ বলে মাত্র ১০ রান করেই তাঁকে ফিরতে হলো সাজঘরে। চাহালের ঘূর্ণিতে নতিস্বীকার করতে হলো প্রভসিমরণকে। অভিজ্ঞ বেয়ারেস্টোর অফ ফর্ম’ও অব্যাহত। কেশবন মহারাজের বলে উইকেট হারানোর আগে করেন কষ্টার্জিত ১৯ বলে ১৫ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে চার নম্বরে তুলে এনেছিলেন স্যাম কারান। আজ অধিনায়কত্ব পেলেও রান পেলেন না তিনি। ১০ বলে ৬-এর বেশী এগোয় নি তাঁর ইনিংস। হন কেশব মহারাজের দ্বিতীয় শিকার। গত দুই ম্যাচের মসীহা শশাঙ্ক সিং-এর ব্যাট’ও শান্ত থাকলো আজ। তিনি করেন ৯ রান। ডুবতে থাকা ইনিংসের হাল এবার ধরেন জিতেশ শর্মা ও লিয়াম লিভিংস্টোন। ২৪ বলে লড়াকু ২৯ করেন জিতেশ। আবেশ খানের বলে উইকেট হারান তিনি। চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে ২১ লিভিংস্টোনের। আশুতোষ শর্মা’র ঝোড়ো ১৬ বলে ৩১ রানের ইনিংস পাঞ্জাবকে পৌঁছে দেয় ১৪৭ রানে। শেষ বলে ট্রেন্ট বোল্টকে উপহার দিয়ে আসেন আশুতোষ।
চাপের মুখে জয় এনে দিলেন হেটমায়ার-
জস বাটলার ছিলেন না আজ। তনুষ কোটিয়ানকে ওপেনার হিসেবে মাঠে নামিয়ে চমক দিতে চেয়েছিলো রাজস্থান দল। বেশ কয়েক ম্যাচ পর ছন্দে ফেরার আভাস দিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ক্রিজে সাবলীল দেখালো তাঁকে। নবাগত তনুষ ব্যাট হাতে রাবাডা, স্যাম কারানদের বিরুদ্ধে চাপে পড়লেও লড়াই চালান বেশ কিছুক্ষণ। তিনটি বাউন্ডারি মারলেও ৩১ বলে ২৪ রানের ইনিংস আদতে চাপেই ফেলেছিলো রাজস্থান রয়্যালসকে। লিভিংস্টোনের বলে কোটিয়ান আউট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই উইকেট হারান যশস্বী’ও। তিনি আজ ২৮ বলে করলেন ৩৯ রান। তরুণ ওপেনারকে আউট করেন কাগিসো রাবাডা। ৮২ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারাতে হয়েছিলো রাজস্থান’কে।
যশস্বী ফেরার পর রাজস্থান ইনিংসকে স্থিরতা দেওয়ার প্রয়াস করেন সঞ্জু স্যামসন ও রিয়ান পরাগ। এর আগে একাধিক ম্যাচে তাঁদের জুটি দলকে উদ্ধার করেছে। আজ দুজনে বেশ খানিকক্ষণ ক্রিজে থাকলেও মুল্লানপুরের বাইশ গজে সেরা ছন্দে দেখা গেলো না তাঁদের। সঞ্জু ১৪ বলে ১৮ করে উইকেট হারান রাবাডা’র বলে। রিয়ানকে ২৩ রানের মাথায় ফেরান আর্শদীপ। এরপর হর্ষল প্যাটেলের শিকার হয়ে ধ্রুব জুড়েল ফিরতেই লড়াইতে ফিরেছিলো পাঞ্জাব। হেটমায়ার ও রোভম্যান পাওয়েলের জুটি চাপ কাটিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রাজস্থান’কে। কিন্তু স্যাম কারানের ওভারে পাওয়েল ও কেশব মহারাজ পরপর ফিরতেই তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিলো ১০ রান। প্রথম দুই বল ডট হওয়ার পরেও জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে রয়্যালসদের জিতিয়ে দেন হেটমায়ার (২৭*)।