IND vs ENG: হায়দ্রাবাদ ও বিশাখাপত্তনমে লড়াই হয়েছিলো সেয়ানে সেয়ানে। রাজকোটে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) সিরিজের তৃতীয় টেস্টেও জোরদার টক্করের আশায় ছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় দিন অবধি সমানে সমানে ভারতের সাথে লড়াই চালিয়েও ছিলো সফরকারী ইংল্যান্ড দল। কিন্তু শেষমেশ রোহিত বাহিনীর দাপটের সামনে আর সুবিধা করে উঠতে পারলেন না বেন স্টোকসরা। সিরিজের গত দুই টেস্ট সমাপ্ত হয়েছিলো চতুর্থ দিনে। তৃতীয় টেস্টেরও ফয়সালা হলো চার দিনের মধ্যেই। টিম ইন্ডিয়ার ছুঁড়ে দেওয়া পাহাড়প্রমাণ লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ধসে গেলো ইংল্যান্ড ব্যাটিং। ৪৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে সিরিজে ২-১ এগিয়ে গেলো ভারত। হায়দ্রাবাদে হেরে একটা সময় ০-১ পিছিয়ে পড়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ টানা দুই ম্যাচ জিতে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন রোহিত শর্মা, শুভমান গিলদের।
ম্যাচের তৃতীয় দিনের শেষে ভারতে এগিয়ে ছিলো ৩২২ রানে। আজ সেই লিড প্রতিপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়েছিলেন ব্যাটাররা। নৈশপ্রহরী কুলদীপকে সঙ্গে নিয়ে দিনের প্রথম ঘন্টায় সাবলীল ছন্দে ব্যাটিং করেন শুভমান গিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজ ‘নার্ভাস নাইন্টি’র শিকার হলেন তিনি। রান-আউট হয়ে শুভমান ফেরার পরেই ক্রিজে ফেরেন যশস্বী জয়সওয়াল। শতরানের পর মাঠ ছেড়েছিলেন চোট পেয়ে। আজ তাঁর খেলার মধ্যে কোনো জড়তা অবশ্য চোখে পড়ে নি। টেস্ট নয়, খেললেন টি-২০’র মেজাজে। ইংল্যান্ড বোলিং-কে দুরমুশ করে ছুঁলেন দ্বিশতরানের মাইলস্টোন। টানা দুই টেস্টে দ্বিশতক হয়ে গেলো তাঁর। অভিষেককারী সরফরাজ খান প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও উজ্জ্বল আজ। শেষমেশ ৫৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে জাদেজা-কুলদীপের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেলো মাত্র ১২২ রানে। একঝাঁক তারকা ক্রিকেটার না থাকা সত্ত্বেও বাজিমাত ভারতের।
Read More: IND vs ENG: রাজকোটে ঝড় তুললেন যশস্বী জয়সওয়াল, ৩০ বছরের পুরনো রেকর্ড চুরমার তরুণ তুর্কির ব্যাটে !!
জয়স-বলে ছত্রভঙ্গ ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ-
ফর্ম সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন শুভমান গিল। প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন শূন্য রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে সময় নিয়ে শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি। আজ সকালে শুরুটা ভালো করলেও কুলদীপ যাদবের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতে উইকেট হারালেন তিনি। বেন স্টোকসের থ্রো তালুবন্দী করে টম হার্টলি যখন উইকেট ভেঙে দেন, তখনও নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে ক্রিজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে শুভমানের ব্যাট। মরিয়া ডাইভ মেরেও শেষরক্ষা করতে পারেন নি তিনি। ৯১ রানের মাথায় ফিরতে হয় সাজঘরে। গতকাল ১০৪ রান করে অবসৃত হয়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। শুভমান ফেরার পর আবার মাঠে ফেরেন তিনি। যেখানে শেষ করেছিলেন গতকাল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন আজ। প্রতিপক্ষের কোনো বোলারকেই বাড়তি সম্ভ্রম দেখানোর পথে হাঁটেন নি তিনি। ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখা যায় বছর ২২-এর তরুণের থেকে।
ইংল্যান্ডের দ্রুতগতির বাজবল নিয়ে সিরিজের শুরু থেকেই চলছে চর্চা। তাঁর পালটা যেন দেখা গেলো জয়সওয়ালের ব্যাটে। বিশেষজ্ঞরা যাঁর নাম দিয়েছেন জয়স-বল। এই জয়স-বলের ঝাঁজেই আজ দিশাহারা ইংল্যান্ড। টেস্ট ইতিহাসে সফলতম পেসার জেমস অ্যান্ডারসনকে গতকাল এক ছক্কার পর টানা দুই চার হাঁকিয়েছিলেন যশস্বী। আজ পরপর তিনটি ছক্কা মারেন তাঁকে। দীর্ঘ কেরিয়ারে এহেন ব্যাটিং-এর সম্মুখীন শেষ কবে হয়েছেন, তা হয়ত মনে করতে পারবেন না খোদ অ্যান্ডারসন’ই। বিশাখাপত্তনমের পর ফের দ্বিশতক যশস্বীর ব্যাটে। আজ অপরাজিত রইলেন ২১৪ রান করে। প্রথম ইনিংসে ৬২ করে রান-আউট হয়েছিলেন সরফরাজ খান। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। যশস্বীর সাথেই রান তুললেন দ্রুত গতিতে। অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় অর্ধশতক এলো তাঁর ব্যাট থেকে। অপরাজিত থাকেন ৬৮ রান করে। ৪ উইকেটে ৪৩০ রানের মাথায় ডিক্লেয়ার করে ভারত।
স্যার জাদেজার ঘূর্ণিতে পরাজিত স্টোকসবাহিনী-
চতুর্থ ইনিংসে ৫৫৭ রান তাড়া করে জয়ের নজির টেস্টের ইতিহাসে নেই। ইংল্যান্ডের হাতে দেড় দিন সময় ছিলো ইতিহাস তৈরি করার। কিন্তু রাজকোটের নিরঞ্জন শাহ স্টেডিয়ামে অর্ধেক দিনেই গুটিয়ে গেলো তাদের ইনিংস। ভারতীয় বোলিং-এর দাপটের সামনে নতিস্বীকার করতেই হলো রুট, স্টোকস, বেয়ারেস্টোদের। প্রথম ইনিংসে বুমরাহ, সিরাজদের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করেছিলেন বেন ডাকেট। ২১টি চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে খেলেছিলেন ১৫৩ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই আশ্চর্য রকমের মন্থর ছিলেন তিনি। স্বভাববিরুদ্ধ ক্রিকেট বেশীক্ষণ খেলতে পারেন নি তিনি। ১৫ বলে মাত্র ৪ রান করে রান-আউট হন। যেভাবে অনেকখানি দৌড়ে এসে নি-স্লাইড করে ডাকেটকে রান-আউট করলেন ধ্রুব জুড়েল, প্রশংসা প্রাপ্য তরুণ উইকেটরক্ষকের।
প্রথম উইকেট পড়ার পর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার। জ্যাক ক্রলিকে লেগ বিফোর উইকেট করেন জসপ্রীত বুমরাহ। বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করেন স্পিনাররা। নিজের ঘরের মাঠে দুর্ধর্ষ বোলিং করলেন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম ইনিংসের শতরানের পর চতুর্থ ইনিংসে বল হাতে নিলেন পাঁচ উইকেট। ফেরান অলি পোপ (৩), জো রুট (৭), জনি বেয়ারেস্টো (৪), বেন ফোকস (১৬) এবং মার্ক উড (৩৩)-কে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও রেহান আহমেদকে আউট করেন কুলদীপ যাদব। দ্বিতীয় বার টানা দুই টেস্ট ম্যাচ হারলেন তিনি। পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। তিনি ফেরান টম হার্টলিকে। শেষলগ্নে ১৫ বলে ৩৩ করেন উড, কিন্তু ম্যাচের ফলাফলে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে নি তা। আজকের জয়ের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় ভারত উঠে এলো দ্বিতীয় স্থানে।