IND vs AUS: বিশাখাপত্তনমের মাঠে শুরু হয়েছিলো ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) টি-২০ সিরিজ। এরপর তিরুঅনন্তপুরম, গুয়াহাটি, রায়পুর হয়ে অবশেষে আজ বেঙ্গালুরুর মাঠে যবনিকা পড়লো দুই হেভিওয়েটের জমজমাট লড়াইতে। বিশ্বকাপ পরবর্তী টি-২০ সিরিজে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দুই শিবিরেরই একাধিক তারকা ক্রিকেটার অংশ নেন নি। টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে দেখা যায় নি বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, কে এল রাহুলদের। অস্ট্রেলিয়ার হয়েও মাঠে নামেন নি ওয়ার্নার, কামিন্স, স্টার্ক’রা। মূলত তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়া হলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র অভাব দেখা গেলো না গোটা সিরিজে। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে চালকের আসনে বসেছিলো। ‘ম্যাক্সওয়েল ম্যাজিকে’ তৃতীয় ম্যাচ জিতে লড়াইতে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। এরপর রায়পুরের জয় সিরিজ জেতায় ভারতকে। আজ নিয়মরক্ষার ম্যাচেও জয় ছিনিয়ে নিলো ভারতই।
টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। ওপেন করতে এসে যশস্বী জয়সওয়াল ও ঋতুরাজ গায়কোয়াড় আজ সফল হন নি। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই দুজনে ফেরেন সাজঘরে। অধিনায়ক তথা টি-২০ ক্রিকেটে দুনিয়ার এক নম্বর ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব’ও আজ বেশীদূর এগোন নি। ব্যর্থ রিঙ্কু’ও। শ্রেয়সের অর্ধশতক ও জিতেশ, অক্ষরের ক্যামিও ভারতকে পৌঁছে দেয় ১৬০ রানে। তাড়া করতে নেমে ঝোড়ো সূচনা সত্ত্বেও পরপর উইকেট হারিয়ে একটা সময় চাপে পড়েছিলো অজি ব্রিগেড। বেন ম্যাকডারমটের সৌজন্যে লড়াইতে ফিরেছিলো তারা। কিন্তু ফের একাধিক উইকেট হারানোয় ম্যাচ দূরে সরে যায় তাদের থেকে। সাতে নেমে অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড শেষ চেষ্টা করলেও ফলপ্রসূ হন নি আজ। ১৫৪ রানের বেশী এগোয় নি অস্ট্রেলীয় ইনিংস। ৬ রানে জিতেই মাঠ ছাড়লেন সূর্যকুমার যাদব ও তাঁর সতীর্থেরা।
Read More: IND vs AUS: নিয়মরক্ষার ম্যাচে অজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, অর্ধশতরান শ্রেয়াস আইয়ারের !!
নড়বড়ে ব্যাটিং-কে সামলালেন শ্রেয়স আইয়ার-

সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ভারতের ব্যাটিং অনবদ্য পারফর্ম করেছে। প্রথম তিন ম্যাচে ২০০-র বেশী রান তুলতে দেখা গিয়েছিলো যশস্বী, রিঙ্কুদের। রায়পুরেও শেষ লগ্নে রিঙ্কু-জিতেশের ব্যাটিং ঝড়ে ১৮০’র কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু ব্যাটিং স্বর্গ বলে পরিচিত বেঙ্গালুরুতে আজ ইনিংসের শুরু থেকে শেষ অবধি বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হলো ভারতকে। ৩৩ রানের বেশী এগোয় নি ওপেনিং জুটি। প্রথমে ফেরেন যশস্বী জয়সওয়াল। বাম হাতি তরুণ ওপেনার করেন ১৫ বলে ২১ রান। বেহরেনডফের বলে যশস্বী ফেরার পর স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই উইকেট হারান ঋতুরাজ গায়কোয়াড। ডোয়ারস্যুইসের বলে তিনি ফিরলেন ১২ বলে ১০ রান করে। ৩৩ রানে দুই উইকেট হারানো ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু আজ ‘মিস্টার ৩৬০’ও আউট হলেন কেবল ৫ রান করে।
এতদিন জাতীয় দলে রিঙ্কু সিং-এর অভিজ্ঞতা সুখকরই ছিলো। আয়ারল্যান্ড সফর হোক বা এশিয়ান গেমস, এমনকি চলিতি সিরিজের প্রথম চার ম্যাচেও রান পেয়েছিলেন তিনি। আজ কেরিয়ারের প্রথম ব্যর্থতা চেখে দেখতে হলো। বাম হাতি ‘ফিনিশার’ ফিরে যান মাত্র ৬ রান করে। এরপর জিতেশ শর্মাকে সঙ্গী করে ইনিংসের গতি খানিক বাড়াতে সক্ষম হন শ্রেয়স আইয়ার। ভারতীয় সহ-অধিনায়ক চাপের মুখে আজ অনবদ্য লড়াই করলেন। সাঙ্ঘা, ডোয়ারস্যুইস, বেহরেনডোফদের বিপক্ষে লড়াই চালিয়ে করেন ৩৭ বলে ৫৩ রান। ছয় নম্বরে নামা জিতেশ চলতি সিরিজে দ্বিতীয় সুযোগে করলেন ১৬ বলে ২৬ রান। গত ম্যাচের জয়ের নায়ক অক্ষর লোয়ার অর্ডারে ২১ বলে করে ৩১ রান। শ্রেয়স, জিতেশ, অক্ষরের প্রত্যাঘাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারত থামে ১৬০ রানে।
লড়াই করেও হারতে হলো অস্ট্রেলিয়া’কে-

বেঙ্গালুরু পিচে বড় রান ওঠে হামেশাই। সেখানে ১৬০ রান কখনই যে যথেষ্ট নয়, তা ইনিংসের বিরতিতে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের অনভিজ্ঞ বোলিং-এর বিরুদ্ধে শুরুটাও চমৎকার করেছিলেন ট্র্যাভিস হেড। প্রথম ওভারে আর্শদীপ সিং-কে পরপর তিন চার মেরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আক্রমণ থেকে পিছু হটছেন না তিনি। অপর প্রান্তে জশ ফিলিপে ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন নি। মুকেশ কুমারের বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। বিশ্বকাপ বা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মত হেড’কে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেন নি রবি বিষ্ণোই। তরুণ লেগস্পিনার ১৮ বলে ২৮ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরান অজি ওপেনার’কে। চার নম্বরে নামা অ্যারন হার্ডি’ও বিষ্ণোইয়ের বলে সুবিধা করতে পারেন নি। ১০ বলে ৬ রান করে ধরা পড়েন শ্রেয়স আইয়ারের হাতে।
৭ ওভারের মধ্যে ৫৫ রানের বিনিময়ে একটা সময় ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলো অস্ট্রেলিয়া। সেই পরিস্থতি থেকে তাদের ম্যাচে ফেরান বেন ম্যাকডারমট। টিম ডেভিডের সাথে গড়েন ৪৭ রানের জুটি। ডেভিড ১৭ বলে ১৭ করে অক্ষর প্যাটেলের শিকার হলেও অদম্য মনে হচ্ছিলো ম্যাকডারমট’কে। শেষমেশ ৩৬ বলে ৫৪ করে আর্শদীপ সিং-এর বলে তিনি ফেরায় স্বস্তি ফিরেছিলো ভারতীয় শিবিরে। পরপর দুই বলে ম্যাট শর্ট ও বেন ডোয়েরস্যুইস’কে আউট করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথ আরও কঠিন করে দিয়েছিলেন মুকেশ কুমার। একা কুম্ভ হয়ে লড়াইয়ের প্রয়াস করলেন বটে ম্যাথু ওয়েড। কিন্তু আজ ব্যর্থ হলেন তিনি। ১৫৪ রানেই থামলো অস্ট্রেলীয় ইনিংস। বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের ক্ষতে খানিক প্রলেপ দিলো টি-২০ সিরিজে ভারতের ৪-১ জয়।