হাত ভাঙলেও মনোবল অটুট হনুমা বিহারীর ! যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই রঞ্জি ট্রফির বাইশ গজে ভারতীয় ব্যাটার !! 1

২০০৯ সালে টেস্ট হার বাঁচাতে ভাঙা হাত নিয়ে সিডনির মাঠে ভয়ঙ্কর অস্ট্রেলিয়া বোলিং-এর সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ভাঙা হাতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশের তামিম ইকবালও। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিল্ডিং-এর সময় আঙুল ভাঙে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma)। হাসপাতাল থেকে ফিরে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই বাইশ গজে নেমে পড়েন তিনি। কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে নেমে ঝোড়ো ইনিংসে ভারতকে প্রায় ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যন্ত্রণা’কে উপেক্ষা করে স্মিথ, তামিম, রোহিতদের লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়েছে ক্রিকেটদুনিয়া। দলের প্রতি দায়িত্ববোধের দুর্দান্ত নিদর্শন রেখেছেন তাঁরা। এই তালিকায় এবার যুক্ত হলো হনুমা বিহারীর (Hanuma Vihari) নাম। মধ্য প্রদেশ এবং অন্ধ্র প্রদেশের রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে ব্যাটিং-এর সময় হাত ভেঙেছিলো হনুমা’র। দলের জন্য ভাঙা হাতেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেলেন তিনি। ডান হাতি ব্যাটার’কে দেখা গেলো বাঁ-হাতে ব্যাট করতেও।

ভাঙা হাতেই রঞ্জি ট্রফিতে হনুমা বিহারী-

Hanuma Vihari | image: twitter
Andhra captain Hanuma Vihari bats left handed after sustaining an injury during Ranji Trophy quarterfinal against MP

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফি। প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে মুখোমুখি হয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ। টসে জিতে প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশ অধিনায়ক আদিত্য শ্রীবাস্তব। অন্ধ্র ওপেনার অভিষেক রেড্ডি আউট হওয়ার পর তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক হনুমা বিহারী (Hanuma Vihari)। নক-আউট ম্যাচে অভিজ্ঞ হনুমার থেকে বড় রানের ইনিংস প্রত্যাশা করেছিলো অন্ধ্রপ্রদেশ দল। তবে দুর্ভাগ্যবশত মধ্যপ্রদেশ পেসার আবেশ খানের (Avesh Khan) একটি দ্রুতগতির বাউন্সার আঘাত করে হনুমার হাতে। আবেশের বাউন্সারে কবজি ভেঙে যায় অন্ধ্রপ্রদেশ অধিনায়কের। তখন আর ব্যাটিং করা সম্ভব হয় নি হনুমার পক্ষে। মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। সকলেই ভেবেছিলেন আহত হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছেন তিনি। রিকি ভুঁই (Ricky Bhui) এবং কর্ণ শিণ্ডের (Karan Shinde) জোড়া শতরানে সন্মানজনক রান স্কোরবোর্ডে তুলেছিলো অন্ধ্রপ্রদেশ। কিন্তু নক-আউট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে যত বেশী সম্ভব রান দরকার দলের। তাই দলের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ ভোলেন নি হনুমা (Hanuma Vihari)। অন্ধ্রের নবম উইকেটের পতনের পর ভাঙা হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। ডান হাতি ব্যাটার হলেও আঘাত পাওয়া হাতের দরুণ বাঁ-হাতে ব্যাট করেন তিনি। নবম উইকেট হিসেবে পৃথ্বী রাজ (Prithvi Raj) যখন প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন তখন অন্ধ্রের স্কোর ছিলো ৩৫৩। হনুমা বাইশ গজে ফিরেছিলেন ১৬* থাকা অবস্থায়। যন্ত্রণার সঙ্গে যুদ্ধ করে ব্যক্তিগত স্কোরে আরও ১১ রান যোগ করেন তিনি। ললিত মোহনের সাথে জুটি বেঁধে দল’কে পৌঁছে দেন ৩৭৯ রানে।

দেখে নিন ভিডিও-

যন্ত্রণা সঙ্গী করে ভারতকে বাঁচিয়েছিলেন হনুমা-

Hanuma Vihari | image: twitter
Hanuma Vihari showed incredible grit and determination and saved India against Australia at Sydney

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বসেছিলো ২০২০-২০২১ বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির আসর। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত’কে হারিয়ে দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত মেলবোর্নে ম্যাচ জিতে সমতা ফেরালেও চোট-আঘাত সমস্যায় জর্জরিত ছিলো দল। তৃতীয় ম্যাচটি খেলা হয় সিডনিতে। আরও একবার ভারতকে চেপে ধরেছিলো অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে হার মানে সিরিজ জেতার স্বপ্নের সেখানেই ইতি। জানত ভারতীয় দল। কঠিন পরিস্থিতিতে হাল ছাড়েন নি হনুমা বিহারী (Hanuma Vihari) এবং রবিচন্দ্রণ অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। শেষ দিনের দীর্ঘ সময় কামিন্স, হ্যাজেলউডদের যাবতীয় আক্রমণ সামলে ম্যাচ অমীমাংসিত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন দু’জনে। পেশীতে টান ধরায় মাঠে দৌড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিলো বিহারীর কাছে। আহত হয়েছিলেন অশ্বিন’ও। তবুও চিড় ধরে নি দু’জনের মনোবলে। শেষ অব্দি ভারতকে নিশ্চিত হার থেকে বাঁচিয়েছিলো এই জুটি। অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) ৩৯ এবং বিহারী (Hanuma Vihari) ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই ম্যাচের আত্মবিশ্বাস সঙ্গে করেই গাব্বায় সিরিজের শেষ ম্যাচে দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলো ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ফিরিয়েছিলো দেশে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *