এবারের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে (T20 World Cup) অন্যতম ‘ফেভারিট’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলো পাকিস্তান। গত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিলো তারা। এবার বাবর আজম’রা (Babar Azam) আরও একধাপ এগিয়ে ট্রফি জিতে ফিরবেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু স্বপ্নের সেই মিনার ধূলিসাৎ হয়েছে দ্রুত। প্রতিযোগিতায় গ্রুপ-এ’তে ছিলো পাকিস্তান (PAK) দল। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই নবাগত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) বিরুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। হারে সুপার ওভারে। এরপর ভারতের (IND) বিপক্ষেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি তারা। হারতে হয় ৬ রানের ব্যবধানে। টানা দুই পরাজয় তাদের প্রায় ছিটকেই দিয়েছিলো। গত ১৪ তারিখের আয়ারল্যান্ড বনাম আমেরিকা ম্যাচ ভেস্তে যাওয়া শেষ পেরেকটা পুঁতে দেয় কফিনে। গ্রুপ পর্বে থেকেই ছিটকে যায় পাকিস্তান।
টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) পাকিস্তানের বেহাল দশা দেখে আহত সমর্থকেরা। সুদূর মার্কিন মুলুকেও অনেক আশা নিয়ে মাঠ ভরিয়েছিলেন পাক জনতা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দলকে এনে দিতে পারেন নি বাবর আজম (Babar Azam), শাদাব খান’রা। গত বছরের এশিয়া কাপ থেকেই ক্রমে নীচের দিকে যাচ্ছে তাদের পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ। ওডিআই বিশ্বকাপের (ICC World Cup) ব্যর্থতা, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে টি-২০ সিরিজে পর্যুদস্ত হওয়ার পর লজ্জা এড়ানো গেলো না কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপেও (T20 World Cup)। হতশ্রী প্রদর্শনের পিছনে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছে ক্রিকেটমহল। বাবর আজম, শাহীন শাহ আফ্রিদিদের ইগোর লড়াইতে আদতে বলি হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট, এই অভিযোগই উঠে আসছে নিরন্তর।
Read More: “কবুল হ্যা …”, সানিয়া মির্জার সাথে নতুন করে ঘর বাঁধতে চলেছেন মহম্মদ শামি, আগামী ২০ আগস্ট দুজনেই বাঁধবেন গাঁটছড়া !!
পাক শিবিরের অন্দরে চরম বিভাজন-
ওডিআই বিশ্বকাপের (ICC World Cup) পরেই নেতৃত্ব থেকে সরানো হয়েছিলো বাবর আজমকে (Babar Azam)। টি-২০ দলের নেতা করা হয় শাহীন শাহ আফ্রিদিকে (Shaheen Shah Afridi)। ইতিপূর্বে অধিনায়ক হিসেবে পিএসএল জিতেছেন তিনি। তাঁর কাঁধে দল সামলানোর ভার দেওয়া পিসিবি’র দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অঙ্গ বলে মনে করা হয়েছিলো। কিন্তু ভুল ভাঙে দ্রুত। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪-১ হারের পরেই পদচ্যুত হন শাহীন। ফের দায়িত্বে ফেরানো হয় বাবর’কে (Babar Azam)। এই পদক্ষেপ পাক ক্রিকেটকে অনেকখানি পিছিয়ে দিয়েছে বলে মত বোদ্ধাদের। শাহীনের শ্বশুর ও প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি (Shahid Afridi) ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে তোপ দেগেছেন বাবরের বিপক্ষে। সুর মিলিয়েছেন আহমেদ শেহজাদ, ওয়াসিম আক্রমরাও।
টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) ময়নাতদন্ত করতে বসে বিস্ফোরক তথ্য সামনে এসেছে সংবাদমাধ্যমের। জানা গিয়েছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান দল। একটির নেতা বাবর আজম (Babar Azam), দ্বিতীয়টির নেতা শাহীন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)। ও তৃতীয় গোষ্ঠীর মাথা নাকি হয়ে উঠেছেন মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan)। অন্তত দেশের স্বার্থেও বিভেদ ভুলে একজোট হয়ে কাজ করতে নাকি রাজী নন এঁরা কেউই। এক গোষ্ঠীর ক্রিকেটাররা অন্য গোষ্ঠীর ক্রিকেটারদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। কথাবার্তাও নাকি প্রায় বন্ধ বলেই খবর এসেছে। সাথে চলে গোষ্ঠীর মাথায়দের মন যুগিয়ে চলার নিরন্তর প্রতিযোগিতা। এই টানাপোড়েনের মাঝে দলীয় একতায় চিড় ধরেছে। যার ফল মিলছে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতায়।
রদবদলের পথে হাঁটছেন নকভি-
পিসিবি সূত্রে খবর যে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর উদ্দেশ্যেই অভিজ্ঞ বাবর আজম’কে (Babar Azam) নেতার আসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই দায়িত্ব সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। সাথে মহম্মদ আমির (Mohammad Amir), ইমাদ ওয়াসিমদের মত ঘোষিত বাবর-বিরোধীরা দলে ফেরায় কাজটাও অনেকখানি কঠিন হয়েছিলো তাঁর জন্য। টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) ভরাডুবির পর এখন সামনের দিকে তাকানো ছাড়া রাস্তা খোলা নেই পাক দলের সামনে। আগামী বছর রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy 2025)। সব ঠিকঠাক থাকলে তা দেশের মাটিতেই খেলবে পাকিস্তান। ঘরের মাঠে লজ্জায় যাতে না পড়তে হয়, তা নিশ্চিত করতে স্কোয়াডে বড়সড় রদবল করতে পারেন পিসিবি’র বর্তমান চেয়ারম্যান মহসীন নকভি (Mohsin Naqvi)। জানা গিয়েছে বড় বদল আসতে পারে দল পরিচালন সমিতেতেও।
নেতা হিসেবে আগামীতে বাবরকেই দেখা যাবে নাকি নতুন কারও হাতে উঠবে দায়িত্ব? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলে নি। তবে তারকা ব্যাটারকে নেতৃত্বের বাড়তি বোঝা ছেঁটে ফেলতেই পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাক্তনী শোয়েব মালিক (Shoaib Malik)। একটি অনুষ্ঠানে তিনি জানান, “আমি দীর্ঘদিন ধরেই বাবরকে বলে চলেছি যে নেতৃত্ব তুমি ছেড়ে দাও। তুমি একজন বড় মাপের খেলোয়াড়। নিজের সেরাটা তখনই দিতে পারবে, যখন তোমার উপর অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপ থাকবে না। বাবর নেতৃত্ব থেকে দূরে থাকলে সেটা ওর পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।” প্রাক্তন অধিনায়ক রামিজ রাজা (Ramiz Raja) বোর্ডের সমালোচনা করে জানান, “বয়স্ক, অবসর নিয়ে ফেলা ক্রিকেটারদের ফিরিয়ে আনলে যেমনটা হওয়ার কথা, ঠিক তেমনই ফল হয়েছে বিশ্বকাপে।” সুর চড়িয়েছেন ওয়াসিম আক্রম’ও। তাঁর সংযোজন, “পাকিস্তান কি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলো, সেটাই স্পষ্ট নয়।”