Asia Cup 2023

গতকাল ইংল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে ভারতীয় দল। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টানা দুই সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলো ভারত। ২০২১ এর ব্যর্থতা‘র পর ২০২২ সালে বদলাবে ছবিটা। ভেবেছিলেন অনেকেই। নেতা বদলেও ভাগ্য বদলালো না ‘টিম ইন্ডিয়া’র। সেই তীরে এসে ডুবলো তরী। গ্রুপ পর্বে আশা জাগিয়ে শুরু করলেও কাপ জয় থেকে দুই ধাপ দূরেই থেমে গেলেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি’রা। যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান খারাপ শুরু করেও ঠিক সময়ে নিজেদের ফিরে পেয়ে আজ কুড়ি-বিশ বিশ্বকাপের ফাইনালে সেখানে ‘মেন ইন ব্লু’র চিত্র’টা সম্পূর্ণ উলটো। বারবার বহুদেশীয় টুর্নামেন্টগুলিতে ব্যর্থ কেনো হচ্ছে ভারত? কাটাছেঁড়া চলছে পাড়ার চা দোকান থেকে সংবাদ সংস্থা’র স্টুডিও’তে। পরবর্তী টি-২০ বিশ্বকাপ সেই ২০২৪ সালে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। ভারতের ‘আমেরিকান ড্রিম’ সফল করতে এখন থেকেই দল গোছানোর পক্ষপাতী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। অস্ট্রেলিয়ায় হতাশার পর হয়ত আসতে চলেছে বড়সড় রদবদল।

অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের পারফর্ম্যান্স-

Virat Kohli , Hardik Pandya | image: Gettyimages
In Australia India relied largely on individual brilliance from players like Kohli and Pandya.

ক্যাঙ্গারুর দেশে কুড়ি-বিশের বিশ্বযুদ্ধের সেমিফাইনাল অব্দি পৌঁছেছিলো ভারত। দল নির্বাচন থেকে ব্যাটিং-বোলিং, প্রশ্ন রয়েছে সবকিছু নিয়েই। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়া করে জেতে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ সেই ম্যাচে বোলিং ভালো হলেও ভারত’কে চাপে ফেলে দিয়েছিলো ব্যাটারদের পারফর্ম্যান্স। শুরুতেই আউত হয়ে ফিরে যান রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল। দুই সিনিয়র খেলোয়াড়ের থেকে আরও বেশী দায়িত্ববোধ আশা করেছিলো ভারতীয় দল। দুই ওপেনার গোট টুর্নামেন্টেই দরকারী সময় খারাপ শট খেলে আউট হয়েছেন। ওপেনিং জুটি’র থেকে ভালো একটা পার্টনারশিপ বা পাওয়ার প্লে’র সঠিক ব্যবহার দেখা যায় নি। প্রথম ম্যাচে বাঁচান বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া। সেই যে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে জয়ের গণ্ডী টপকানো শুরু হয়েছিলো থামলো এসে সেমিফাইনালে। কখনও বিরাট, কখনও সূর্যকুমার, কখনও আবার অর্শদীপ, ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সে ম্যাচ হয়ত জিতিয়েছেন কিন্তু একটা দল হিসবে দুর্দান্ত পারফর্ম করতে কোথায় যেন অক্ষম হয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে এসে স্বপ্নের ইমারত হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো। ১০ উইকেটে হেরে বিদায় নিলো ভারত। রোহিত, রাহুল সহ অনেক সিনিয়র, অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছেন প্রশ্নের মুখে। ভারতীইয় বোর্ড যে টি-২০তে অভিজ্ঞতা’র থেকে তারুণ্যে জোর দিচ্ছে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের দল ঘোষণায় পরিষ্কার তা।

ধীরে চলো নীতি বোর্ডের, তবে দু’জনের জন্য বন্ধ হতে চলেছে দরজা-

Ind vs Eng | image: Gettyimages
BCCI to leave it to Team India veterans Virat Kohli, Rohit Sharma, KL Rahul to decide their own T20i future.

গতকাল ম্যাচ হারার পর সাংবাদিক বৈঠকে এসে রাহুল দ্রাবিড়’কে শুনতে হয় বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের মত সিনিয়রদের ভবিষ্যৎ কি? এখুন বিরাট রদবদলের পক্ষে কথা বলেন নি তিনি। জানান, “এক্ষুণি যদি দলের খোলনলচে বদলাতে চাওয়া হয় তাহলে বড্ড তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে।” বিসিসিআই’র অন্দরের খবর অবশ্য ভিন্ন। নাম গোপন রাখার শর্তে এক আধিকারিক সংবাদসংস্থা পিটিআই’কে জানান, “কাউকেই অবসর নিতে বাধ্য করা হবে না। বিসিসিআই কাউকেই বলে না অবসর নিয়ে নাও। তবে যেহেতু ২০২৩ সালে টি-২০ ম্যাচের তেমন গুরুত্ব নেই। সামনে একদিনের বিশ্বকাপ, তাই সিনিয়র প্লেয়ারদের আপনারা দেখবেন টেস্ট আর একদিনের ম্যাচেই বেশী মনোনিবেশ করতে।” “কেউ সরকারীভাবে অবসর নিতে না চাইলে নেওয়ার দরকার নেই। তবে টি-২০ তে সিনিয়রদের আগামী বছর বেশী ম্যাচে দেখবেন না।” ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ঐ আধিকারিকের। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুলের মত খেলোয়াড়দের নিজেদের ভবিষ্যত নিজেদের ঠিক করার ছাড় দিলেও ছাঁটাই হতে চলেছেন দু’জন। তাঁরা রবিচন্দ্রণ অশ্বিন(Ravichandran Ashwin) এবং দীনেশ কার্তিক(Dinesh Karthik)। জাতীয় দলের নীল জার্সি’তে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাটে শেষ ম্যাচ তাঁরা খেলে ফেলছেন বলেই খবর।

অশ্বিন এবং কার্তিক’কে ছাঁটাইয়ের পথে বোর্ড-

Ravichandran Ashwin and Dinesh Karthik | image: Gettyimages
Ravichandran Ashwin (L) and Dinesh Karthik (R) of India walk off the field not out during the 1st T20i match between West Indies and India at Brian Lara Cricket Academy in Tarouba, Trinidad and Tobago on July 29, 2022. (Photo by Randy Brooks / AFP) (Photo by RANDY BROOKS/AFP via Getty Images)

রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের(Ravichandran Ashwin) আইপিএল পারফর্ম্যান্সের ভিত্তি’তে অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র অনুরোধে চার বছর পর তাঁকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফেরায় বিসিসিআই। এশিয়া কাপের পর অশ্বিন জায়গা পান বিশ্বকাপের দলেও। ব্যাট-বলে তাঁর অলরাউন্ড প্রদর্শন মাথায় রেখে দলে চাহাল থাকা সত্ত্বেও তাঁর ওপরেই ভরসা রাখেন রোহিত শর্মা ও রাহুল দ্রাবিড়। একমাত্র জিম্বাবুয়ে ম্যাচ ছাড়া কোনো বলার মত পারফর্ম্যান্স নেই তাঁর ঝুলিতে। বিশ্বকাপের পর চাহাল’কে ভারতীয় দলের প্রধান স্পিনার হিসেবে খেলানো হবে, এ একরকম নিশ্চিত। ব্যাক আপ হিসেবে রয়েছে রবি বিষ্ণৈ-এর মত প্রতিভা। অশ্বিনের দলে ফেরার রাস্তা তাই প্রায় বন্ধ। একই অবস্থা দীনেশ কার্তিকের(Dinesh Karthik)। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তাঁকে বলা হচ্ছিলো বিশ্বের সেরা ‘ফিনিশার।’ ঘরোয়া সিরিজে পারফর্ম করে রিকি পন্টিং-এর প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে বিশ্রীভাবে ফ্লপ করলেন ‘ডিকে।’ বিশ্বকাপের প্রথম ৪ ম্যাচে খেলে একবারও ১০ এর গণ্ডী পেরোতে পারলেন না ভারতের ‘ফিনিশার।’ প্রথমে তাঁর ওপরে আস্থা রাখলেও শেষ অব্দি তাঁকে বাদ না দিয়ে থাকতে পারে নি ভারত। আগামী নিউজিল্যান্ড সিরিজে ঋষভ পন্থের(Rishabh Pant) পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন সঞ্জু স্যামসন(Sanju Samson) এবং ইশান কিষন’ও(Ishan Kishan)। একসাথে দলে ৩ উইকেটরক্ষকের অন্তর্ভুক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে একটাই কথা। দিন ফুরিয়েছে কার্তিকের।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *