পারথ্ স্টেডিয়াম এখন জসপ্রীত বুমরাহময় (Jasprit Bumrah)। রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma) অনুপস্থিতিতে পেস তারকার হাতেই নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেই সুযোগের দুর্দান্ত ভাবে সদ্ব্যবহার করেছেন তিনি। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে দল’কে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারেন নি ব্যাটাররা। গতি ও বাউন্সে বিভ্রান্ত হয়ে ১৫০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো ভারত। হতাশা জমতে দেন নি ড্রেসিংরুমে। বল হাতে পালটা দেওয়ার লড়াই শুরু করেন জসপ্রীত বুমরাহ’ই (Jasprit Bumrah)। তাঁর অনবদ্য ইনস্যুইং-এ লেগ বিফোর হন অস্ট্রেলিয়ার নবাগত ওপেনার নাথান ম্যাকস্যুইনি। এরপর বুমরাহ’র বলে মার্নাস লাবুশেনের (Marnus Labuschagne) সহজ ক্যাচ ছাড়েন কোহলি। দমে যান নি অধিনায়ক। চোয়াল চেপে চালিয়ে গিয়েছেন যুদ্ধ।
Read More: বড় ঘোষণা জয় শাহের, আইসিসি’র মসনদে বসার আগেই নিলেন চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত !!
বল হাতে বিধ্বংসী বুমরাহ-
সাফল্য পেতে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় নি বুমরাহকে (Jasprit Bumrah)। উসমান খোয়াজার দুর্বলতা বুঝে অফ স্টাম্পের লাইনকে নিশানা করেছিলেন তিনি। স্লিপে সেই বিরাটের হাতেই খোঁচা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাম হাতি ওপেনার। ভারতের বিরুদ্ধে স্টিভ স্মিথের (Steve Smith) টেস্ট ব্যাটিং গড় ৬৫’র বেশী ছিলো এতদিন। বুমরাহ’র বিক্রমে নাজেহাল তিনিও। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শাফ্ল করে স্যুইং মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন অজি তারকা। কিন্তু ব্যাট এড়িয়ে স্মিথের বাম প্যাডে আছড়ে পড়ে বল। গোল্ডেন ডাক-এই থামে ইনিংস। ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বিপদ আরও বাড়ান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ফিরিয়ে। আজ সকালে কেরিয়ারের ১১তম ফাইফার জমা পড়ে বুমরাহ’র ঝুলিতে। আউট করেন অ্যালেক্স ক্যারিকে (Alex Carey)।
বল হাতে বুমরাহ (Jasprit Bumrah) যে সুপারস্টার তা নতুন করে আর বলার প্রয়োজন নেই। অধিনায়ক হিসেবেও যে তিনি সেরাদের একজন তা ৩০ বর্ষীয় তারকা বুঝিয়ে দিয়েছেন পারথ্-এ। ফিল্ডিং সাজানো থেকে বোলিং পরিবর্তন-সবেতেই নজর কেড়েছেন তিনি। রক্ষণাত্মক রণনীতি’কে মুহূর্তের জন্যও ব্যবহার করতে দেখা যায় নি তাঁকে। বরং উইকেটের পেস ও বাউন্সকে মাথায় রেখে স্লিপ কর্ডনে রেখেছেন অন্তত তিন জন’কে। পয়েন্ট, গালিতে ফিল্ডার মোতায়েন রেখেছেন প্রতি মুহূর্তে। মহম্মদ সিরাজকে সরিয়ে প্রথম দশ ওভারের মধ্যে হর্ষিত রাণা’কে (Harshit Rana) আক্রমণে আনেন তিনি। মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে প্রমাণিত হয় সেই সিদ্ধান্তই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল (WTC) থেকে ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনাল-গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বারবার ভারতের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন ট্র্যাভিস হেড। হর্ষিতের লেট স্যুইং উপড়ে দেয় তাঁর অফস্টাম্প।
নজরকাড়া নেতৃত্ব তারকা পেসারের-
সদ্যই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (IND vs NZ) ০-৩ হারতে হয়েছিলো ভারতীয় দলকে। ব্যর্থতার অন্ধকার থেকে সাফল্যের রোশনাইতে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রত্যাবর্তনের পিছনে নেতা বদলকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। কিউইদের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব সামলেছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। উইকেটের চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রে তাঁর দুর্বলতা এসেছিলো প্রকাশ্যে। স্কোয়াড নির্বাচন থেকে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা-সবদিক থেকেই হতাশাজনক প্রদর্শন ছিলো রোহিতের। তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন ব্যর্থতা। টেস্ট জিততে যে এক্স-ফ্যাক্টর প্রয়োজন তার অভাব রোহিতের নেতৃত্বে বারবার দেখা গিয়েছে। ফলশ্রুতি গত দুই টেস্টে পাঁচটি হোম টেস্টে হার। ১২ বছর পর হোম সিরিজে হার, ২৪ বছর পর হোয়াইটওয়াশের কলঙ্ক, সবই ঘটেছে রোহিতের সময়কালেই।
বুমরাহ (Jasprit Bumrah) যেমন নীতিশ কুমার রেড্ডি (Nitish Kumar Reddy) ও হর্ষিত রাণা’কে (Harshit Rana) একসাথে অভিষেক করানোর সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা রোহিত আদৌ নিতে পারতেন না বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল। সৌরভ, বিরাট কোহলিরা মাঝেমধ্যে এহেন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন বলেই বিদেশের মাঠে সফল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। বুমরাহ’র (Jasprit Bumrah) মধ্যেও দুই আগ্রাসী পূর্বসূরির ঝলক দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁকেই চাইছেন স্থায়ী টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের কারণে পারথ্ যান নি রোহিত। সূত্রের খবর আগামীকাল অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে উড়ে যাবেন তিনি। অ্যাডিলেডে হয়ত ফিরবেন প্রথম একাদশে। তবে বাকি টেস্টগুলিতে যদি এই ম্যাচের মত লড়াই উপহার দিতে না পারে ভারত, তাহলে মসনদে তাঁর সময় যে সংক্ষিপ্ত হতে চলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।