এই মুহূর্তে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে চলছে রঞ্জি ট্রফির মরসুম। দেশের সেরা আট রাজ্য দল কোয়ার্টার ফাইনালে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে। চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখোমুখি হয়েছে মধ্যপ্রদেশ। জমজমাট এই ম্যাচটি আগেই এসেছিলো খবরের শিরোনামে। ভাঙা হাত নিয়েও ব্যাট করে সাহসিকতার নজির গড়েছিলেন হনুমা বিহারী। বাউন্সারে কবজি ভেঙে যায় অন্ধ্রপ্রদেশ অধিনায়কের। তখন আর ব্যাটিং করা সম্ভব হয় নি হনুমার পক্ষে। মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। সকলেই ভেবেছিলেন আহত হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছেন তিনি। দলের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ ভোলেন নি হনুমা (Hanuma Vihari)। অন্ধ্রের নবম উইকেটের পতনের পর ভাঙা হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। ডান হাতি ব্যাটার হলেও আঘাত পাওয়া হাতের দরুণ বাঁ-হাতে ব্যাট করেন তিনি। সেইদিন হনুমার (Hanuma Vihari) ২৭ রানের ইনিংসটি নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিলো ক্রিকেটমহলে। অনুরাগীদের তারিফ কুড়িয়েছিলেন তিনি। সেই একই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করে এবার পাদপ্রদীপের আলোয় মধ্যপ্রদেশের এক ক্রিকেটার। রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে মধ্যপ্রদেশের আবেশ খানের বোলিং নজর কেড়েছে বিশেষজ্ঞদের। ভারতীয় দলে স্বল্প কিছুদিন খেলেই জায়গা হা্রিয়েছেন আবেশ (Avesh Khan)। রঞ্জিতে চোখধাঁধানো পারফর্ম্যান্সের পর ফের উঠতে শুরু করেছে তাঁকে ‘মেন ইন ব্লু’তে ফেরানোর দাবী।
জয়ের দোরগোড়ায় মধ্যপ্রদেশ-

কোয়ার্টার ফাইনালে টসে জিতে মধ্যপ্রদেশ প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। দুই ওপেনার সি আর জ্ঞানেশ্বর (CR Gnaneshwar) এবং অভিষেক রেড্ডি (Abhishek Reddy) বেশী বড় ইনিংস খেলতে পারেন নি। আবেশ খানের বাউন্সারে হাত ভাঙায় বেশীদূর এগোয় নি অন্ধ্র অধিনায়ক হনুমা বিহারীর (Hanuma Vihari) ইনিংসও। প্রথম দিনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া অন্ধ্র দলকে চাঙ্গা করে তোলে রিকি ভুঁই (Ricky Bhui) এবং কর্ণ শিণ্ডের (Karan Shinde) জোড়া শতরান। রিকি ১৪৯ এবং কর্ণ ১১০ রান করেন। এই দুইজন ছাড়া বাকিরা অবশ্য রান পান নি। শেষ অব্দি অন্ধ্রের প্রথম ইনিংস থামে ৩৭৯ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২২৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিলো মধ্যপ্রদেশ। রঞ্জির নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি জয় না এলে প্রথম ইনিংসে লিডের সুবাদে কোনো দল পরবর্তী পর্বে যেতে পারে। সেমিফাইনালে যেতে জয় ছাড়া কোনো উপায় তাই ছিলো না মধ্যপ্রদেশের সামনে। তাইজন্য অন্ধ্রের দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড় বইয়ে দেন মধ্যপ্রদেশ বোলার’রা। মাত্র ৯৩ রান গুটিয়ে যায় তারা। ভাঙা হাত নিয়ে একদম শেষে ব্যাট করতে নেমে ১৬ বলে ১৫ রান করে আরও একবার ক্রিকেটবিশ্বের কুর্ণিশ আদায় করে নেন হনুমা বিহারী (Hanuma Vihari)। কামব্যাকের মহাকাব্য লিখে এখন ম্যাচে চালকের আসনে মধ্যপ্রদেশ। প্রতিবেদন লেখার সময় অব্দি তাদের স্কোর ১ উইকেটের বিনিময়ে ১১০। জিততে আর চাই ১৪২ রান।
ম্যাচের নায়ক আবেশ খান-

দ্বিতীয় ইনিংসে অন্ধ্রকে ধ্বংস করার মূল কাণ্ডারী হয়ে উঠেছিলেন ২৬ বর্ষীয় পেসার আবেশ খান (Avesh Khan)। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন অন্ধ্রপ্রদেশের দুই ওপেনার সি আর জ্ঞানেশ্বর এবং অভিষেক রেড্ডি’কে। দু’জনেই ১ রান করে করতে পেরেছেন। পরবর্তী স্পেলে ফিরে এসে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে যান আবেশ। আউট করেন ললিত মোহন (Lalith Mohan) এবং শোয়েব মহম্মদ খানকে। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের সফলতম বোলার আবেশই। তাঁর পাশাপাশি কুমার কার্তিকেয় ২টি এবং গৌরব যাদব ৩টি উইকেট নেন। অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন অশ্বিন হেব্বার। ৬৫ বলে ৩৬ রান করে তিনি কুমার কার্তিকেয়’র বলে রজত পতিদারের (Rajat Patidar) হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
ভারতীয় দলে ফিরবেন আবেশ ?

রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলে্র হয়ে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারীতে টি-২০ ফর্ম্যাটে অভিষেক হয় আবেশ খানের (Avesh Khan)। উইন্ডিজের দলের বিপক্ষে কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে কেরিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছিলেন তিনি। কেরিয়ারে এখনও অব্দি মোট ১৫টি আন্তর্জাতিক টি-২০তে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। নিয়েছেন ১৩ উইকেট। একদিনের ক্রিকেটে ভারতের জার্সি গায়ে ৫টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন মধ্যপ্রদেশের পেসার। নিয়েছেন ৩টি উইকেট। গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষবার ভারতের হয়ে খেলতে দেখা গিয়েছিলো তাঁকে। এরপর টি-২০ বিশ্বকাপগামী দলে ঠাঁই হয় নি তাঁর। নিউজিল্যান্ড বা বাংলাদেশেও টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে দেখা যায় নি আবেশকে। দেশের মাঠে নয়া বছরে শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি সীমিত ওভারের সিরিজ খেলেছে ভারত। আবেশ খানকে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবেন নি জাতীয় নির্বাচকেরা। রঞ্জিতে চমকপ্রদ পারফর্ম্যান্সের পর ফের একবার শিকে ছিঁড়বে আবেশের (Avesh Khan) ভাগ্যে? সেইদিকেই তালিয়ে ক্রিকেটমহল।