Team India: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের ২০৯ রানের ব্যবধানে শোচনীয় হার টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমের ফাটল সামনে এনে দিয়েছে। কেনিংটন ওভালে ব্যর্থতার নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসেরর পাতায়। বড় মঞ্চে সাফল্যের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে হলো দীর্ঘতর। প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) দলের বিরুদ্ধে ভারতের হারের ময়নাতদন্ত করতে বসে ‘টিম ইন্ডিয়া’এর পরিকল্পনার একের পর এক খামতির কথাই তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথম একাদশ চয়ন থেকে টসে জেতার পর নেওয়া সিদ্ধান্ত-কোনো দিক থেকেই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma) ক্লিনচিট দিতে পারছেন না ক্রিকেটবোদ্ধারা। একই সাথে কাঠগড়ায় উঠছেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও।
রাহুল-রোহিত জুটির যে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা তা অবশ্যই রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin) প্রথম একাদশের বাইরে রাখা। একমাত্র স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজাকে জায়গা দিয়ে চার জন পেসারকে খেলিয়েছিলো ভারত। এই ফর্মূলা বিশেষ ফলপ্রসূ হয় নি ভারতীয় দলের জন্য। ওভালের পিচ দেখে গাওস্কর (Sunil Gavaskar), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) মত প্রাক্তনীরা জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশন থেকে বল টার্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারেন অশ্বিন। কিন্তু সেই কথা কানে তোলেন নি দ্রাবিড় (Rahul Dravid), রোহিত-সহ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতামত অক্ষরে অক্ষরে সতি প্রমাণ করে উইকেট থেকে সাহায্য আদায় করে নেন ভারতের জাদেজা বা অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিয়ঁ’রা (Nathan Lyon)। সেখানে বিশ্বের সেরা স্পিনার হয়েও রিজার্ভ বেঞ্চেই থাকতে হয় অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin)। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাদ পড়ার পর দেশে ফিরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটদুনিয়াকে নড়িয়ে দিয়েছিলেন অশ্বিন। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেকার ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো তাঁর মন্তব্যে। আবার মুখ খুললেন তিনি। ভারতীয় দলের ব্যর্থতার জন্য দলের বাঁধুনির অভাব যে দায়ী তা আবার পরিষ্কার হয়ে গেলো অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) বক্তব্যে।
Read More: ম্যাচ চলাকালীন আইসিসির শাস্তির কোপে ফাস্ট বোলার, অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে কেরিয়ার শেষ !!
‘বন্ধু নয়, সকলে সহকর্মী…” দল সম্পর্কে বিস্ফোরক অশ্বিন-
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২১-২৩ সাইকেলে ভারতের জার্সিতে সবচেয়ে বেশী উইকেট তাঁর। র্যাঙ্কিং-এ সকলের চেয়ে এগিয়ে তিনি। এমনকি ৯২ টেস্ট ও ৪৭৪ আন্তর্জাতিক টেস্ট উইকেটের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ফাইনাল ম্যাচে জায়গা হয় নি রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin)। বাদ পড়ে তিনি যে হতাশ তা খেলা চলাকালীন জানাতে চান নি মিডিয়াকে। জলপানের বিরতিতে মাঠে নেমে সতীর্থদের উৎসাহিত করতে দেখা গিয়েছে অশ্বিনকে। কিন্তু হারের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মনের জানলা-দরজা খুললেন তিনি। অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছেন টিম ইন্ডিয়ার লাগাতার ব্যর্থতার পিছনে দলগত সংহতির অভাবকেই মূল কারণ বলে মনে করা যেতে পারে। টিম বন্ডিং প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এটা এমন একটা যুগ যেখানে সবাই সহকর্মী। একটা সময় ছিলো যখন সতীর্থরা আসলে বন্ধু ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা শুধুই সহকর্মী। দুইয়ের মধ্যে একটা বড় তফাত আছে। এখন সবাই একে অন্যকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে চায়। কারও কাছে সময় নেই পাশে বসা ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে যে তার কি খবর।”
ম্যানেজমেন্টের দিকে তীর অশ্বিনের-
২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো ভারতীয় দল। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে দশটা বছর। আইসিসি আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় সাফল্যের মুখ দেখে নি ভারতীয় দল। বারবার তীরে এসে ডুবেছে তরী। ২০২৩-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগেও ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গিয়েও বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে ভারতকে। লাগাতার হারে হতাশ দেশের ক্রিকেটপ্রেমী জনতা। টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে অনেকেই নিজেদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে সমর্থকদের পাশেই দাঁড়ালেন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। তিনি বলেন, “দশ বছর ভারত কোনো আইসিসি ট্রফি না জেতায় সমর্থকদের যে রাগ তা আমি বুঝতে পারচ্ছি। এই ইস্যুতে আমি সমর্থকদেরই পাশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখছেন এই খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হোক, ওই ক্রিকেটারকে জায়গা দেওয়া হোক। কিন্তু কোনো খেলোয়াড়ের দক্ষতা তো আর একরাতের মধ্যে বদলে যায় না।”
ভারতীয় দলের সমস্যার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। খেলোয়াড়দের মধ্যে নিরাপত্তাবোধের অভাবের দিকেই সরাসরি আঙুল তুলেছেন তিনি। ঘুরিয়ে তোপ দেগেছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে। অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) ইউটিউব ভিডিওতে বলেন, “আমরা মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা বলি। উনি কি করতেন? সবকিছু সহজ রাখতেন। ওনার অধিনায়কত্বে আমিও খেলেছি। উনি ১৫ জনের দল বেছে নিতেন। সেই একই ১৫ জনের দল সর্বদা তাঁর সঙ্গে থাকত। প্রথম একাদশেও বিশেষ পরিবর্তন করতেন না। যে কোনো খেলোয়াড়ের কাছে এই নিরাপত্তার অনুভূতিটা খুব দরকারী।” বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অশ্বিনের বাদ পড়ার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য বেশ ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।