Ashes 2023: টেস্ট ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলির তালিকা করা হলে সবার উপরে যে সিরিজটির জায়গা হবে তা নিঃসন্দেহে অ্যাসেজ। ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ ঘিরে দুই দেশেই যে আবহ তৈরি হয়, তা ক্রিকেটদুনিয়ায় আর কোথাও দেখা যায় না। দুই পক্ষই নিজেদেরকে দক্ষতার শীর্ষে তুলে নিয়ে যেতে চান। প্রতিপক্ষকে সূচাগ্র মেদীনী না ছেড়ে জয় হাসিল করে নেওয়াই থাকে লক্ষ্য। দুই অন্যতম সেরা দলের লড়াইয়ে প্রতি মুহূর্তে ছিটকে ওঠে স্ফুলিঙ্গ। ব্যতিক্রম হলো না ২০২৩ সালের অ্যাসেজের(Ashes 2023) প্রথম টেস্টও। বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনের মাঠে এক রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের সাক্ষী থাকলেন দর্শকেরা। একদিকে সদ্য বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব জেতা অস্ট্রেলিয়া, অন্যদিকে সাম্প্রতিক কালে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে লাল বলের ক্রিকেট খেলে সাড়া ফেলে দেওয়া ইংল্যান্ড-দুই দলের লড়াই চললো ম্যাচের শেষ বল অবধি। চাপের পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিলেন তাদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। তবে যেভাবে নিজেদের সর্বস্ব পণ করে খেললেন দুই দলের খেলোয়াড়রা, তাতে দিনের শেষে জিতলো আসলে ক্রিকেট।
Read More: Ashes 2023: “বাজবলের মৃত্যুঘন্টা বাজালেন কামিন্স…” রুদ্ধশ্বাস টেস্টে জয়ী অস্ট্রেলিয়া, উদ্বেল সমাজমাধ্যম !!
‘অহিংস’ ওয়ার্নারকে দেখলো এজবাস্টন-
বৃষ্টিস্নাত এজবাস্টনে খেলা শুরু হতেই বেশ দেরী হলো গতকাল। একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তার উপর সপ্তাহের কাজের দিন। সাধারণত টেস্ট ম্যাচের গ্যালারি ফাঁকা থাকার কথা। কিন্তু এজবাস্টনের দর্শকাসন পূর্ণ কানায় কানায়। টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁরা এই ছবি দেখে নিশ্চয়ই স্বস্তি পাবেন। সারা দিন চললো সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। খেলা হচ্ছে ইংল্যান্ডে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সমর্থক সংখ্যা ঢের বেশী। সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও উদ্যমে সমানে সমানে পাল্লা দিলেন অস্ট্রেলীয়রাও। ইংলিশ সামারের উত্তাপ বাড়ালো গ্যালারির উন্মাদনা। মাঠের লড়াইতেও যোগ দিতে দেখা গেলো দর্শকদের। ‘স্যান্ডপেপার’ কাণ্ডে জড়িয়ে ২০১৮-১৯ মরসুমে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত ছিলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং তারকা স্টিভ স্মিথ (Steve Smith)। ইংল্যান্ড সমর্থকদের দেখা গেলো স্মিথের উদ্দেশ্যে গান ধরেছেন। গানের কলির বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় , “ওহে স্টিভ স্মিথ, আমরা তোমায় টিভির পর্দায় কাঁদতে দেখেছি।” সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন স্মিথ (Steve Smith)। সেই ঘটনাকে ইঙ্গিত করেই এই গান ইংরেজ ভক্তদের।
শিরীষ কাগজ কেলেঙ্কারি বা ক্রিকেটলিখিয়েদের ভাষায় ,‘স্যান্ডপেপার গেট’-এ জড়িয়ে নির্বাসিত ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারও (David Warner)। সেই সময় স্মিথ অধিনায়ক ছিলেন দলের। আর ওয়ার্নার ছিলেন সহ-অধিনায়ক। সেই বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়ে নি তাঁরও। এবারও ইংল্যান্ডের গ্যালারি থেকে তাঁর উদ্দেশ্যেও উড়ে এলো বাছাই সব বিশেষণ। নির্বাসনের পর ফিরে এসে ওয়ার্নার নিজের আগ্রাসন অনেকটা কমিয়ে ফেলেছেন। এর আগে এক পানশালায় জো রুটের (Joe Root) সাথে মারপিট করার নজির রয়েছে তাঁর। এমনকি সাজঘরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যুইন্টন ডি ককের সাথেও হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন তিনি। সেই ওয়ার্নার (David Warner) এখন অনেকখানি স্থিতধী, শান্তশিষ্ট। এজবাস্টনেও সেই শান্তির প্রতিমূর্তি হয়েই ধরা দিলেন তিনি। গ্যালারি থেকে তাঁর উদ্দেশ্যে ছাপার অযোগ্য ভাষায় উড়ে এসেছিলো গালিগালাজ। “মাদার*** , তুমি প্রতারক” শুনেও কিন্তু মেজাজ হারান নি তিনি। বরং গান্ধীগিরির পথে হাঁটেন ওয়ার্নার (David Warner)। দুই হাত তুলে ‘থাম্বস আপ’ দেখান দর্শকদের উদ্দেশ্য। তাঁর প্রতিক্রিয়া বেশ মনে ধরেছে অনুরাগীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে তাঁরা বলছেন, ‘কিল দেম উইথ কাইন্ডনেস।’
দেখুন সেই ভিডিও-
Best one yet 😄
#ashes #CricketTwitter #Ashes23 #Bazball #DavidWarner @davidwarner31 pic.twitter.com/QwcT9G16Y9— Sri Lankan Cricket Podcast (@srilankancripod) June 16, 2023
কামিন্সের ব্যাটে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতলো ইংল্যান্ড-
আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে টেস্ট খেলার যে নয়া নীতি আমদানি করেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস (Ben Stokes) এবং কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (Brendon McCullum), তাকে ‘বাজবল’ নামে ডাকছে সংবাদমাধ্যম। এর আগে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাফল্য এনে দিয়েছে এই ‘বাজবল।’ সামনে সদ্য টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েও নিজেদের ধ্যানধারণা বদলায় নি ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ঝড়ের বেগে ৩৯৩ তুলে প্রথম দিনেই ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিলো তারা। শতরান করেন জো রুট (Joe Root)। ৭৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন জনি বেয়ারেস্টো (Jonny Bairstow)। জবাবে অস্ট্রেলিয়া অল্প রানের মধ্যে ওয়ার্নার, লাবুশেন এবং স্মিথকে হারালেও তাদের ম্যাচে ফেরান উসমান খোয়াজা। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম শতরান করেন তিনি। ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন পাক বংশোদ্ভুত ওপেনার। হেড (Travis Head) ও অ্যালেক্স ক্যারির (Alex Carey) জোড়া অর্ধশতক ৩৮৬তে পৌঁছে দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ইনিংসে ৭ রানের লিড পায় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ চালু ছিলো দ্বিতীয় ইনিংসেও। রুট, স্টোকস, হ্যারি ব্রুক’রা দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। নাথান লিয়ঁ (Nathan Lyon) ও প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) অনবদ্য বোলিং-এ তাদের ইনিংস শেষ হয় ২৭৩ রানে। জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিলো ২৮১ রান। এজবাস্টনে এর থেকে বেশী রান কোনো বিদেশী দল এর আগে তাড়া করতে পারে নি। ২০০৫ সালে ২৮২ তাড়া করতে নেমে ২ রানে হারতে হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়াকে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফের ‘ব্যাগি গ্রিন’কে ভরসা দেয় উসমান খোয়াজার (Usman Khawaja) ব্যাট। উল্টোদিকে নিয়মিত উইকেট গেলেও ১৯৭ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি। অন্তিম সেশনে খোয়াজাকে ফেরান স্টোকস। অ্যালেক্স ক্যারি আউট হন জো রুটের বলে। একটা সময় ম্যাচে জাঁকিয়ে বসেছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অজি অধিনায়ক কামিন্স (Pat Cummins)। ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৭৩ বলে ৪৪* করে দলকে জয়ের সীমানা অতিক্রম করান তিনি। রুদ্ধশ্বাস এই জয়ের ফলে সিরিজে ১-০ ফলে এগিয়ে গেলো অজিরা।