Ashes 2023: “বাজবলের মৃত্যুঘন্টা বাজালেন কামিন্স…” রুদ্ধশ্বাস টেস্টে জয়ী অস্ট্রেলিয়া, উদ্বেল সমাজমাধ্যম !! 1

Ashes 2023: টি-২০ যতই তার যাবতীয় গ্ল্যামার, চাকচিক্য নিয়ে ক্রিকেটদুনিয়ায় জাঁকিয়ে বসুক, টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চ তাতে কখনই আসবে না সম্ভবত। না হলে মঙ্গলবার বৃষ্টিভেজা বার্মিহ্যামের গ্যালারিতে কেনই বা ভীড় জমাবেন হাজার-হাজার মানুষ? টেলিভিশনের পর্দায় রাত জেগে চোখ রাখবেন আরও কয়েক কোটি জোড়া চোখ? লাল বলের যুদ্ধে কেনো অ্যাসেজকে ‘প্ল্যাটিনাম স্ট্যান্ডার্ড’ বলা হয় তার নিদর্শন আবার একবার দেখা গেলো এজবাস্টনে। ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া-টেস্টের চিরন্তন এই প্রতিদ্বন্দ্বীতাকে অন্য এক স্তরে নিয়ে গেলো দুই দলই। বেন স্টোকস (Ben Stokes) এবং প্যাট কামিন্স-দুই শিবিরের, দুই অধিনায়ক নিজেদের সবটুকু দিয়ে জয়ের জন্য ঝাঁপালেন। দিনের শেষে অনন্য এক ইনিংস খেলে ‘ব্যাগি গ্রিন’ বাহিনীকে হয়ত জয় এনে দিলেন কামিন্স (Pat Cummins), তাতে ইংল্যান্ডের লড়াই বিন্দুমাত্র ফিকে হয় না। বছর খানেক পর পরিসংখ্যানবিদের খাতা উল্টেপাল্টে দেখলে হয়ত দেখা যাবে অজিরা ২ উইকেটে জিতেছিলো এজবাস্টনে, কিন্তু যাঁরা এই ম্যাচ চাক্ষুস করলেন কেবল তাঁরাই জানেন যে এই খেলায় অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের সীমানা ছাড়িয়ে জিতেছিলো আসলে টেস্ট ক্রিকেট।

Read More: ENG vs AUS: “আমরা তোমাকে টিভিতে কাঁদতে দেখেছি”, স্টিভ স্মিথকে চরম উপহাস অলি রবিনসনের !! দেখুন ভিডিও

অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিলেন অদম্য কামিন্স-

Pat Cummins | Image: Getty Images
Pat Cummins | Image: Getty Images

সময়টা ২০০৫ সাল। এই এজবাস্টনেই অস্ট্রেলিয়ার জন্য ২৮২ রানের লক্ষ্য রেখেছিলো মাইকেল ভনের ইংল্যান্ড। টপ অর্ডার সাজঘরে ফিরলেও ব্রেট লি ও শেন ওয়ার্নের (Shane Warne) লড়াইয়ের সুবাদে জয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন অজিরা। ওয়ার্ন আউট হওয়ার পর শেষ উইকেটে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লি (Brett Lee) ও কাসপ্রোউইচ (Michael Kasprowicz)। কিন্তু স্টিভ হার্মিসনের (Steve Harmison) একটা শর্ট বল সব হিসেব বদলে দেয়। কাসপ্রোউইচের ব্যাট ছুঁয়ে লেগসাইডের দিকে যাচ্ছিলো বল,অনেকখানি দৌড়ে গিয়ে সেই ক্যাচ তালুবন্দী করেন উইকেটরক্ষক জেরান্ট জোন্স (Geraint Jones)। ২ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২-১ ফলে অ্যাসেজ জেতে ইংল্যান্ড। কাট টু ২০২৩-এর এজবাস্টন। শেষ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য ২৮১ রানের। ২২৭ রানের মাথায় অ্যালেক্স ক্যারি (Alex Carey) যখন আউট হন তখনও বাকি ৫৪ রান। স্পেশ্যালিস্ট ব্যাটাররা সকলেই সাজঘরে। ইংল্যান্ডের জয় সময়ের অপেক্ষা ভেবে উৎসবের প্রস্তুতি ততক্ষণে ‘বার্মি আর্মি।’

কিন্তু অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা গেলো প্যাট কামিন্সকে (Pat Cummins)। নাথান লিয়ঁকে সঙ্গী করে তিনি শুধু অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিলেন না, সাথে ২০০৫ সালের সেই হারের ক্ষতেও প্রলেপ দিলেন। ২০০৫ সালে কামিন্সের বয়স তখন ১২ বছর। টেলিভিশনের পর্দায় প্রিয় দলকে হারতে দেখে নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছিলেন তিনিও। বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টের শেষ সেশনে ৭৩ বলে ৪৪* রানের ইনিংস খেলে সেই কষ্টের উপশম খুঁজে নিলেন তিনি। এছাড়াও বলতে হয় নাথান লিয়ঁ’র (Nathan Lyon) কথা। ২০১৯-এর অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জিততে পারে নি কেবল লিয়ঁ’র একটা ভুলে। হেডিংলেতে তিনি বেন স্টোকসকে (Ben Stokes) রান-আউট করতে পারেন নি সেইবার। উইকেট আগলে রেখে তাঁর ২৮ বলে ১৬* রানের ইনিংসও তাই সেই হারের জবাব। ম্যাচের কথা বলতে গেলে ফের একবার উঠে আসবে ২০০৫ এর কথা। সেবার হার্মিসনের এক শর্ট বল স্বপ্ন ভেঙে ছিলো অস্ট্রেলিয়া। এবার অলি রবিনসনের (Ollie Robinson) শর্ট বলকে থার্ড ম্যান বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম তুললেন কামিন্স (Pat Cummins)। সম্পূর্ণ হলো একটা বৃত্ত।

‘একেই বলে টেস্ট ক্রিকেট’, বলছেন নেটিজেনরা-

Pat Cummins | Ashes | Image: Getty Images
Pat Cummins | Image: Getty Images

রবিনসনের ডেলিভারিটাকে থার্ড ম্যানের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। বল বাউন্ডারির সীমানা স্পর্শ করতেই ব্যাট-হেলমেট সব ফেলে যেভাবে ছুটলেন অজি অধিনায়ক, সেই উত্তেজনা দিনকয়েক আগে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেও তাঁর মধ্যে দেখা যায় নি। হয়ত অ্যাসেজের মাহাত্ম্যটাই এমন। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। এজবাস্টন টেস্টে রুট (Joe Root), খোয়াজা (Usman Khawaja), ব্রড (Stuart Broad), কামিন্সদের পারফর্ম্যান্স সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই অন্য স্তরে তুলে নিয়ে গেলো। প্রথম ইনিংসে খোয়াজা (Usman Khawaja)করেছিলেন ১৪১ রান। ‘আমিও ইংল্যান্ডে রান করতে পারি’- এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছিলো তাঁর ব্যাটে। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি করলেন ১৯৭ বলে ৬৫। পঞ্চম দিনের সকালে রক্তের স্বাদ পাওয়া শ্বাপদের মত ইংল্যান্ড যখন অজি ব্যাটিং’কে ধরাশায়ী করার প্রচেষ্টায় তখন খোয়াজাই ঝড়ঝাপ্টা সামলালেন যাবতীয়। নেটজনতার কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছেন তিনি। ম্যাচে খোয়াজাকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে চালকের আসনে বসান বেন স্টোকস (Ben Stokes)। “বড় মঞ্চে স্টোকস বারবার কি করে জ্বলে ওঠেন?’ প্রশ্ন এক চমৎকৃত নেটনাগরিকের।

বর্তমানে ইংল্যান্ডের টেস্ট খেলার ভঙ্গী নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আগ্রাসী রুট’রা প্রথম দিনেই ৩৯৩ রানের মাথায় ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সাহসী এবং আক্রমণাত্মক এই স্ট্র্যাটেজিকে তাদের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নামানুসারে বলা হচ্ছে ‘বাজবল।’ কামিন্সের (Pat Cummins)প্রতিরোধের সামনে ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ মুখ থুবড়ে পড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে স্টোকস-বাহিনীকে। বলা হচ্ছে, “সাধারণ বুদ্ধি হারিয়ে দিলো বাজবল’কে”, অনেকে কামিন্সকে (Pat Cummins) ধন্যবাদ দিয়ে বলছেন, “বাজবলের ডানা ছাঁটার জন্য শুভেচ্ছা।” তাঁর দল পরিচালনার পদ্ধতিকে অনুরাগীরা ডাকছেন ‘কামিন্সবল’ বলে। ইংল্যান্ড সমর্থকরা অবশ্য পাশেই আছেন দলের। “এমনটাই হওয়া উচিৎ টেস্ট ক্রিকেট।” দুই অধিনায়কের সাহসী যুদ্ধনীতি দেখে আক্ষেপ ভারতীয় সমর্থকদের, “ঈশ এমনটা যদি আমাদেরও হত।” তবে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়ে নেটজগতে আপাতত আলোচনার কেন্দ্রে কামিন্সই (Pat Cummins)। তাঁকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অস্ট্রেলীয় জনতা বলছে, “দ্য ম্যান, দ্য মিথ, দ্য লেজেন্ড।”

দেখুন ট্যুইটার চিত্র-.

Also Read: ENG vs AUS: নিজের দলকে হারতে দেখে খুশি নয় এক ফ্যান্স, ক্যামরা থেকে লুকালেন মুখ !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *