১৯৮৯ থেকে ২০১৩-টানা ২৪ বছর ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ ছিলেন শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। ১৬ বছর বয়সে অভিষেক টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সিতে। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। ব্যাটিং দক্ষতায় মাতিয়ে রেখেছিলেন আট থেকে আশি’কে। দীর্ঘ কেরিয়ারে ৩৪ হাজারের বেশী রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। টেস্ট এবং ওডিআই, দুই ফর্ম্যাটেই তাঁর চেয়ে বেশী রান করতে পারেন নি কেউই। ১০০ আন্তর্জাতিক শতরানের বিরল কৃতিত্ব’ও রয়েছে শচীনের (Sachin Tendulkar)। ভারতীয় তারকা’র ব্যাটিং-এ মুগ্ধ হয়েছিলেন খোদ ডন ব্র্যাডম্যান’ও। অজি কিংবদন্তি জানিয়েছিলেন, “ছেলেটা অনেকটা আমার মতই খেলে।” ২০১৩ সালে তাঁর অবসরের পর থেকেই চলছে দ্বিতীয় শচীনের সন্ধান। একটা সময় আশা জাগিয়েছিলেন পৃথ্বী শ, কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার পথে তিনি। ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর জুতোয় পা গলানোর দৌড়ে বর্তমানে রয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)।
Read More: IND vs BAN: কানপুর টেস্ট থেকে বাদ পড়ছেন মহম্মদ সিরাজ, ঘরের মাঠে এই ক্রিকেটারের হচ্ছে অভিষেক !!
টিম ইন্ডিয়ার নতুন তারকা যশস্বী-
গলি থেকে রাজপথে উঠে আসার গল্প বলিউডি চলচ্চিত্রে আকছার দেখা যায়। বাস্তব জীবনে যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) উত্থানের গল্পটাও খানিকটা তেমনই। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বইতে চলে এসেছিলো তাঁর পরিবার। আজাদ ময়দানে যেখানে ক্রিকেটের কোচিং নিতেন, সেখানেই এক তাঁবুতে মালিদের সাথে কাটিয়েছেন রাতের পর রাত। কেবল সরেন নি নিজের লক্ষ্য থেকে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেওয়ার পর সুযোগ মিলেছিলো অনুর্দ্ধ-১৯ ভারতীয় দলে। অধিনায়ক হিসেবে খেলেন অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল’ও। এরপর আইপিএলে সুযোগ আসে। রাজস্থান রয়্যালসের (RR) জার্সিতে তাঁর চমৎকার পারফর্ম্যান্স জীবনটাই বদলে দেয় যশস্বী’র। আক্ষরিক অর্থেই তিনি হয়ে ওঠেন যশস্বী। জায়গা করে নেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) রেডারে।
২০২৩-এর অগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার ডাক আসে ভারতীয় দলের (Team India)। টেস্ট অভিষেকেই ১৭৪ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে হারিয়ে যেতে আসেন নি তিনি। বরং বাইশ গজকেই বানাতে চলেছেন নিজের রাজ্যপাট। এরপর টি-২০তেও ভালো পারফর্ম্যান্স করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন। কনিষ্ঠতম ভারতীয় হিসেবে করেছেন টি-২০ শতরান। স্বল্প দিনের টেস্ট কেরিয়ারে সেরা পারফর্ম্যান্সটা যশস্বী (Yashasvi Jaiswal) তুলে রেখেছিলেন ঘরের মাঠের জন্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার টেস্টের সিরিজে তাঁর ব্যাট থেকে আসে জোড়া ডবল সেঞ্চুরি। এক সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভারতীয় হওয়ার রেকর্ড স্থাপন করেন তিনি। এখনও ওডিআই-তে সুযোগ পান নি তিনি, কিন্তু বাকি দুই ফর্ম্যাটে যে ছন্দ বজায় রেখেছেন তিনি, তাতে যশস্বীকে শচীনের উত্তরসূরি ভাবতে সমস্যা হচ্ছে না ক্রিকেটজনতার।
চেন্নাইতে নয়া রেকর্ড গড়লেন যশস্বী জয়সওয়াল-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লাল বলের খেলায় যেমন দাপট দেখিয়েছিলেন, তা দেখা গেলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও। চেন্নাইয়ের চেপক স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম ঘন্টায় যখন হাসান মাহমুদ (Hasan Mahmud), তাস্কিন আহমেদদের স্যুইং সামলাতে ঘোর সমস্যায় ভারতীয় (Team India) টপ-অর্ডার, পরপর সাজঘরে ফিরেছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি (Virat Kohli), শুভমান গিল’রা, তখন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন যশস্বীই (Yashasvi Jaiswal)। মরিয়া হয়ে রুখে দাঁড়ান বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে। তাঁর ৫৬ রানের ইনিংসটিই প্রত্যাঘাতের মঞ্চ তৈরি করে দেয়। ফিল্ডিং-এও নজর কেড়ে নিয়েছেন মুম্বইয়ের তরুণ তুর্কি।
অর্ধশতকের সাথে সাথে একাধিক রেকর্ডেরও মালিক যশস্বী (Yashasvi Jaiswal) হয়ে গেলেন চেন্নাইয়ের মাঠে। প্রথম ১০ টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের নিরিখে সুনীল গাওস্কর’কে (Sunil Gavaskar) পিছনে ফেললেন তিনি। ‘লিটল মাস্টার’-এর সংগ্রহে ছিলো ৯৭৮ রান। যশস্বীর ঝুলিতে আপাতত ১০ ম্যাচে ১০৯৪ রান। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে ঘরের মাঠে প্রথম ১০ ইনিংসের নিরিখে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিকও হলেন তিনি। এতদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি ছিলেন এই রেকর্ডের অধিকারী। তাঁর ঝুলিতে ছিলো ৭৪৭ রান। তাঁকে টপকে ঘরের মাঠে খেলা ১০ ইনিংসে যশস্বীর ঝুলিতে ৭৫৫ রান।