WTC Final: দশ বছর কেটে গেলো বদলালো না ছবিটা। ফের একবার আইসিসি প্রতিযোগিতার ফাইনালে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ভারতীয় দলকে। বছর দুয়েক আগে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে ভারত হেরেছিলো নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সাউদাম্পটনের সেই ম্যাচে ৮ উইকেটে খেতাব জিতে নিয়েছিলো কিউইরা। ২০২৩ সালে দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়েও ট্রফি ছিনিয়ে নিতে পারলেন না বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)। নিউজিল্যান্ডের পড়শি দেশ অস্ট্রেলিয়া টেস্টের পাঁচদিনই দাপট বজায় রেখে ম্যাচ জিতে নিলো। ইংল্যান্ডের মাটিতেই ২০১৩ সালে শেষবার আইসিসি আয়োজিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো ভারত। এরপর থেকে বহু প্রচেষ্টাতেও সাফল্যের সোনালী আভা স্পর্শ করতে পারে নি ‘মেন ইন ব্লু।’ রবিবারের কেনিংটন ওভালে যখন প্রথম দল হিসেবে সবকটি আইসিসি ট্রফি জয়ের নজির গড়লো অজিরা, তখন ভারতীয় ক্রিকেটের ওপর ব্যর্থতার অন্ধকার ছায়াটি আরও খানিকটা দীর্ঘতর হলো।
ওভালে ভারতের পারফর্ম্যান্স দেখে আশাহত সাধারণ সমর্থক থেকে বিশেষজ্ঞ,সকলেই। ইতিমধ্যেই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছেন ক্রিকেটাররা। সমালোচিত হয়েছেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও (Rahul Dravid)। ভারতের খারাপ পারফর্ম্যান্সের জন্য পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। প্রথম একাদশে রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin) জায়গা না দেওয়া, টসে জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেওয়ার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। এছাড়াও কড়া সমালোচনার পথে হেঁটেছেন সুনীল গাওস্করও (Sunil Gavaskar)। ‘দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিতে কোনো লাভ নেই। আসল পরীক্ষা হয় বড় ম্যাচে’, কোহলি-রোহিত-পূজারাদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন তিনি। ‘টিম ইন্ডিয়ার’ নড়বড়ে প্রদর্শনের পিছনে আইপিএল নিয়ে অত্যধিক মাতামাতিকেই কারণ বলে মনে করছেন রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। কোনটা অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য? বিসিসিআই-এর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সমর্থকদের ধৈর্য্যের বাঁধও যে ভাঙছে তা বোঝা গেলো রবিবার খেলা শেষে। মাঠের বাইরে দাঁড়িয়েই ক্যামেরার সামনে দলের পারফর্ম্যান্সকে তুলোধোনা করলেন এক যুবক। ঝড়ের গতিতে ট্যুইটারে শেয়ার হয়েছে সেই ভিডিও।
Read More: WTC Final 2023: এই ৩ কারণে কেন এখনও টেস্ট দলে ঋষভ পন্থের প্রয়োজন, আপনিও হবেন একমত !!
পঞ্চম দিনের সকালেই শেষ ভারতের প্রতিরোধ-

প্রথম ইনিংসে ট্রাভিস হেড (Travis Head) ও স্টিভ স্মিথের (Steve Smith) জোড়া শতরানের সুবাদে ৪৬৯ তুলেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ভারত করে ২৯৬। ১৭৩ রানের লিড সঙ্গী করে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলো অজিরা। অ্যালেক্স ক্যারি’র অপরাজিত ৬৬, লাবুশেনের ৪১ এবং স্টার্কের ৪১ রানের ইনিংস তাদের পৌঁছে দেয় ২৭০ রানে। ৪৪৩ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক কামিন্স (Pat Cummins)। ৪৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত দুর্ভাগ্যের শিকার হয় শুরুতেই। বিতর্কিত ক্যাচে আউট হন শুভমান গিল (Shubman Gill)। এরপর চতুর্থ দিনেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত (Rohit Sharma) ও পূজারা। শেষ দিনে ম্যাচের ভাগ্য নির্ভর করছিলো বিরাট কোহলি (Virat Kohli) এবং অজিঙ্কা রাহানের (Ajinkya Rahane) ব্যাটে। যথাক্রমে ৪৯ এবং ৪৬ রানে তাঁরা ফিরতেই ট্রফির গায়ে অস্ট্রেলিয়ার নাম লেখা প্রায় হয়েই গিয়েছিলো। রবিবার লাঞ্চের বিরতির আগেই গুটিয়ে গেলো ভারতের ইনিংস। ৪৪৪ তাড়া করতে নেমে ২৩৪ রানে শেষ হলো ভারতের প্রতিরোধ। শেষ দিনে ৭০ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারায় ‘মেন ইন ব্লু।’ ২০৯ রানে জিতে দ্বিতীয় WTC চ্যাম্পিয়ন হলো অজিরা।
ম্যাচ হেরে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন ‘মৌনতাই শক্তি প্রদান করে।’ দলের সেরা তারকা মৌনতা বেছে নিলেও সমর্থকেরা যে আর চুপ থাকতে পারছেন না তা বোঝা গেলো রবিবার বিকেলে। টানা দ্বিতীয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের হারের পর ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠলো সমর্থকদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনভর সরব হয়েছিলেন অনেকেই। এমনকি সুদূর ইংল্যান্ডে ওভাল মাঠের বাইরেও এক বীতশ্রদ্ধ সমর্থকের প্রতিক্রিয়া ভাইরাল হলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্যামেরার সামনে তরুণ সমর্থক বলেন, “সমর্থন তো করবোই। ২০১০ সাল থেকে ক্রিকেট দেখছি। ভারকেই সমর্থন করে এসেছি। তার মানে অন্ধভক্তি দেখাতে হবে, তা তো হতে পারে না। নিজের অর্থ, সময়-সবকিছুই তো বিনিয়োগ করছি। রাগ হওয়া স্বাভাবিক নয় কি?”
ওভালে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন জনৈক সমর্থক-
দেশে তারকা বন্দনার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। খানিকটা একই সুর শোনা গেলো যুবকের গলাতেও। তাঁকে ফাইনালে বিরাট কোহলির পারফর্ম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক। উত্তরে যুবক বলেন, “দেখুন বিরাটের জন্য আমি পোস্টার বানিয়ে এনেছিলাম। বিরাট আমাদের সকলের প্রিয় খেলোয়াড়। কিন্তু সমালোচনার ঊর্দ্ধে কেউ নয়। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের নক-আউট ম্যাচে পারফর্ম্যান্স শোচনীয়। কালেভদ্রে কোনো ভালো ইনিংস খেলেন। আজকেও পঞ্চম-ষষ্ঠ স্টাম্পের বল তাড়া করতে গিয়ে বিরাট উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন। ২০১৪ থেকে একই জিনিস চলে আসছে। আইপিএলে জোড়া শতরান করে এখানে এসে ব্যর্থ হলে কি করে চলবে?”
আইপিএল নাকি ভারতীয় দল? প্রশ্ন তুলেছেন রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। সেই সুরে সুর মিলয়ে যুবকের প্রশ্ন, “আমাদের ক্রিকেটারদের যে কোনো একটা বেছে নিতেই হবে। আইপিএলের সমালোচনা করছি না, তবে কি হত যদি বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ের জার্সিতে দুটো ম্যাচ কমই খেলতেন বিরাট –রোহিত’রা? অর্থই কি প্রধান? আইপিএলের আগমনে লাভটা কি হয়েছে? ২০০৭-এর পর একবারও টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত? আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে কি এতই প্রতিভার অভাব যে একজন ভালো টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে না? সরফরাজ খান নিয়মিত রান করেও বাইরে। (অভিমণ্যু) ঈশ্বরনের জায়গা হচ্ছে না। কিন্তু আইপিএলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ঈশান কিষণ, অজিঙ্কা রাহানেরা দলে জায়গা পাচ্ছেন। রাহানে অবশ্যই ভালো খেলেছেন। তাঁকে দোষ দিচ্ছি না। তবে আমাদের আইপিএলের থেকে আগেও তো তাকাতে হবে।”
দেখে নিন সেই ভাইরাল ভিডিওটি-
Tight slap from a Fan to @BCCI & @JayShah @imVkohli @ImRo45 sir, @AmitShah @Sunil_Gavaskar @RaviShastriOfc @bhogleharsha every fan has the same feeling today. pic.twitter.com/rN3sCUpCqf
— 2Legit2fun (@indian_chokru) June 11, 2023