wriddhiman-saha-returns-to-bengal

২০২১ সালে ভারতের হয়ে শেষবার টেস্ট খেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘাড়ে চোট নিয়েও লড়াকু অর্ধশতক করেছিলেন অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। কিন্তু তারপর আর খোলে নি জাতীয় দলের দরজা। ঋদ্ধিকে (Wriddhiman Saha) সরানোর পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। বয়সের দোহাই দিয়ে বঙ্গসন্তানকে ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। দস্তানা হাতে তাঁর দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স ও অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট ছিলো না দ্রাবিড়ের কাছে। তিনি চেয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের কোণা শ্রীকার ভরতকে (KS Bharat)। পরবর্তী দুই-তিন বছরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। আহত হয়েছেন ঋষভ পন্থ, চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন ভরত। তবুও উইকেটরক্ষক হিসেবে নিজের জায়গা আর ফিরে পান নি ঋদ্ধিমান সাহা।

জাতীয় দল থেকে ঋদ্ধিমানের (Wriddhiman Saha) বাদ পড়া থেকে গিয়েছে এক বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে। জনৈক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি। মুখ খুলেছিলেন দ্রাবিড়ের আচরণ নিয়েও। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনাতেও তীব্র অশান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো তাঁকে। তখন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। তিনি নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারতীয় দলে থাকবেন ঋদ্ধিমান। তাঁর বিপক্ষেও তোলেন কথা না রাখার অভিযোগ। কঠিন সময়ে বাংলার ক্রিকেট কর্মকর্তারা তাঁর পাশে দাঁড়ান নি বলেই মনে হয়েছিলো ঋদ্ধি’র। উলটে কয়েকজন প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে। অভিমানী ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha) দেড় দশকের সম্পর্ক চুকিয়ে ছেড়েছিলেন বাংলা ড্রেসিংরুম।

Read More: বিরাটের সাথে ‘গদ্দারি’ করবেন গম্ভীর, নিজের রেকর্ড রাখতে চাইবেন অক্ষত !!

ত্রিপুরা ছেড়ে বাংলায় ফিরছেন ঋদ্ধিমান-

Wriddhiman Saha and his wife with Sourav Ganguly | Image: Twitter
Wriddhiman Saha and his wife with Sourav Ganguly | Image: Twitter

দুই বছর আগে সিএবি’র কিছু কর্মকর্তার সাথে মনোমালিন্যে বাংলা দল ছেড়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। যোগ দিয়েছিলেন ত্রিপুরা’তে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যের হয়েই গত দুই মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনায় দেখা গিয়েছিলো তাঁকে। নির্বাচিত হয়েছিলেন অধিনায়ক’ও। কিন্তু কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে ফের একবার ঘরে ফেরার সিদ্ধান্তই নিলেন তিনি। প্রত্যাবর্তন পর্বের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। তাঁকে ফেরানোর জন্য মরিয়া ছিলেন সঞ্জয় দাস, স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত সিএবি কর্তারা। বরফ গলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)। এক সময় দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো বাংলার ক্রিকেটের দুই আইকনের মধ্যে। কিন্তু ‘ইগো’ ভুলে এগিয়ে আসেন মহারাজ। মে মাসের শেষের দিকে ঋদ্ধি ও তাঁর স্ত্রী রোমি মিত্রের সাথে বৈঠক হয় তাঁর। জটিলতা কেটেছিলো সেই বৈঠকেই।

ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) যে ত্রিপুরা ক্রিকেট সংস্থার কাছে ছাড়পত্র বা এনওসি চেয়েছেন তা আগেই জানিয়েছিলেন কর্মকর্তা জয়ন্ত দে। এবার দলবদলের খবরে সিলমোহর দিলেন খোদ ক্রিকেটতারকা স্বয়ং। সংবাদসংস্থা ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “প্রায় ১৫ বছর পশ্চিমবঙ্গ (বাংলা) ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার পর আমি দুই বছর ত্রিপুরার হয়ে খেলেছি। বর্তমানে আমি আবার পশ্চিমবঙ্গ (বাংলা) দলে ফিরেছি…উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে। আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে দলকে বড় টুর্নামেন্টগুলিতে চ্যাম্পিয়ন করার চেষ্টা করবো।” বাংলার জার্সিতে একাধিক রঞ্জি ফাইনাল খেললেও খেতাব জিততে পারেন নি ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha)। তাঁর ‘বাকেট লিস্ট’-এ যে রঞ্জি জয় থাকবে তা বলাই বাহুল্য।

ঋদ্ধির প্রত্যাবর্তনে খুশি CAB-

Wriddhiman Saha | Image: Getty Images
Wriddhiman Saha | Image: Getty Images

সৌরভঁ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) পর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার মুখ ঋদ্ধিমান সাহা ও মহম্মদ শামি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ায় দীর্ঘ সময় বাংলার জার্সিতে দেখা যায় নি শামি’কে। দুই বছর আগে ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha) দল ছাড়ায় আরও জৌলুস হারিয়েছিলো দল। অবশেষে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ফেরায় খুশির হাওয়া সিএবি’র অন্দরে। সংস্থার প্রধান স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, “আমি খুব খুশি ঋদ্ধিমান সাহা বাংলায় ফিরে আসায়। ও ভারতের হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলেছে। ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটারদের মধ্যে ও একজন। যখন ঋদ্ধিমান সাহা মাঠে নামে, ও সর্বদা নিজের ২০০ শতাংশ দেয়। আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে ফোকাস করছি। আমাদের দল এবার বেশ ভালো।”

‘ঘরে’ ফিরে ক্রিকেট ও কেরিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha) স্বয়ং। সদ্য অবসর নিয়েছেন মনোজ তিওয়ারি। তাঁর হাত থেকে বাংলা ক্রিকেটের নেতৃত্বের ব্যাটন তিনি হাতে তুলে নেবেন? প্রশ্নের উত্তরে তিনি মনোজের ক্রিকেটীয় দক্ষতার তারিফ করেছেন। এছাড়া দলে উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের ভূমিকা কি সে সম্পর্কেও মুখ খুলতে শোনা গিয়েছে শিলিগুড়ি’র পাপালি’কে। ঋদ্ধি জানিয়েছেন, “আমি নতুনদের সবসময় এগিয়ে দিতে চাইবো।” এই মুহূর্তে টিম ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে খেলার কোনো পরিকল্পনা যে তাঁর নেই তাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত গত তিন মরসুম গুজরাত টাইটান্সের হয়ে আইপিএল (IPL)খেলেছেন তিনি। ২০২৫-এ সম্ভবত নতুন দলের সন্ধান করতে হবে তাঁকে।

দেখে নিন ঋদ্ধিমানের সাক্ষাৎকার-

Also Read: ভারত ত্যাগ শ্রেয়সের, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন কানাডার জার্সি গায়ে !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *