ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কে? যে কোনো ক্রিকেট ক্যুইজে প্রশ্নটা এলেই নির্দ্বিধায় উত্তরদাতা বলবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি’র (MS Dhoni) নাম। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক কে? মুহূর্তের জন্য হলেও দ্বিধার সম্মুখীন হতে পারেন উত্তরদাতা। ঝাড়খণ্ডের মাহি’কে টক্কর দিয়ে দৌড়ে জায়গা করে নিতে পারেন শিলিগুড়ির ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। ধোনির উত্তরসূরি হিসেবেই জায়গা পেয়েছিলেন টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট স্কোয়াডে। কিংবদন্তির অবসরের পর স্বকীয় দস্তানায় আপন করে নিয়েছিলেন দস্তানাকে। কখনও থেনিয়াস দে ব্রুইনের ক্যাচ ধরেছেন প্রায় লেগস্পিন অবধি উড়ে গিয়ে। আবার কখনও স্লিপে দাঁড়ানো কোহলি-রাহানেদের অবাক করে তাঁদের নাকের ডগা থেকে দস্তানাবন্দী করেছেন লাল রঙের চর্মগোলককে। দস্তানা হাতে তাঁর দক্ষতাই ঋদ্ধিমানকে (Wriddhiman Saha) করে তুলেছিলো ক্রিকেটের ‘সুপারম্যান।’
Read More: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ জসপ্রীত বুমরাহ, গম্ভীরের ‘তুরুপের তাস’ নেবেন এন্ট্রি !!
যোগ্য সম্মান পান নি ঋদ্ধিমান সাহা-
২০০৭ সালে বাংলার জার্সিতে শুরুটা করেছিলেন ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha)। সাদা বলের দুই ফর্ম্যাট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সবশেষে খেলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। তিনি যে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন পাপালি। রঞ্জি অভিষেকে তারকাখচিত হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধেই করেছিলেন শতরান। এরপর যত দিন এগিয়েছে ততই বঙ্গক্রিকেটের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছেন ঋদ্ধিমান। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবসরের পর জাতীয় দলে বাংলার কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না বেশ কয়েক বছির। ঋদ্ধির (Wriddhiman Saha) উত্থানে সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছিলো। তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো আচমকাই। ২০১০-এ নাগপুরের মাঠে ‘মেন ইন ব্লু’র নীল টুপি মাথায় চাপানোর কথা ছিলো রোহিত শর্মা’র। কিন্তু অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পান তিনি। তাঁর বদলে প্রথম একাদশের দরজা খুলে গিয়েছিলো বাংলার তারকা উইকেটরক্ষকের সামনে।
টিম ইন্ডিয়াতে ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha) নিয়মিত হয়ে উঠেছিলেন ধোনির অবসরের পরে। ঋষভ পন্থের আগমনের আগের সময়কালে স্টাম্পের পিছনে তিনিই নির্ভরতা যুগিয়েছেন দেশকে। এমনকি ব্যাট হাতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিক স্মরণীয় ইনিংস রয়েছে তাঁর। ঋদ্ধিমানের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে দাঁড়ি টানেন রাহুল দ্রাবিড়। বয়সের অজুহাত দিয়ে ২০২১-এর নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর ছেঁটে ফেলেন বঙ্গতারকাকে। জায়গা করে দেন নিজের পছন্দের কে এস ভরতকে। ঋদ্ধির শূন্যতা ঢাকতে পারেন নি তিনি। ২০২৩-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে উইকেটরক্ষকের প্রয়োজন ছিলো ভারতের। তবুও ফর্মে থাকা ঋদ্ধিকে (Wriddhiman Saha) ফেরানো হয় নি। কোচের পক্ষপাতের শিকার হয়েও বিতর্কের পথে হাঁটেন নি ‘সুপারম্যান’ সাহা। অভিমান বুকে নিয়েই ফিরে এসেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে।
ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন ঋদ্ধিমান সাহা-
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরেও ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে দাপটের সাথে পারফর্ম করে গিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। বাংলা কর্মকর্তাদের সাথে বিরোধের কারণে একটা সময় যোগ দিয়েছিলেন ত্রিপুরায়। ২০২৪-২৫ মরসুমের আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে আলোচনার পর ফিরে আসেন নিজের রাজ্য। ৪০ পেরোনো ‘তরুণ’ জানিয়ে দিয়েছিলেন এবারই বুট জোড়া তুলে রাখবেন তিনি। অবশেষে বিদায়ের মাহেন্দ্রক্ষণ এলো ২০২৫-এর গোড়ায়। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ ইডেন কেরিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে রান পান নি। শূন্য করেই ফেরেন সাজঘরে। প্রতিপক্ষ উইকেটরক্ষকের একটি দুর্দান্ত ক্যাচেই বাইশ গজের ইনিংসে দাঁড়ি পড়ে দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষকের। কেরিয়ারে ১৫০০০ হাজারের বেশী রান, গ্লাভস হাতে ৮৩১ শিকার, অসংখ্য সুখস্মৃতি আর খানিক বঞ্চনাকে সাথে নিয়েই সরে দাঁড়ালেন ঋদ্ধিমান।