বাংলার ক্রিকেটে নক্ষত্রপতন। বর্ণময় কেরিয়ারে অবশেষে ইতি টানতে চলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর দীর্ঘ সময় ভারতীয় দলে ব্রাত্য ছিলেন বাংলার ক্রিকেটাররা। শিলিগুড়ি’র ঋদ্ধির হাত ধরেই ভেঙেছিলো সেই শৃঙ্খল। ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও চার বছর। ২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি’র অবসরের পর দস্তানা হাতে দলের ভরসা ছিলেন তিনিই। ২০১৮তে ঋষভ পন্থের উত্থানের পর বিদেশের মাঠে রিজার্ভ বেঞ্চে জায়গা হয়েছিলো তাঁর। ২০২১-এ রাহুল দ্রাবিড় কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে জাতীয় দল থেকে ছিটিকে গিয়েছিলেন ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha)। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে নিয়মিত দেখা যেত তারকা উইকেটরক্ষক’কে। কিন্তু ৪০ পেরোনোর পর বাইশ গজ’কে বিদায় জানানোর কথাই জানালেন তিনি।
Read More: IND vs NZ: ঘরের মাঠে লজ্জার হার টিম ইন্ডিয়ার, ক্রিকেটারদের শাস্তি দেওয়ার পথে BCCI !!
ঋদ্ধিমান সাহা’র কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবার লিস্ট-এ ক্রিকেটে বাংলার হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। ঐ বছরের এপ্রিলে অভিষেক হয় টি-২০তে, আর নভেম্বরে খেলেন প্রথম রঞ্জি ম্যাচ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই শতরান করে চমক দিয়েছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় বঙ্গক্রিকেটের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন তিনি। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে কর্মকর্তাদের সাথে বিবাদের জেরে নাম লিখিয়েছিলেন ত্রিপুরা দলে। কিন্তু চলতি মরসুমেই বাংলায় ফিরে এসেছেন তিনি। কেরিয়ারের শেষটা করতে চলেছেন বাংলার হয়েই। ১৩৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭০১৩ রান রয়েছে তাঁর। গড় ৪১.৭৪। শতরানের সংখ্যা ১৪, অর্ধশতক ৪৩টি। ইরানী কাপের ফাইনালে দ্বিশতক’ও করেছেন তিনি। লিস্ট-এ’তে তাঁর সংগ্রহ ১১৬ ম্যাচে ৩০৭২ রান। ২৫৫টি টি-২০ ম্যাচে করেছেন ৪৬৫৫ রান। আইপিএল ফাইনালে শতরান করার বিরল নজির রয়েছে তাঁর।
২০১০-এ রোহিত শর্মা চোট পাওয়ায় আচমকাই টেস্ট অভিষেকের সুযোগ চলে আসে ঋদ্ধিমানের (Wriddhiman Saha) সামনে। পরবর্তী এগারো বছর জাতীয় স্কোয়াডের অংশ ছিলেন তিনি। দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। ২৯.৩১ গড়ে করেছেন ১৩৫৩ রান। ৩টি শতরান’ও রয়েছে তাঁর। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বিদেশের মাঠে তিন অঙ্কের মাইলস্টোন স্পর্শ করার নজিরও রয়েছে। ভারতীয় উইকেটরক্ষকদের মধ্যে শতকের সংখ্যার নিরিখে ঋষভ পন্থ (৬) ও মহেন্দ্র সিং ধোনি’র (৬) পরেই রয়েছেন ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha)। অর্ধশতকের সংখ্যা ৬। টেস্টে তিনি ৯২টি ক্যাচ ও ১২টি স্টাম্পিং করেছেন। ভারতীয় দলের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছেন তিনি। ২০১০-এর নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হয় ওডিআই অভিষেক। ৯ টি একদিনের ম্যাচ খেললেও ১৩.৬৬ গড়ে কেবল ৪১ রানই করতে পেরেছেন তিনি।
ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন ‘সুপারম্যান’-
উইকেটের পিছনে তাঁর বাজপাখির ক্ষিপ্রতা কারণে ঋদ্ধিমানকে (Wriddhiman Saha) অনুরাগীরা ডাকতেন সুপারম্যান বলে। শরীর শূন্যে ছুঁড়ে এক হাতে ক্যাচ দস্তানাবন্দী করা থেকে নো-লুক রান-আউট, কিপার ঋদ্ধিমান বারবার নজর কেড়ে নিয়েছেন ক্রিকেট মাঠে। ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষকদের তালিকায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে রাখেন প্রথম দুই বা তিনের মধ্যে। আজ নিজের এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার) অ্যাকাউন্টে বাংলা দলের সতীর্থদের সাথে একটি ছবি পোস্ট করে নিজের অবসরের ঘোষণা করেছেন তিনি। ঋদ্ধি লিখেছেন, “ক্রিকেটে একটা দুর্দান্ত যাত্রাপথ পেরিয়ে আসার পর এই মরসুমটাই আমার শেষ মরসুম হতে চলেছে। অবসরের আগে শেষবার বাংলা’র প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। এই মরসুমটাকে স্মরণীয় করে রাখা যাক।” আইপিএল জিতেছেন ঋদ্ধি, জিতেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও অনেক ট্রফি। কিন্তু রঞ্জি এখনও অধরা তাঁর, শেষ মরসুমে সেই আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলতে চান তিনি।
দেখুন ঋদ্ধিমানের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট-
After a cherished journey in cricket, this season will be my last. I’m honored to represent Bengal one final time, playing only in the Ranji Trophy before I retire. Let’s make this season one to remember! pic.twitter.com/sGElgZuqfP
— Wriddhiman Saha (@Wriddhipops) November 3, 2024