World Cup 2023: দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লড়াইয়ের আসর এবার বসবে ভারতের মাটিতে। এর আগে ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ সালে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলির সাথে আয়োজনের মঞ্চ ভাগ করে নিতে হয়েছিলো ভারতকে। প্রথমবারের জন্য আয়োজক হিসেবে একক দায়িত্ব পেয়েছে বিসিসিআই। অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে নভেম্বরের ১৯ তারিখ অবধি চলার কথা রয়েছে এই প্রতিযোগিতার। দেশের মাটিতে টুর্নামেন্টকে সাফল্যমণ্ডিত করার প্রচেষ্টায় এখন থেকেই ব্যপৃত ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ১২ শহরকে। উদ্বোধনী ম্যাচ এবং ফাইনাল আয়োজনের দায়িত্ব পাচ্ছে আহমেদবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে-হায়দ্রাবাদ, ধর্মশালা, কলকাতা, দিল্লী, মুম্বই, চেন্নাই, ইন্দোর, রাজকোট, লক্ষ্ণৌ, বেঙ্গালুরু এবং গুয়াহাটি’কে। ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে স্টেডিয়ামগুলির আধুনিকীকরণের কাজে।
২০১১ সালে শেষ যখন বিশ্বকাপের আসর বসেছিলো ভারতের মাটিতে, তখন মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে খেতাব জিতে নিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। মাঝে ২০১৫ এবং ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো তাদের। ১২ বছরের ব্যবধানে ট্রফিকেও দেশে ফেরাতে চাইছে ‘মেন ইন ব্লু।’ সেই লক্ষ্য নিয়ে চলছে প্রস্তুতিও। সেরা একাদশ বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে বিসিসিআই। ইতিমধ্যেই উইন্ডিজ সফরের জন্য যে একদিনের দল ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে যশস্বী জয়সওয়াল। ঋতুরাজ গায়কোয়াড়দের মত তরুণ মুখেদের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশ্বকাপের দলেও থাকবেন তাঁরা। ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রাক্কালে বারবার ক্রীড়ামোদি জনতার মুখে ঘুরছে গত বছরের ফিফা বিশ্বকাপের কথা। ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে যেভাবে স্কিলের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আর্জেন্তিনার ট্রফিখরা কাটিয়েছিলেন লিওনেল মেসি, ভারতেরও ট্রফি খরা কাটাতে তেমন একজন মেসির (Lionel Messi) খোঁজে সমর্থকেরা। যাঁর মধ্যে সেই দক্ষতা আছে বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি বিরাট কোহলি (Virat Kohli)।
Read More: WC 2023: বিশ্বকাপের জন্য এই ১০ ভেন্যু বেছে নিলো BCCI, ইডেনে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে এই দল !!
শেষ বিশ্বকাপ রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন মেসি-
রোজারিও’র সান্তা ফে থেকে বিশ্বের জনপ্রিয়তম ক্রীড়াবিদদের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার পথটা সহজ ছিলো না লিওনেল মেসির (Lionel Messi) কাছে। গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভুগতে থাকা লিও মাত্র ১৩ বছর বয়সে দেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউরোপে। সেখানে বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে বেড়ে ওঠা তাঁর। ‘ব্লাউগ্রানা’ জার্সিতে একের পর এক ট্রফি জিতলেও দেশের জার্সিতে খেতাব জয়ের স্বপ্ন স্পর্শ করা আর হচ্ছিলো না তাঁর। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিলো। এরপর ২০১৫ এবং ১৬ সালের কোপা আমেরিকাতেও ফাইনালে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাঠে আর্জেন্তিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন মেসি (Lionel Messi)। কিন্তু শেষমেশ কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব আর দূর হয়। জার্মানির বিরুদ্ধে ১-০ হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়েছিলো হতাশায়। এছাড়াও মেসিকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলো দিয়েগো মারাদোনার ছায়া। ১৯৮৬ সালে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন মারাদোনা (Diego Maradona)। দীর্ঘ সময় ট্রফির স্বাদ না পাওয়া আর্জেন্তাইন জনতার কাছে তাই মেসি রয়ে গিয়েছিলেন ‘ভালো’ খেলোয়াড়দের পঙক্তিতে। ‘সেরার সেরা’র আসন ছিলো মারাদোনার জন্যই।
২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮-চার বারের প্রচেষ্টাতেও দলকে বিশ্বকাপ সেরা করতে না পারা মেসি (Lionel Messi) জানিয়েই দিয়েছিলেন ২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপ তাঁর কেরিয়ারের শেষ হতে চলেছে। ২০২১ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ফিনালিসিমা জয়ী আর্জেন্তিনা অধিনায়ক দেশের জার্সিতে ক্যাবিনেট শূন্য থাকার অপবাদটা ঘুচিয়ে নয়া উদ্যমকে সঙ্গী করে পৌঁছেছিলেন কাতার। ফুটবলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ স্পর্শ করে দেশের জনতার মনে মারাদোনার পাশে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে নেমেছিলেন লুসেইল স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে। প্রথম ম্যাচে তুলনামূলক দুর্বল সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হেরে চাপে পড়েছিলো আর্জেন্তিনা। কিন্তু নিজের শেষ বিশ্বকাপে অত সহজে লড়াই থেকে পিছু হটতে রাজী ছিলেন না মেসি (Lionel Messi)। মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়া-একের পর এক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে দলকে তুলে আনেন ফাইনালে। খেতাবী লড়াইতেও দুই গোল করেন তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের পর অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয় টাইব্রেকারে। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ আর্জেন্তিনার ঘরে নিয়ে আসেন তিনি। জার্সিতে যোগ হয় আরও একটি তারা।
মেসি হয়ে ওঠার লড়াই বিরাটের-
২০২২-এর লিওনেল মেসির (Lionel Messi) গল্পের সাথে বিস্তর অমিল রয়েছে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) কেরিয়ারের। কাতারের আগে কখনও বিশ্বকাপ জেতেন নি মেসি। ২০১৪ সালে ফিরতে হয়েছিলো ফাইনাল ম্যাচ হেরে। সেখানে ইতিমধ্যেই ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছেন কোহলি। অমিল যেমন রয়েছে তেমন মিলও রয়েছে বিস্তর। আর্জেন্তিনাকে বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৬ বছর। ভারতের শেষ বিশ্বকাপ জয়ের পর অত দীর্ঘ সময় না পেরোলেও শেষ বারো বছর অপেক্কাতেই কাটছে ভারতবাসীর। আইসিসি প্রতিযোগিতাতে সাফল্য নেই ১০ বছর হলো। দেশের মাটিতে উদযাপনের লক্ষ্যে সমর্থকেরা। কাতার বিশ্বকাপের সময় মেসির (Lionel Messi) বয়স ছিলো ৩৫। জানিয়ে দিয়েছিলেন ২০২২-এর পর আর বিশ্বমঞ্চে মাঠে নামবেন না। প্রায় একই কথা বলা যায় কোহলির (Virat Kohli) ক্ষেত্রেও। ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালীন ৩৫ বছরে পা দেবেন কোহলিও। এর পরের বিশ্বকাপে তাঁর বয়স হবে ৩৯। সম্ভবত মাঠে তখন আর দেখা যাবে না তাঁকে। তাই হয়ত এটাই বিশ্বকাপ জেতার শেষ সুযোগ তাঁর সামনে।
মারাদোনার ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে জায়গা করে নিতে কাতারে রূপকথা লিখতে হয়েছিলো মেসিকে। একই কথা প্রযোজ্য বিরাট কোহলির ক্ষেত্রেও। আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে একের পর এক রেকর্ড গড়লেও ভারতীয় জনমানসে আজও শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) জায়গা তিনি নিতে পারেন নি। ২০১১-র যে বিশ্বকাপ ভারত জিতেছিলো তাতেও বিশাল অবদান রেখেছিলেন শচীন। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে মানুষ মনে রাখবে মেসি’র বিশ্বকাপ হিসেবে। পূর্বসূরি শচীনের ছায়া থেকে বেরিয়ে বিরাটও চাইবেন সম্ভবত জীবনের শেষ বিশ্বকাপ’কে ‘বিরাট কোহলি’র বিশ্বকাপ’ নামে পরিচিত করে যেতে।