World Cup 2023: চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ভারত বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) যাত্রা শুরু করেছিলো ৮ অক্টোবর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে বেকায়দায় পড়া দলকে সেদিন ব্যাট হাতে উদ্ধার করেছিলেন বিরাট কোহলি এবং কে এল রাহুল। স্বপ্নের যে বুদ্বুদ সেদিন থেকে তৈরি হতে শুরু হয়েছিলো ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তা অক্ষত ছিলো সেমিফাইনালের পরেও। গ্রুপ পর্বের নয়টি খেলা এবং শেষ চারের ম্যাচ মিলিয়ে টানা দশবার প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছিলো রোহিত শর্মার দল। শেষ বাধাটুকুও নিজেদের দুর্দান্ত ছন্দ বজায় রেখে পেরিয়ে যাবে ভারত, ভেবে নিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু সাফল্যের সপ্তম স্বর্গ থেকে নিমেষে ভারতকে আছড়ে পড়তে হলো বাস্তবের রুক্ষ জমিতে। যে অজিদের হারিয়ে দাপুটে দৌড়ের শুরুয়াতটা হয়েছিলো, তাদের বিরুদ্ধে হেরেই দৌড় শেষ হলো টিম ইন্ডিয়ার। আঁধার নামলো দেশের ক্রিকেটমহলে।
টসভাগ্য গতকাল ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তারা। রোহিতের প্রাথমিক ঝড় রবিবারও দেখা গেলো। কিন্তু শুভমান শুরুতেই ফেরায় বাইশ গজে আর জাঁকিয়ে বসা হয় নি টিম ইন্ডিয়ার ওপেনিং জুটির। ভারত অধিনায়কও ফেরেন ৪৭ করে। কোহলি, রাহুলের জোড়া অর্ধশতক সত্ত্বেও ২৪০ রানের বেশী এগোয় নি টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস। রান তাড়া করতে নেমে একটা সময় ৪৭ রানের মধে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলো অস্ট্রেলিয়াও। কিন্তু চাপ বয়াজ্য রাখতে পারেন নি ভারতীয় বোলাররা। শামি-বুমরাহ সরে যেতেই ব্যাটিং সহজ হয়ে পড়ে মার্নাস লাবুশেন এবং ট্র্যাভিস হেডের জন্য। শেষমেশ তাঁদের দুর্দান্ত ১৯২ রানের জুটি বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়ার। গতকালের ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে স্নায়ুর চাপ, ফিল্ডিং ব্যর্থতার পাশাপাশি ভারতের হারের অন্যতম কারণ হার্দিক পান্ডিয়ার না থাকা।
Read More: World Cup 2023, IND vs AUS, Final, Highlights: সবরমতীর তীরে স্বপ্নভঙ্গ, অস্ট্রেলীয় আগ্রাসনে বিশ্বকাপ হাতছাড়া টিম ইন্ডিয়ার !!
ফাইনালে হার্দিকের অভাব অনুভব করলো ভারত-

ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে ব্যাট হাতে বিশেষ কিছু করার সুযোগ মেলে নি। কিন্তু বোলিং-এ টিম ইন্ডিয়াকে ভরসা যুগিয়েছিলেন তিনি। সেই বোলিং করার সময়েই হলো বিপত্তি। বাংলাদেশ ম্যাচে দুই ফ্রন্টলাইন পেসার বুমরাহ ও সিরাজ শুরুতে সুবিধা করতে না পারায় হার্দিককে প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই বোলিং-এ নিয়ে এসেছিলেন অধিনায়ক রোহিত। মাত্র ৩ বল স্থায়ী হয় তাঁর স্পেল। লিটন দাসের স্ট্রেট ড্রাইভ নিজের বোলিং-এর ফলো থ্রু’তে পা দিয়ে রুখতে গিয়েছিলেন হার্দিক। পারেন নি। বরং গোড়ালিতে আঘাত পান। মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। এরপর আর খেলা হয় নি বিশ্বকাপ। তাঁর বদলে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে স্কোয়াডে সামিল করে ভারত। হার্দিকের অভাব ঢাকতে বোলিং-এ মহম্মদ শামি এবং ব্যাটিং-এ সূর্যকুমার যাদবকে নিয়মিত খেলাতে হয় বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলি।
বল হাতে কামাল করেছেন শামি। ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন। কিন্তু ব্যাটিং-এ হার্দিকের অভাব ঢাকতে মোটেই পারেন নি সূর্যকুমার। ফাইনালেও হার্দিকের না থাকা বড় সমস্যা হয়ে দেখা গেলো টিম ইন্ডিয়ার জন্য। শেষের ওভারগুলিতে ক্রিজে ছিলেন সূর্য’ই। বড় শট মারার যেন প্রয়াসই করলেন না তিনি। ফলে এগোলো না ভারতীয় স্কোরবোর্ড’ও। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল বা ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে রুখে দাঁড়ানোর নজির রয়েছে হার্দিকের। চেনা আহমেদাবাদের পিচে তিনিই যে উন্নততর বিকল্প হতেন তা নিশ্চিত। বোলিং-এ শুরুর ওভারগুলোতে বুমরাহ-শামি চাপে রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু তাঁদের স্পেল শেষ হতে সহজ হয়ে যায় অজিদের পক্ষে ব্যাটিং। শিশিরে ভেজা বলে কার্যকরী হতে পারেন নি কুলদীপ-জাদেজারা। সেক্ষেত্রে হার্দিকের গতি ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারত বলে মত বিশেষজ্ঞদের।