World Cup 2023: ভারতকে থামানো যাচ্ছে না। চেন্নাইতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় এসেছিলো ৬ উইকেটের ব্যবধানে। এরপর আফগানিস্তানকে দিল্লীর মাঠে ভারত হারিয়েছিলো ৮ উইকেটে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের বিপক্ষে আহমেদাবাদের বাইশ গজে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) দল জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলো ৭ উইকেটে। আজও জয়ের ব্যবধান একই রইলো। শুধু বদলে গেলো মঞ্চ, বদলে গেলো প্রতিপক্ষের নাম। পাকিস্তানের পর আজ বাংলাদেশকে দুমড়ে দিয়ে এগিয়ে চললো টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অশ্বমেধের ঘোড়া। চলতি বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) এই নিয়ে চার ম্যাচ খেললো ভারত। চার ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় ও ৮ পয়েন্ট সঙ্গী করে লীগতালিকায় মগডাল থেকে মাত্র এক ধাপ নীচে ‘মেন ইন ব্লু।’ পয়েন্ট এক হলেও নেট রান রেটে এগিয়ে কিউইরা। ২২ তারিখ ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই নির্ধারিত হয়ে যাবে কে জাঁকিয়ে বসবে শীর্ষস্থানে।
শাকিব আল হাসানের বদলে আজ বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন তিনি। দুই ওপেনার তামিম এবং লিটনের জোড়া অর্ধশতকের সুবাদে শুরুটা ভালো হয়েছিলো বাংলাদেশের। মাঝের ওভারে খানিক মুখ থুবড়ে পড়লেও শেষবেলায় মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ’র ইনিংস তাদের ২৫৬ অবধি পৌঁছে দেয়। রান তাড়া করতে নেমে যে ভাবে সূচনা করেছিলেন রোহিত ও শুভমান-তাতে ২৫ ওভারের মধ্যেই ভারতের জয় নিশ্চিত মনে হচ্ছিলো। দুই ওপেনার আউট হওয়ায় ভারতের রান গতিতে খানিক শ্লথতা আসে। মাঝের ওভারগুলিতে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ক্যারিশমায় ভারত এক মুহূর্তের জন্যও অবশ্য ফেভারিটের আসন থেকে সরে নি। ইনিংসের শেষভাগে এসে গিয়ার বদলান কোহলি। নাসুম আহমেদকে ছক্কা মেরে সম্পূর্ণ করেন নিজের শতরান। ৫১ বল বাকি থাকতেই ভারতকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়।
Read More: World Cup 2023: কিং কোহলির ‘বিরাট’ শতরানে বাংলাদেশ বধ ভারতের, টানা চার ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের পথে রাস্তা হল পাকা !!
১) জমজমাট শুরু বাংলাদেশের-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি গত কয়েকটি ম্যাচে জন্ম দিয়েছিলো বেশ কিছু প্রশ্নের। আজ পুনের মাঠে অবশ্য বেশ ভালো ব্যাটিং করতে দেখা গেলো তানজিদ হাসান তামিম এবং লিটন দাস’কে। জসপ্রীত বুমরাহ এবং মহম্মদ সিরাজের বিরুদ্ধে শুরুটা বেশ সাবধানী ভঙ্গিতেই করেছিলেন দুজনে। প্রথম পাঁচ ওভারে ওঠে মাত্র ১০ রান। ক্রিজে খানিক থিতু হওয়ার পরেই হাত খোলেন দুজনে। পরের পাঁচ ওভার থেকে এলো ৫৩ রান। বুমরাহ’কে খানিক সমীহ করলেও সিরাজের বিরুদ্ধে বড় শটেই আস্থা রাখতে দেখা গেলো বাংলাদেশ ওপেনারদের। সাফল্যের সন্ধানে হার্দিক ও শার্দুলের হাতেও প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত। কিন্তু উইকেট আসে নি।
২) চোটের ধাক্কায় বাইরে হার্দিক পান্ডিয়া-

নবম ওভারে সহ-অধিনায়ক হার্দিককে বোলিং করতে ডেকেছিলেন রোহিত। গত ম্যাচে ইমাম উল হকের উইকেট তুলে ভারতকে জুটি ভাঙতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। আজ পারলেন না। মাত্র তিনটি বলই করতে পারেন তিনি। প্রথম বলে ১ রান হয়। দ্বিতীয় বলে লিটন দাস বাউন্ডারি হাঁকান। তৃতীয় বলে স্ট্রেট ড্রাইভ করেছিলেন লিটন। পা বাড়িয়ে বাঁচানোর প্রয়াস ছিলো হার্দিকের। কিন্তু সফল হন নি তিনি। বরং ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট পান। খানিক চিকিৎসার পরেও রান আপে ফেরা হয় নি তাঁর। মাঠ ছাড়েন হার্দিক। ওভারের শেষ তিন বল করেন বিরাট কোহলি। ২ রান খরচ করেন তিনি।
৩) ১৫তম ওভারে ভাঙলো ওপেনিং জুটি-
তানজিদ তামিম এবং লিটন দাস একটা সময় বাংলাদেশকে বসিয়েছিলেন চালকের আসনে। দেখতে দেখতে একশত রানের দিকে এগোচ্ছিলো তাঁদের ওপেনিং জুটি। স্কোরবোর্ডে ৩০০’র স্বপ্ন’ও দেখতে শুরু করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সমর্থকেরা। টাইগারদের ইনিংসের গতিরোধ করেন কুলদীপ যাদব। ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে তানজিদ তামিম’কে ফেরান ভারতীয় চায়নাম্যান বোলার। ৪৩ বলে ৫১ রান করে থামেন তামিম। আজ থেকে বছর ১৬ আগে, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের নতুন তামিম’ও আজ থামেন ৫১ রানেই।
৪) ভারতীয় বোলিং বিক্রমে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ মধ্যক্রম-

প্রথম উইকেটের পতনের পর ধীরে ধীরে ম্যাচের পাল্লা বাংলাদেশের থেকে ভারতের দিকে ঝুঁকতে থাকে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে নাজমুল হোসেন শান্ত থামেন ৯ রান করে। চারে নামা মেহদী হাসান মিরাজকে ফেরান সিরাজ। দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন কে এল রাহুল। জাদেজার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন লিটন। ৬৬ রান করেন তিনি। ৩৫ বলে ১৬ রানের বেশী করতে পারেন নি তৌহিদ হৃদয়’ও। শাকিবের পরিবর্ত হিসেবে পাঁচে ব্যাট করেন তিনি, কিন্তু ব্যর্থ হলেন। শার্দুল ঠাকুরের শিকার হন তিনি।
৫) মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহ’র সুবাদে সম্মানজনক স্কোর বাংলাদেশের-
ডুবতে থাকা বাংলাদেশ তরীর হাল ধরতে ফের একবার দেখা গেলো মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ’কে। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছয় ও সাতে ব্যাট করতে নেমে রুখে দাঁড়ান তাঁরা। মুশফিক’কে দেখা গেলো খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখতে। পক্ষান্তরে মাহমুদুল্লাহ ভরসা রাখলেন বড় শটে। ব্যক্তিগত ৩৮ রানের মাথায় জাদেজার এক দুরন্ত ক্যাচে জসপ্রীত বুমরাহ’র শিকার হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। আর শেষ ওভারে বুমরাহ’র এক অনবদ্য ইয়র্কারে বোল্ড হন মাহমুদুল্লাহ। করেন ৪৬ রান। বাংলাদেশ থামে ২৫৬ রানে।
৬) স্বমেজাজে রোহিত, দুরন্ত শুভমান’ও-

২০১১-র বীরেন্দ্র শেহবাগ’কে মনে করাচ্ছেন রোহিত শর্মা। ইনিংসের শুরুটা প্রতি ম্যাচেই ঝড়ের গতিতে করছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছাড়া এখনও অবধি সাফল্যও পেয়েছেন তিনি। আজ বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ, শরিফুলদের বিপক্ষেও রোহিত ইনিংসের সূচনা করেন ফিফথ গিয়ারে। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি দেখা গেলো তাঁর ব্যাটে। খানিক সময় নিলেন শুভমান। তারপর রানের ফোয়ারা তাঁর ব্যাটেও। ফের একটি অনবদ্য ওপেনিং জুটি দর্শকদের উপহার দিলেন রোহিত ও শুভমান।
৭) রানের মোহে উইকেট হারান দুই ওপেনার-
রানের নেশাতেই উইকেট খোয়াতে হলো দুই ওপেনার’কে। প্রথমে হাসান মাহমুদের শর্ট বলে পছন্দের পুল শট মেরে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন রোহিত। আজ তিনি করেন ৪০ বলে ৪৮ রান। অন্যদিকে শুভমান আউট হন মেহদী হাসান মিরাজের ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন, বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন মাহমুদুল্লাহ’র হাতে। জোড়া উইকেটের পতনের পর সামলে নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়স আইয়ারের জুটি। কিন্তু শুভমানের ঢঙেই সাজঘরে ফিরলেন শ্রেয়স’ও। মেহদীর ফ্লাইটেড বলকে উড়িয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়েন মাহমুদুল্লাহ’র হাতে। করেন ১৯ রান।
৮) পুনে’র বাইশ গজে রাজ ‘কিং কোহলি’র-

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড় ৬৫’র উপর। বরাবরই এই মাঠে ভালো খেলে এসেছেন তিনি। আজ ব্যাট হাতে ট্র্যাডিশন বজায় রাখলেন বিরাট। প্রথম দুই ম্যাচে জোড়া অর্ধশতকের পর তৃতীয় ম্যাচে ফিরেছিলেন ১৬ রান করে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জোটা ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলে আজ ফের স্বমহিমায় ‘কিং কোহলি।’ শুরুটাই করেন হাসান মাহমুদের জোড়া ফ্রি হিটে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৫ করলেও ম্যাচ জিতিয়ে না ফিরতে পারার হতাশা ছিলো। আজ সেই আক্ষেপও কাটিয়ে উঠলেন তিনি। শেষ অবধি ক্রিজে থেকে ৯৭ বলে ১০৩* রান করে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৪৮তম ওডিআই শতরানের সাথে সাথে শচীনের থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে পৌঁছে গেলেন বিরাট।
৯) চমৎকার ক্যামিও রাহুলের’ও-
ব্যাটিং হোক বা বোলিং, এই মুহূর্তে টিম ইন্ডিয়ার ধারেপাশে যে কেউ নেই তা ক্রিকেটারদের পারফর্ম্যান্স থেকেই স্পষ্ট। শ্রেয়স আইয়ার ফেরার পর ক্রিজে নেমেছিলেন কে এল রাহুল। চোটের কারণে হার্দিক পান্ডিয়া ব্যাট করতে আদৌ পারবেন কিনা সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না। রাহুল ফিরলেই ম্যাচে ফেরার অবকাশ থাকত বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র সুযোগই দিলেন না তিনি। নিখুঁত ব্যাটিং করে কোহলির সহযোদ্ধা হিসেবে ভারতকে পৌঁছে দিলেন জয়ের লক্ষ্যে। আজ রাহুলের ব্যাট থেকে এলো ৩৪ বলে ৩৪* রান।