বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে ২০০৮ এ যখন ভারত অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল তো সেই সময় দলের বেশকিছু খেলোয়াড় ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। যার মধ্যে রবীন্দ্র জাদেজা, মনীষ পাণ্ডে আর বিরাট কোহলির মতো নাম রয়েছে। কিন্তু স্রেফ এটাই নয় আরও একটি মুখ যিনি নিজের আক্রামণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন ।
মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই ২০ বছরের এই তরুণ ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা ছিলেন। যিনি টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খুবই অল্প বয়সেই ডেবিউও করেছিল। আমরা কথা বলছি সৌরভ তেওয়ারির যিনি ঝাড়খন্ডেরই দ্বিতীয় খেলোয়ড় ছিলেন। আইপিএলে সৌরভ দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি ফ্লপ প্রমাণিত হন।
মালেশিয়ায় হওয়া অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন দলে
ব্যাটসম্যান সৌরভ তেওয়ারি ১১ বছরের বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলতেন। অনুর্ধ্ব ১৪ স্তরে সৌরভ ঝাড়খন্ডের হয়ে খেলতে শুরু করেন, যারপর ১৭ বছর বয়সে তিনি ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে ডেবিউ করেন। মালেশিয়াতে অনুষ্ঠিত হওয়া অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দলে তিনি ছিলেন আর সেই সময় ৬টি ম্যাচে তিনি ১১৫ রান করেন। এই দলে সৌরভের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়াও কোহলি, মনীষ পান্ডেও ছিলেন,যারা পরে আইপিএল খেলার সুযোগও পান। বিরাটকে আরসিবিতে নেওয়া হয়।
সৌরভ আইপিএল ২০১০ এর তৃতীয় মরশুমে নিজেকে প্রমাণ করেন। তেন্ডুলকরের অধিনায়কত্বে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে সৌরভ ১৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন, যার মধ্যে ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে তিনি ৪১৯ রান করেছিলে। সৌরভ ১৮ই ছক্কাও মারেন যা সেই মরশুমে মুম্বাইয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা ছিল। এই মরশুমে সৌরভ সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের তালিকাতেও শামিল হয়েছিলেন।
বলা হত বাঁহাতি ধোনি
সৌরভ তেওয়ারির প্রদর্শন দেখতে তাকে বাঁহাতি ধোনিও বলা হত। তিনি ২০০৯ এ রঞ্জি ট্রফিতে ৫টি ম্যাচ খেলেন, যার মধ্যে পরপর তিনি সেঞ্চুরিও করেন। এসব কারণেই তাকে ভারতীয় দলেও শামিল করা হয়েছিল, যেখানে সেই সময় অধিনায়ক ধোনিও তার প্রশংসা করেন। তিনি আশা জাগিয়ে বলেছিলেন যে- যদি গাইডেন্স পেতে থাকে তো সৌরভ তেওয়ারি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারেন।
২০১০ এ এশিয়াকাপে টিম ইন্ডিয়ায় সৌরভকে যুবরাজের জায়গায় শামিল করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে একটিও ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুধে আন্তর্জাতিক ডেবিউ করে তিনি প্রথম ইনিংসে ১২ রান করেন। ২০১০ এ দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেন। এই ম্যাচে তিনি ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে মিলে ৩৭ রান করেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়নি। দুটি ইনিংসে ৪৯ রান করা সৌরভের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ১১ বছর ধরে সৌরভ ভারতীয় দলে জায়গা পাননি।
আইপিএল ২০১০ এর পর সৌরভ তেওয়ারিকে আরসিবি ৭.৩৬ কোটি টাকায় কেনে। প্রথম মরশুমে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে যথেষ্ট রান করলেও পরে ব্যর্থ প্রমাণিত হন। কাঁধে চোট লাগার কারণে ২০১২ আর ২০১৪য় তিনি খেলতে পারেননি। তবে পরে তিনি দিল্লি, পুণের মতো দলের হয়ে খেলেন, কিন্তু তাকে পুরোনো ফর্মে দেখা যায়নি। ২০০৬ এ তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন, যেখানে তিনি ১০০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৪৭ গড়ে ৬৯৭৫ রান করেন। যেখানে তিনি ১৯টি সেঞ্চুরি আর ২৮টি হাফসেঞ্চুরি করেন। ৯২টি লিস্ট এ ম্যাচ্চে তিনি ৪৭ গড়ে ৩৩০০ রান করেন। ১৬৬টি টি-২০ ম্যাচে তিনি ১৪টি হাফসেঞ্চুরি সহ ৩০৮৫ রান করেন। ৩১ বছর বয়সী সৌরভ এখনও ঝাড়খন্ডের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন।