WI vs IND: একটা দল দিনকয়েক আগেই জিম্বাবুয়ের মাটিতে লজ্জার সম্মুখীন হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারে নি। অন্য দিকে আর একটা দলের বর্তমানে একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বর্যাঙ্কিং তিন। মাস দুই-আড়াইয়ের মধ্যেই দেশের মাঠে বিশ্বকাপ খেলবে তারা। এমনকি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবীদারও তারা। উল্লিখিত দুই পক্ষের লড়াইতে দ্বিতীয় পক্ষেরই পাল্লা ভারী থাকা উচিৎ মুখোমুখি দ্বৈরথে। খাতায়-কলমে ছিলও তাই। কিন্তু বার্বাডোজের মাঠে শনিবার অঘটন ঘটালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ তিনে থাকা ভারতকে (Team India) ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে শুধু সমতাই ফেরালো না তারা। সাথে বিশ্বকাপে জায়গা পাকা না করতে পারার যন্ত্রণা থেকেও খুঁজে নিলো সাময়িক মুক্তি।
টেস্ট সিরিজে দাপট দেখিয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ বৃষ্টির দাক্ষিণ্যে হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমনকি একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৫ উইকেটে জিতেছে ‘মেন ইন ব্লু।’ দ্বিতীয় ম্যাচে উলটপুরানের কারণ কি? বিশ্লেষণ করলে উঠে আসছে টিম ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়াসই। প্রতিপক্ষ উইন্ডিজকে অত্যধিক হালকা ভাবে নেওয়ার মাশুল দিতে হলো ভারতকে। আজ জিতলে সিরিজ পকেটে পুরে ফেলতে পারত ভারত। কিন্তু তরুণদের জায়গা করে দিতে বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মাকে বাইরে রাখেন কোচ দ্রাবিড়। টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়ের দায়ের অনেকখানিই কোচের উপর বর্তালেও দায় এড়াতে পারেন না আজকের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াও। আগামীতে সাদা বলের খেলায় স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে বাছা হচ্ছে তাঁকেই। কিন্তু ওডিআই-তে অধিনায়কত্ব করার মত পরিণতিবোধ তাঁর রয়েছে কিনা আজকের হারের পর তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Read More: WI vs IND: “অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই ডোবালো আজ…” উইন্ডিজের বিরুদ্ধে হেরে ক্ষুব্ধ নেটজনতার ভর্ৎসনার মুখে টিম ইন্ডিয়া !!
নিশানায় হার্দিক, চিন্তা বাড়ালো টিম ইন্ডিয়া-
বড় মঞ্চে গত এক-দেড় বছরে একের পর এক টুর্নামেন্টে সাফল্য পায় নি টিম ইন্ডিয়া। ২০২২-এর এশিয়া কাপে হারতে হয়েছে শেষ চারে গিয়ে। ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপ অভি্যান শেষ হয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হার দিয়ে। চলতি বছরেও অব্যাহত হারের চিত্রনাট্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হেরেছে ২০৯ রানের ব্যবধানে। প্রতিটি টুর্নামেন্টে হারের পরেই উঠেছে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবী। সমর্থকদের ভাবনাকে মান্যতা দিয়ে টি-২০ ক্রিকেটে নেতা করা হয়েছে হার্দিককে। প্রায় এক বছর কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে দলে নেই রোহিত। ভারত হার্দিকের নেতৃত্বে চারটি টি-২০ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছে। সেই সাফল্যের ফলেই কে এল রাহুলকে সরিয়ে একদিনের ক্রিকেটেও হার্দিককে সহ-অধিনায়ক করেছে বিসিসিআই। রোহিতের উত্তরসূরি যে তিনিই, তা স্পষ্ট জয় শাহ, রজার বিনিদের পদক্ষেপে।
বিশ্বকাপের পর শোনা যাচ্ছে সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন রোহিত। সেক্ষেত্রে হার্দিকের হাতেই যেতে চলেছে পূর্ণ সময়ের দায়িত্ব। কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে তাঁকে অধিনায়ক করা আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত তো? শনিবার বার্বাডোজে ভারতের হার সেই প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলো। পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচের মত করে পরিকল্পনাই সাজাতে পারলো না হার্দিকের ভারত। আচমকাই অক্ষর প্যাটেলকে চার নম্বরে ব্যাট করতে কেনো পাঠানো হলো, তা নিয়ে কোনো যুতসই ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয় নি অধিনায়কের পক্ষে। আগের ম্যাচে স্পিন বাজিমাত করেছিলো। আজকেও উইন্ডিজ দলের গুডাকেশ মোটি এবং ইয়ানিক কারিয়াহ বেশ সফল, তবুও কুলদীপকে আক্রমণে আনতে দশ ওভার সময় লাগালেন হার্দিক। সুযোগ দিলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের ক্রিজে থিতু হওয়ায়। যা ব্যুমেরাং হলো ভারতের জন্য।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুখ পুড়লো ভারতের-
বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার মত দুই মহারথীকে বাইরে রেখে দল সাজিয়েছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তরুণদের উপর যে ভরসা তিনি দেখিয়েছিলেন তার দাম দিতে পারলেন না অক্ষর প্যাটেল, সঞ্জু স্যামসনরা। ওপেনিং জুটিতে ভারত তোলে ৯০ রান। দ্বিতীয় টেস্ট এবং প্রথম একদিনের ম্যাচের পর টানা তৃতীয় ইনিংসে অর্ধশতক করলেন ঈশান কিষণ। শুভমান গিল বড় রান না পেলেও সাবধানী ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু ৯০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট পড়ার পরেই ভারতীয় ব্যাটিং তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে বার্বাডোজে। পরের ২৩ রানের মধ্যে আরও ৪ উইকেট হারায় ভারত। অক্ষর প্যাটেল করেন ১, প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে সঞ্জু স্যামসন আউট হন ৯ রান করে। শেষমশ সূর্যকুমারের ২৪ এবং শার্দুল ঠাকুরের ১৬ রান ভারতকে পৌঁছে দেয় ৪০.৫ ওভারে ১৮১ রানে।
ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। নতুন বল হাতে মুকেশ কুমার এবং হার্দিক পান্ডিয়া, দুজনেই সাফল্য আনতে ব্যর্থ হন। শার্দুল ঠাকুরের হাত ধরে প্রথম উইকেটের মুখ দেখেছিলো টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচে ৩ উইকেট নেন তিনি।হেটমায়ারের উইকেট তুলে আশা জাগিয়েছিলেন কুলদীপও। কিন্তু রুখে দাঁড়ান শে হোপ। উইন্ডিজ অধিনায়ক আগের দিনও ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেছিলেন। আজও উইকেটে টিকে থেকে ৬৩* রানের ইনিংস খেলে দলকে এক স্মরণীয় জয় উপহার দিলেন তিনি।রোহিত এবং বিরাটের মত দুই স্তম্ভ বাইরে। একাদশে নেই বুমরাহ, কে এল রাহুল, শ্রেয়স আইয়ার, মহম্মদ শামিরা। তবুও টিম ইন্ডিয়াকে কোনো অংশেই খাতায়-কলমে দুর্বল বলা চলে না। তা সত্ত্বেও এই হার নিঃসন্দেহে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলো ভারতীয় দলকে।