WI vs IND: ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা অ্যাকাডেমির মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিলো ভারতকে। ৪ রানের ব্যবধানে হারের পর বিশেষ বিচলিত বলে মনে হয় নি অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya)। ‘তরুণ দল নিয়ে মাঠে নামলে কিছু ভুলচুক হয়’, ম্যাচ শেষে জানিয়েছিলেন তিনি। গোটা বছর জুড়ে নবীন প্রতিভাদের টি-২০ দলে সুযোগ দেওয়ার যে পন্থা তিনি এবং কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিয়েছেন, সেই পদক্ষেপ থেকে সরার ভাবনা যে নেই, তাও পরিষ্কার করেছিলেন তিনি। গায়ানার মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচেও হারে ভারত। সিরিজে ২-০ পিছিয়ে পড়ার পরেও নিজের দলের তরুণ সদস্যদের উপর আস্থা রাখতে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। চার পাশ থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনায় বিশেষ কান না দেওয়ার সুফল অবশেষে তৃতীয় টি-২০তে এসে পেলেন তিনি। দুরন্ত পারফর্ম করে জয় ছিনিয়ে সিরিজের উত্তেজনা বাঁচিয়ে রাখলো টিম ইন্ডিয়া।
টস জিতে আজ প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো উইন্ডিজ। গত দুই ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের জয়ের অন্যতম নায়ক নিকোলাস পুরান আজ আউট হলেন ২০ রান করে। ডেথ ওভারে অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলের ২০ বলে ঝোড়ো ৪০* রানের ইনিংস উইন্ডিজকে পৌঁছে দেয় ১৫৯ রানে। প্রথম একাদশে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ৩ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের পিচ আগের দিনের মত আজও রইলো মন্থর। পিচে বল পড়ে কখনও লাফিয়ে উঠলো, আবার কখনো নীচু রইলো। শুরুতে দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমান গিলকে ফিরিয়ে ভারতকে চেপে ধরেছিলো উইন্ডিজ। টানা তৃতীয় হারের আশঙ্কা যখন উঁকি দিতে শুরু করেছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে, তখনই দেখা গেলো সূর্যকুমার ঝড়। ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রীর’ ৮৩ রানের ইনিংস ভারতকে জয় এনে দিলো ১৩ বল বাকি থাকতেই। অনবদ্য ব্যাটিং করলেন তিলক বর্মাও।
Read More: WI vs IND: “অবশেষে হাতি দাঁত দেখিয়ে দিল…”, ক্যারিবিয়ান বধ করে সিরিজে ফেরা ভারতকে নিয়ে মাতামাতি টুইটারে !!
এক ওভারেই ম্যাচ ঘোরালেন কুলদীপ-
গত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং জুটিকে বিশেষ সুযোগ দেন নি হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ ইনিংসের শুরুটা দুরন্ত ছন্দে করেছিলেন কাইল মেয়ার্স এবং ব্র্যান্ডন কিং। শুরুর দিকে একের পর এক বোলার অদলবদল করে ব্যবহার করতে দেখা গেলো ভারত অধিনায়ককে। টিম ইন্ডিয়াকে সাফল্য এনে দিলেন অক্ষর প্যাটেল। কাইল মেয়ার্সকে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দেন তিনি। ৫৫ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন মেয়ার্স। এরপর জনসন চার্লসকে ১২ রানের মাথায় আউট করেন কুলদীপ যাদব। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়া নিকোলাস পুরান এবং ব্র্যান্ডন কিং-কে আউট করেন একই ওভারে। গত ম্যাচে চোটের কারণে খেলেন নি কুলদীপ। আজ ৩ উইকেট নিলেন দলে ফিরে। দ্রুততম ভারতীয় হিসেবে টি-২০তে মালিক হলেন ৫০ উইকেটের।
ভারতীয় ‘ডেথ’ বোলিং-এর সমস্যা অবশ্য প্রকট হলো আজও। বল হাতে চূড়ান্ত হতাশ করলেন আর্শদীপ সিং। আজ ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৩ রান খরচ করেন তিনি। ১৯তম ওভারে তাঁর উপর চড়াও হতে দেখা গেলো উইন্ডিজ অধিনায়ককে। প্রথম টি-২০তে ৪৮ রান করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচেও করেছিলেন কার্যকরী ২১ রান। আজ রোভম্যান পাওয়েলের ৪০* রানের ঝোড়ো ইনিংস ১৬০-এর আশেপাশে পৌঁছে দেয় উইন্ডিজকে। আজ মুকেশ কুমারকে কেবলমাত্র ডেথ বোলার হিসেবে ব্যবহার করলো ভারত। ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই শিমরন হেটমায়ারকে ফেরান তিনি। আর্শদীপ ব্যর্থ হলেও শেষের ওভারে মুকেশের বোলিং ফের একবার নজর কাড়লো।
সূর্যের আগুনে জয় তিলক ভারতের কপালে-
গত দুটি ম্যাচে হারের জন্য অনেকেই দুষেছিলেন ভারতীয় দলের ব্যাটিং-কে। আজ ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দিলো সেই ব্যাটিং-ই। গায়ানার পিচে এই লক্ষ্য তাড়া করা সহজ হবে, এমনটাই ভাবেন নি কেউই। তার উপর শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায় টিম ইন্ডিয়া। ঈশান কিষণের বদলে প্রথমবার টি-২০ ক্রিকেটে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে নেমে ১ রানে ফেরেন যশস্বী জয়সওয়াল। আইপিএল টিমমেট ওবেদ ম্যাকয়ের শিকার হলেন তিনি। অফ ফর্ম অব্যাহত শুভমান গিলেরও। গত দুই ম্যাচে ৩ এবং ৭-এর পর আজ ৬ রান করে আলঝারি জোসেফের বলে পুল মারতে গিয়ে উইকেট হারান তিনি। দুই উইকেট হারিয়ে সমস্যা পড়া টিম ইন্ডিয়ার হাল তখন ধরতে দেখা গেলো সূর্যকুমার যাদবকে।
গত দুই ম্যাচে মাত্র ২১ এবং ১ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয়েছিলো বিশ্বের এক নম্বর টি-২০ ব্যাটারকে। হয়েছিলো বিস্তর সমালোচনাও। কিন্তু আজ গায়ানার মাঠে যেন জবাব দিতেই নেমেছিলেন তিনি। প্রথম বলেই ওবেদ ম্যাকয়কে পাঠান বাউন্ডারির ঠিকানায়। সেই ওভারেই মারেন আরও একটি ছক্কা। তখনই ইনিংসের লয় বেঁধে নিয়েছিলেন তিনি। এর পর গায়ানার বাইশ গজে দেখা গেলো সৌরঝড়। আর তার ঝাপটায় খড়কুটোর মত উড়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিলো খেলা চলার সমায়। চার-ছক্কার বৃষ্টি হলো সূর্যের ব্যাটেও। ১০টি চার এবং ৪ ছক্কার সাহায্যে ৪৪ বলে ৮৩ করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। ৪৯ ইনিংসে ১০০ আন্তর্জাতিক টি-২০ ছক্কার মাইলস্টোন পেরোলেন তিনি। ছুঁলেন ক্রিস গেইলকে। ফের একবার জাত চেনালেন তিলক বর্মাও। তরুণ তুর্কি অপরাজিত রইলেন ৪৯ করে। বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন অধিনায়ক হার্দিক স্বয়ং।