WI vs IND: দিনকয়েক আগেই জিম্বাবুয়ের মাঠে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ইতিহাসে প্রথমবার একদিনের বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালের বিশ্বজয়ীদের। সেই হতাশাজনক পারফর্ম্যান্সের গ্লানি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপাবেন জেসন হোল্ডাররা (Jason Holder), ব্যাট-বলের লড়াইতে দুই পক্ষের মধ্যে দেখা যাবে ভারসাম্য-দর্শকদের আশা ছিলো এমনটাই। তবে ডোমিনিকার মাঠে উইন্ডিজ বনাম ভারত (WI vs IND) সিরিজের প্রথম টেস্ট যত এগোলো ততই পরিষ্কার হয়ে গেলো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের বেহাল দশা। দুই দলের ক্রিকেটীয় দক্ষতার মধ্যে যে পার্থক্য এখন অনেকটা, তা প্রকাশ পেলো তাদের পারফর্ম্যান্সে।
উইন্ডসর পার্কের পরিসংখ্যান বলছে দ্বিতীয় ইনিংসে এখানে ব্যাটিং অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। তবুও টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-ই বেছে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রেথওয়েট (Kraigg Braithwaite)। ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে ব্রেথওয়েটের এই সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরলো বুধবার। তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং। তেজনারায়ণ চন্দ্রপল (Tagenarine Chanderpaul), ক্রেগ ব্রেথওয়েট থেকে জেসন হোল্ডার-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন নি কেউই। অভিষেক ম্যাচে কিছুটা লড়াই চালালেন একমাত্র অ্যালিক অ্যাথেনাজে (Alick Athanaze)। তাদের ইনিংস শেষ হয় ১৫০ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মসৃণ গতিতে এগোচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। অভিষেককারী যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) সাথে ক্রিজে রয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর ৮০/০।
Read More: WI vs IND, Stats Review, DAY-1: অশ্বিনাতঙ্কে কাবু ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দাপুটে অভিষেক যশস্বীর, ডোমিনিকায় তৈরি হলো একঝাঁক রেকর্ড !!
WI vs IND, Test-1, Day-1, Highlights –
১) সাবধানী ইনিংস খেলার লক্ষ্য ছিলো ওপেনিং জুটির-
জসপ্রীত বুমরাহ নেই, বিশ্রামে মহম্মদ শামি, বাদ পড়েছেন উমেশ যাদবও। এমতাবস্থায় নতুন বলে শুরুটা যে মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj) করবেন তা নিশ্চিতই ছিলো। তাঁর সাথে উইন্ডসর পার্কে জুটি বাঁধলেন জয়দেব উনাদকাট (Jaydev Unadkat)। অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি পেসার কেরিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলছেন ডোমিনিকায়। ম্যাচের প্রথম আধ ঘন্টায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারেন নি দুজনেই। বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনিং ব্যাটার-তেজনারায়ণ চন্দ্রপল (Tagenarine Chanderpaul) এবং ক্রেগ ব্রেথওয়েট সহজেই ভারতের যাবতীয় আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারছিলেন। প্রথম আধঘন্টায় বেশ সপ্রতিভ লাগছিলো তাঁদের। চন্দ্রপল-ব্রেথওয়েটের জুটি নিয়ে আশা জেগেছিলো উইন্ডিজ সমর্থকদের মনে।
২) উইকেটের লকগেট খুললেন অশ্বিন-
নতুন বল হাতে পেসাররা ডোমিনিকার পিচে কার্যকরী হচ্ছেন না দেখে বাধ্য হয়েই দ্রুত স্পিনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাদ পড়ার পর উইন্ডসর পার্কেই প্রত্যাবর্তন ঘুটিয়েছেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। গতকাল তাঁর হাতেই উইকেট তোলার ভার ন্যস্ত করেছিলেন রোহিত। অধিনায়কের আস্থার দাম দেন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। তেজনারায়ণ চন্দ্রপলের রক্ষণ ভেদ করে তাঁকে বোল্ড করেন অভিজ্ঞ অফস্পিনার। একই সাথে নতুন রেকর্ডও গড়লেন তিনি। পিতা শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের (Shivnarine Chanderpaul) পর পুত্র তেজনারায়ণ চন্দ্রপলেরও উইকেট নিলেন তিনি।
৩) মধ্যাহ্নভোজের আগেই ব্যাকফুটে উইন্ডিজ-
দিনের প্রথম আধঘন্টা বাদে আগাগোড়া দাপট বজায় রাখলো ভারতীয় দল। তেজনারায়ণ চন্দ্রপল (Tagenarine Chanderpaul) আউট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রেগ ব্রেথওয়েটকে ফেরান অশ্বিনই (Ravichandran Ashwin)। কভারে সহজ ক্যাচ ধরেন রোহিত শর্মা। অভিষেক ম্যাচে র্যামন রিফারকে একটি দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে পাঠালেন ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)। শার্দূল ঠাকুরের শিকার হন রিফার। আর মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগে রবীন্দ্র জাদেজার বলে তুলে মারতে গিয়ে মহম্মদ সিরাজের (Mohammed Siraj) হাতে ধরা পড়েন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। শরীর শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে যেভাবে ক্যাচ তালুবন্দী করলেন সিরাজ, তা গতকালের খেলার অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
৪) ব্যাট হাতে লড়লেন অ্যাথানাজে-
দিনকয়েক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন নিজেদের ১৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেছিলো, তখন মুখ্য নির্বাচক ডেসমন্ড হেইনস উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন দুই তরুণ-কার্ক ম্যাকেঞ্জি এবং অ্যালিক অ্যাথানাজের (Alick Athanaze)। ডোমিনিকার মাঠে ‘ঘরের ছেলে’ অ্যাথানাজের অভিষেক হলো গতকাল। হেইনসের প্রশংসা যে মিথ্যা নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন বছর ২৪-এর বাঁ-হাতি ব্যাটার। বাকিরা যখন লাগাতার ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন ৯৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।
৫) পাঁচ উইকেটে উজ্জ্বল অশ্বিন-
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেও অব্যাহত রইলো রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) জাদু। প্রথম ইনিংসে ৬০ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এই নিয়ে কেরিয়ারে ৩২তম ‘ফাইফার’ পেলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে এটা তাঁর পঞ্চম ‘ফাইফার।’ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেই চার বার এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড করলেন তিনি।
৬) উইন্ডিজের চ্যালেঞ্জ শেষে ১৫০ রানের মধ্যে-
গোটা ম্যাচে মুহূর্তের জন্যও সাবলীল মনে হয় নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের। প্রথম দিনের সম্পূর্ণ ৯০ ওভার ব্যাট করতে পারলেন না তাঁরা। অশ্বিনের পাঁচ উইকেটের পাশাপাশি ৩ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। ১টি করে উইকেট মহম্মদ সিরাজ এবং শার্দূল ঠাকুরের দখলে। অ্যালিক অ্যাথানাজ ছাড়া ক্রেগ ব্রেথওয়েট (Kraigg Braithwaite) করেলন ২০, জেসন হোল্ডারের (Jason Holder) ব্যাট থেকে এলো ১৮ রান। এবং রাখিম কর্ণওয়াল (Rahkeem Cornwall) অপরাজিত থাকেন ১৭ রান করে। মাত্র ১৫০ রানের মধ্যেই অল-আউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৭) অভিষেকে নজর কাড়লেন যশস্বী-
ঘরোয়া ক্রিকেটে যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashavi Jaiswal) ব্যাটিং গড় ৮০.২২। আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও পারফর্ম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখুন তরুণ ওপেনার, এমনটাই প্রার্থনা দেশবাসীর। এই বছরের আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করে যশস্বী ইতিমধ্যেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গতকাল প্রথমবার সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেও বেশ সাবলীল দেখালো তাঁকে। প্রথম কয়েকটি বল ডট খেলার পর পয়েন্টের উপর দিয়ে চার মেরে খাতা খোলেন তিনি। এরপর থেকে বেশ জমাট দেখিয়েছে মুম্বইয়ের তরুণকে। দিনের শেষ ওভারে জোসেফ ওয়রিকানকে (Josef Warrican) দৃষ্টিনন্দন রিভার্স স্যুইপও মারেন তিনি। দিনের শেষে অপরাজিত রয়েছেন ৪০ রান করে।
৮) উইকেটে সপ্রতিভ দেখাচ্ছে রোহিত শর্মাকে-
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ফর্ম নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাগপুর টেস্টে শতরানের পর আর বড় কোনো ইনিংস নেই তাঁর ব্যাট থেকে। আইপিএলে ব্যর্থ হয়েছেন, রান পান নি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেই হতাশাজনক অধ্যায়কে পিছনে ফেলার সুযোগ রয়েছে রোহিতের সামনে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাঁকে বেশ ফিট দেখাচ্ছে। ব্যাট হাতে বাইশ গজেও বেশ সপ্রতিভ রোহিত (Rohit Sharma)। সময় নিয়ে রান তোলার প্রয়াস করছেন। ওয়ারিকানকে একটি দারুণ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। প্রথম দিনের শেষে যশস্বীর (Yashasvi Jaiswal) সাথেই ভারত অধিনায়কও অপরাজিত রয়েছেন ৩০ রান করে। ভারতের স্কোর বর্তমানে ৮০। মাত্র ৭০ রানে পিছিয়ে তারা।