ভারতীয় ক্রিকেটে আজ দুঃখের দিন। দীর্ঘ ১৪ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে দাঁড়ি টানলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। গত ৭ তারিখ রোহিত শর্মা সরে দাঁড়ানোর পরেই জল্পনা শুরু হয়েছিলো বিরাটের অবসর নিয়ে। শেষমেশ সিলমোহর পড়লো তাতেই। আজ ইন্সটাগ্রামে এক আবেগঘন পোস্টে লাল বলের ফর্ম্যাটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা করেন কিংবদন্তি তারকা। লেখেন, “…এই ফর্ম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা সহজ না হলেও সঠিক বলেই মনে হচ্ছে। আমার সর্বস্ব আমি দিয়েছি। পরিবর্তে ফিরে পেয়েছি তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু। খেলার প্রতি, এই দীর্ঘ যাত্রাপথের সব সতীর্থের প্রতি ও সেই সকল মানুষের প্রতি যাঁরা আমায় পরিচিতি দিয়েছেন একরাশ কৃতজ্ঞতা বুকে নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছি আমি। নিজের টেস্ট কেরিয়ারের দিকে আমি সর্বদা হাসিমুখে ফিরে তাকাবো।” ১২৩ ম্যাচে ৯২৩০ রান করে থামলেন কোহলি (Virat Kohli)।
Read More: “স্বর্ণযুগের অবসান…”, বিরাট কোহলির অবসর ঘোষণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বিদায় বার্তা ভক্তদের !!
কোহলির অবসরে অসন্তুষ্ট ক্রিকেটজনতা-

গত ডিসেম্বর মাসে অবসর নিয়েছেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। সদ্য সরে দাঁড়িয়েছেন রোহিত শর্মা’ও। এমতাবস্থায় বিরাটকে (Virat Kohli) খোয়াতে মোটেই রাজী ছিলো না টিম ইন্ডিয়া। ইংল্যান্ডের সফরে দলের প্রয়োজন তাঁর অভিজ্ঞতা, জানিয়েছিলেন বোর্ড কর্তারা। অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাঁকে অনুরোধও করে দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। গতকাল সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মিলেছিলো যে কোহলির (Virat Kohli) খুব কাছের এক প্রাক্তনীর মারফত আলোচনা চালানোর চেষ্টা করেছিলো বিসিসিআই। কিন্তু কিছুতেই ভেজে নি চিঁড়ে। ইংল্যান্ড সফরের দল ঘোষণার আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন বিরাট (Virat Kohli)। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যা দিচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। আরও কিছুদিন দেশের স্বার্থে গায়ে সাদা জার্সি চাপাতে পারতেন তিনি, বলছেন তাঁরা।
কোহলির সাথে তুলনা টানা হচ্ছে টিম ইন্ডিয়ার অন্যান্য কিংবদন্তিদের। শচীন তেন্ডুলকর ২০১৩ সালে যখন টেস্টকে বিদায় জানিয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ৩৯। রাহুল দ্রাবিড়’ও ৩৯ বছর বয়সেই ভারতের টেস্ট জার্সি চিরকালের জন্য তুলে রেখেছিলেন। ভিভিএস লক্ষ্মণ যখন সরে দাঁড়ান তখন ৩৮ ছুঁয়েছেন তিনিও। তাঁরা যদি সাফল্যের সাথে ৩৮ বা ৩৯ বছর বয়স অবধি খেলা চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে মাত্র ৩৬-এই বিরাটের সরে দাঁড়ানোর কারণ কি? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ফিটনেসকে বরাবরই গুরুত্ব দেন কোহলি (Virat Kohli)। বাইশ গজের দুনিয়ায় অন্যতম ‘ফিট’ তারকা তিনি। তারপরেও ২০২৪ ও ২০২৫-এ পরপর টি-২০ ও টেস্ট থেকে বিরাট সরে দাঁড়ানোয় রীতিমত অবাক অনেকে। অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীন টেস্ট নেতৃত্ব ফেরত চেয়েও পান নি কোহলি। সেই অভিমানেই কি সরে দাঁড়ালেন? শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
এক নজরে বিরাট কোহলির টেস্ট কেরিয়ার-

লাল বলের ফর্ম্যাটে টিম ইন্ডিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ২০১১তে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। ২০২৫-এর জানুয়ারিতে সিডনির মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলে কেরিয়ারে দাঁড়ি টানলেন তিনি। ১২৩টি ম্যাচে ৯২৩০ রান করেছেন তিনি। কেরিয়ারের সেরা সময়ে ৫৫.১০-এ উঠেছিলো তাঁর ব্যাটিং গড়। কিন্তু থামলেন ৪৬.৮৫ গড় নিয়েই। ৩০টি শতরান করেছেন বিরাট। এর মধ্যে রয়েছে ৭টি দ্বিশতক। অর্ধশতকের সংখ্যা ৩১। ২০১৪-এর বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির মাঝপথে মহেন্দ্র সিং ধোনি সরে দাঁড়ানোয় অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন বিরাট (Virat Kohli)। ২০২২-এর জানুয়ারি অবধি ছিলেন দায়িত্বে। তাঁর অধীনে ৬৮টি টেস্টের মধ্যে ৪০টিতে জেতে ভারত। পরিসংখ্যানের দিক থেকে টেস্টে ভারতের সফলতম নেতা কোহলিই।