ধূমকেতু’র গতিতে উত্থান জম্মু-কাশ্মীরের উমরান মালিকের (Umran Malik)। ভারতীয় দলে এক্সপ্রেস পেসারের যে অভাব দীর্ঘ সময় দেখা গিয়েছে, সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন তরুণ তুর্কি, আশায় ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২২-এর আইপিএলে আক্ষরিক অর্থেই গতির ঝড় তুলেছিলেন তিনি। নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার কাঁটা ছুঁয়েছিলো তাঁর ডেলিভারিগুলি। খুব শীঘ্রই শোয়েব আখতারের (Shoaib Akhtar) ১৬১.৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতির রেকর্ড ভেঙে বিশ্বের দ্রুততম ডেলিভারির মালিক হবেন উমরান, আশায় ছিলেন ভারতের ক্রিকেটজনতা। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে ফারাকটা আর ঘোচে নি। যেমন রকেটের বেগে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন কাশ্মীরী তরুণ, তেমন ঝড়ের বেগেই ছিটকে গিয়েছেন লাইমলাইট থেকে।
Read More: TOP 3: কেএল রাহুল নয়, সুযোগ পাওয়া উচিৎ সরফরাজ খানের, এই তিনটি কারণ দিচ্ছে প্রমাণ !!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হতাশ করেছেন উমরান-
প্রতিভার ঝলক প্রথমবার উমরান মালিক (Umran Malik) দেখিয়েছিলেন ২০২১-এর আইপিএলে (IPL)। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (SRH) হয়ে ৩টি ম্যাচ খেললেও তাঁর গতি চমকে দিয়েছিলো সকলকে। ২০২২-সালে সেরা ছন্দে দেখা যায় তাঁকে। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েছিলেন ২০.১৮ বোলিং গড়ে। এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব’ও অর্জন করেছিলেন তিনি। বিধ্বংসী ইয়র্কারগুলো মনে ধরেছিলো ক্রিকেটজনতার। তাঁকে দ্রুত জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়ার দাবীতে সোচ্চার হয়েছিলেন তাঁরা। সমর্থকদের চাহিদাপূরণে উদ্যমী হন নির্বাচকরাও। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই বছরই প্রথমবার দেশের হয়ে টি-২০ খেলতে মাঠে নামেন। তারপর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হয় ওডিআই অভিষেক। মেজেঘষে তাঁকে দুনিয়ার অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ্য ছিলো বিসিসিআই-এর।
আধুনিক ক্রিকেটে গতির চেয়েও বলের নিয়ন্ত্রণ, ভেরিয়েশন যে কার্যকরী তা স্পষ্ট হয়ে যায় উমরান (Umran Malik) আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার পরেই। যে পারফর্ম্যান্স আশা করা হয়েছিলো তাঁর থেকে, তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেন নি তিনি। আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড বা বাংলাদেশ-যে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই মাঠে নামুন না কেন, রান আটকাতে পারেন নি বিশেষ। পাশাপাশি উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রেও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেন নি তিনি। বরং স্পষ্ট হয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। ২০২৩ সালে আহমেদাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টি-২০ খেলেছেন তিনি। ২০২৩-এর অগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একদিনের সিরিজে ফেরানো হয়েছিলো তাঁকে, কিন্তু ব্যর্থতার পর বাদ পড়েছেন পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাট থেকেও।
দেশ ছাড়বেন উমরান মালিক?
ভারতের হয়ে ১০টি একদিনের ম্যাচ ও ৮টি টি-২০ খেলেছেন উমরান (Umran Malik)। উইকেটসংখ্যা যথাক্রমে ১৩ ও ১১। ইকোনমি রেট ৬.৫১ ও ১০.৪৮। পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে বোলিং গড়’ও ৩০-এর উপরে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাঁর সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স হতাশ করেছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের। খেলার কথা ছিলো দলীপ ট্রফিতে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে সেখান থেকেও বাদ পড়েছেন। এমতাবস্থায় ভারতে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের ভবিষ্যৎ ঠিক কি তা নিয়ে দ্বিধায় অনেকে। প্রত্যাশার চাপ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য তাঁকে ভারত ছাড়ার পরামর্শও দিচ্ছেন কেউ কেউ। যদি সত্যিই ‘টিম ইন্ডিয়া’র নীল জার্সিকে বিদায় জানাতে চান উমরান (Umran Malik), সেক্ষেত্রে তাঁর গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশের হয়ে খেলেন বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁদের দলেই নাম লেখাতে পারেন কাশ্মীরী তরুণ’ও।