আবারও একবার বিফল হয়েই মাঠ ছাড়তে হলো ভারতীয় দলকে। শেষ সেই ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেতাব জিতেছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ এরপর থেকে ভারতের সঙ্গী হয়ে কেবল হতাশা। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০২১ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছিলো। ২০২৩-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালেও তীরে এসেই ডুবলো তরী। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ ফলে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই নাস্তানাবুদ হয়ে খেতাব খোয়ালো ভারত। ফাইনালে স্টিভ স্মিথ (Steve Smith), প্যাট কামিন্সদের (Pat Cummins) বিরুদ্ধে ‘টিম ইন্ডিয়া’ হারলো ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। একদিকে প্রথম দেশ হিসেবে সবকটি আইসিসি ট্রফি জিতে যখন উৎসবে মাতলো ‘ব্যাগি গ্রিন’ বাহিনী, তখন অন্যদিকে ভারতীয় শিবিরে অপেক্ষার পালা দীর্ঘ থেকে হলো দীর্ঘতর।
Read More: “আশা করছি ও আমার কথা শুনছে…” এই নতুন ভূমিকায় হার্দিক পান্ডিয়াকে দেখতে চেয়ে সওয়াল সৌরভ গাঙ্গুলীর !!
খারাপ পারফর্ম্যান্সের জন্যই হারলো টিম ইন্ডিয়া-
টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে ভারতের হারের কারণ হিসেবে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) স্ট্র্যাটেজি নির্মাণের গলদ দেখছেন অনেকে। টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে থাকা রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে বাইরে রেখে চার পেসারকে প্রথম একাদশে জায়গা দেওয়ার স্ট্র্যাটেজি ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে ভারতের জন্য। মাঠে রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja), নাথান লিয়ঁদের (Nathan Lyon) মত স্পিনাররা যখন ফুল ফোটাচ্ছেন, তখন বিশ্বের সেরা স্পিনার অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) ওভালের রিজার্ভ বেঞ্চেই সময় কাটালেন। তিনি খেললে চতুর্থ দিনে ভারতের বোলিং আক্রমণের ধার বাড়ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্তও ভারতের বিপক্ষে গিয়েছে। ট্র্যাভিস হেড এবং স্টিভ স্মিথের জোড়া শতরানে চাপে পড়ে গিয়েছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ স্ট্র্যাটেজিতে যে গলদ ছিলো, তা এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তবে এর পাশাপাশি ভারতের ক্রিকেটারদের হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের কথাও অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। কোহলি (Virat Kohli), পূজারা, রোহিতদের (Rohit Sharma) মত তারকারাও নিজেদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ। বল হাতে সুযোগ পেয়ে চূড়ান্ত হতাশ করেছেন উমেশ যাদব (Umesh Yadav)। অজিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারা উমেশের কেরিয়ারেই ইতি পড়তে চলেছে বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল।
ওভালের হারের পর উমেশের বিদায় নিশ্চিত-
গত কয়েক বছরে ভারতীয় টেস্ট দলে উমেশ যাদব (Umesh Yadav) নিয়মিত নন। বিশেষ করে মহম্মদ সিরাজের (Mohammed Siraj) উত্থানের পর থেকেই বিদর্ভের উমেশ যাদবের জায়গা হয়েছে ব্যাকসিটে। সাধারণত বিদেশের মাঠে পেসত্রয়ী হিসেবে দেখা যায় সিরাজ-শামি এবং জসপ্রীত বুমরাহকেই। তবে ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় থেকে বুমরাহ (Jasprit Bumrah) পিঠের চোটে বাইরে থাকায় ভারতীয় দলের বৃত্তে পুনঃপ্রবেশ হয়েছিলো উমেশের। উপমহাদেশের পিচে সাধারণত ৩ পেসার ব্যবহার করতে দেখা যায় না ভারতকে। তিন স্পিনার হিসেবে থাকেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেল এবং রবীন্দ্র জাদেজা। মাঝেমধ্যে শিকে ছেঁড়ে কুলদীপ যাদবের ভাগ্যেও। তাই বেশ কয়েকবার অতিরিক্তের তালিকাতেও জায়গা হয়েছে উমেশের (Umesh Yadav)। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ভারতীয় স্কোয়াডে ছিলেন উমেশ (Umesh Yadav)। ইন্দোরের তৃতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পান। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে হতাশ করেন। আহমেদাবাদের চতুর্থ টেস্টেও খালি হাতেই ফিরতে হয় তাঁকে। দুই ইনিংস হাত ঘুরিয়ে কোনো উইকেট পান নি।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য যে দল ঘোষণা করা হয়, তাতে চোটের জন্য রাখা যায় নি জসপ্রীত বুমরাহকে (Jasprit Bumrah)। ফলে পেস বোলিং বিকল্প হিসেবে উমেশকেই রাখা হয় ১৫ জনের দলে। ওভালে ভারত চার পেসারকে প্রথম একাদশে রাখায় খেলার সুযোগও চলে আসে তাঁর সামনে। কিন্তু চূড়ান্ত হতাশ করেন উমেশ (Umesh Yadav)। প্রথম ইনিংসে একটি উইকেটও আদায় করতে পারেন নি তিনি। ভারতের একমাত্র বোলার হিসেবে ঝুলি শূন্য থেকে গিয়েছিলো তাঁর। ২৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৭৭ রান খরচ করে একটিও উইকেট পান নি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে খানিক শুধরে নেন উমেশ। ১৭ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেও ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। নিশ্চিত জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের হয়ে ৫৭ টেস্টে ১৭০ উইকেট নেওয়া উমেশের (Umesh Yadav) নির্বিষ বোলিং-এ হতাশ বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে ৩৫ বছর বয়স তাঁর। এই মুহূর্তে উমেশকে বয়ে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেন মত দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি ফিট হয়ে মাঠে ফেরার পথে বুমরাহও। তাঁর প্রত্যাবর্তনে জায়গা হারাতে চলেছেন উমেশ।