TOP 5: যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটলো গতকাল। ভারতীয় সিনিয়র পুরুষ দলের মুখ্য নির্বাচকের চেয়ারে বসলেন অজিত আগরকার (Ajit Agarkar)। গত বছরের নভেম্বর মাসে টি-২০ বিশ্বকাপের আসরে ভারতীয় দল সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর গোটা নির্বাচকমন্ডলীকেই ছেঁটে ফেলেছিলো বিসিসিআই। নতুন আবেদনপত্রের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। বিদায়ী নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা (Chetan Sharma) ফের নিজের পদ ফিরে পেতে আবেদন করেছিলো বিসিসিআই-এর কাছে। সাক্ষাৎকারের পর অন্যান্য নির্বাচকদের কাউকে ফেরানো না হলেও দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব দেওয়া হয় চেতনকে।
বিশ্বকাপের আগে বড়সড় বদল চাইছিলো না বোর্ড। কিন্তু আস্থার মর্যাদা দিতে পারেন নি চেতন। এক বেসরকারী চ্যানেলের গোপন ক্যামেরার সামনে ভারতীয় দল ও ক্রিকেটারদের নামে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে বোর্ডের অস্বস্তি বাড়ান তিনি। ফলে সরে যেতে হয় দায়িত্ব থেকে।চেতনের ইস্তফার পর মুখ্য নির্বাচকের পদ খালিই পড়ে ছিলো এতদিন। ভারতীয় বোর্ড আইপিএল আয়োজন এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশপের (WTC) ফাইনাল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুযোগ হয় নি এই পদে নতুন কাউকে নিয়োগ করার। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন পূর্বাঞ্চলের নির্বাচক শিবসুন্দর দাস (Shiv Sundar Das)। ওভালের টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল শেষ হওয়ার পর নতুন করে মুখ্য নির্বাচক নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করা হয়।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিলো চেতনের (Chetan Sharma) ছেড়ে যাওয়া নর্থ-জোন বা উত্তরাঞ্চল থেকেই কাউকে নিয়োগ করা হবে। বীরেন্দ্র শেহবাগের নাম ভাসছিলো ক্রিকেটমহলের অন্দরে। তবে মুখ্য নির্বাচকের বেতন যথেষ্ঠ নয় মনে করেছিলেন শেহবাগ (Virender Sehwag)। তাই ‘নজফগড়ের নবাব’কে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। বিকল্প হিসেবে উত্তরাঞ্চল নয়, বরঞ্চ মুম্বই থেকে প্রাক্তন পেসার অজিত আগরকারকে (Ajit Agarkar) এই গুরুদায়িত্ব সঁপলেন জয় শাহ, রজার বিনিরা। শোনা যাচ্ছে বেতনও বাড়ানো হয়েছে পূর্বের থেকে। মুখ্য নির্বাচক পদে এসেই আগরকার টিম ইন্ডিয়ার পুনর্গঠনে মন দিতে পারেন। অন্তত পাঁচ ক্রিকেটারের সামনে জাতীয় দলের দরজা বন্ধ করতে পারেন তিনি।
Read More: WI vs IND: ভারতীয় দলে তারুণ্যের জয়গান, একসাথে ৭ নতুন মুখকে দেখা যাবে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০তে !!
কে এল রাহুল-
লম্বা সময় ফর্মে নেই কে এল রাহুল (KL Rahul)। গত দশটি টেস্ট ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় মাতের ১২.৫। একদিনের ক্রিকেট এবং টি-২০তেও ব্যাটিং পরিসংখ্যান আশানুরূপ নয়। সাম্প্রতিক কালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচে ভালো খেলতে পারেন নি তিনি। এমনকি আইপিএলেও রানের দেখা পাওয়া যায় নি রাহুলের (KL Rahul) ব্যাট থেকে। মন্থর ইনিংস খেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের রোষানলে পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বর্তমানে হিপ ফ্লেক্সর পেশীতে চোট পেয়ে ক্রিকেট থেকে বাইরে রয়েছেন রাহুল। মনে করা হচ্ছে এশিয়া কাপ বা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে দলে ফিরতে পারেন তিনি।
গত টি-২০ বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর থেকে টি-২০ ক্রিকেটে জাতীয় দলের জার্সিতে আর সুযোগ দেওয়া হয় নি রাহুলকে। চেতন শর্মার পর অজিত আগরকার (Ajit Agarkar) মুখ্য নির্বাচকের চেয়ারের বসার পরেও এই সিদ্ধান্তে কোনোরকম নড়চড় না হওয়ার সম্ভাবনা। একই সাথে টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচেও কঠিন সময় অপেক্ষা করে থাকতে পারে রাহুলের জন্য।
চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে এশিয়া কাপ বা সেপ্টেম্বরের শেষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে যদি বড় রান করতে পারেন তাহলে সম্ভবত বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়তে পারেন রাহুল (KL Rahul)। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ঈশান কিষণের সাথে সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson) তখন জায়গা করে নেবেন আগরকারের ভাবনায়। টেস্টেও শুভমান গিল (Shubman Gill), যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal), ঋতুরাজ গায়কোয়াড়দের (Ruturaj Gaikwad) মত একাধিক তরুণ ওপেনার উঠে আসায় লাল বলের খেলা থেকেও বাইরে যেতে হতে পারে রাহুলকে।
রোহিত শর্মা-
গত কয়েকমাস ধরেই আতসকাঁচের নীচে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ব্যাটিং। ভারত অধিনায়কের কাছ থেকে অধিনায়োকচিত ইনিংস দেখার আশা নিতে টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে লাগাতার হতাশই হতে হয়েছে দর্শকদের। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে নড়বড়ে দেখিয়েছিলো রোহিতকে। এরপর আইপিএলেও দেখা গিয়েছে একই চিত্র। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) নেতা হিসেবে মাঠে নামলেও বিশেষ রান পান নি তিনি। ১৬টি ম্যাচ খেললেও মাত্র ২টি অর্ধশতক করতে পেরেছেন। পেস বা স্পিন-উভয়ের ক্ষেত্রেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে হিটম্যানকে। আপাতত অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ অবধি রোহিতকে (Rohit Sharma) ধরে রাখার ভাবনা রয়েছে বোর্ডের। তবে নতুন মুখ্য নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকারের আগমনে বদলাতে পারে এই চিত্র।
গত বছরের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের পর থেকে টি-২০ ক্রিকেটে দেশের জার্সি গায়ে দেখা যায় নি রোহিত শর্মাকেও (Rohit Sharma)। আগামী উইন্ডিজ সফর এবং এশিয়া কাপে তিনি যদি রান না করতে পারেন তাহলে টি-২০তে পাকাপাকিভাবে তাঁর জন্য দরজা বন্ধ তো হবেই। সাথে সাথে বাকি দুই ফর্ম্যাটেও রোহিতের ভবিষ্যত নিয়ে উঠে যাবে প্রশ্ন। বিশ্বকাপের পরেই একদিনের দল থেকেও ছাঁটাই হতে পারেন তিনি। টেস্টে রোহিত শর্মার ফর্ম কিছু আহামরি নয়। নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি শতরান ছাড়া কোনো উল্লেখযোগ্য তান নেই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দুই ইনিংসে করেন মাত্র ১৫ এবং ৪৩। যশস্বী (Yashavi Jaiswal) বা ঋতুরাজের (Ruturaj Gaikwad) মত নতুন মুখেরা যদি লাল বলের খেলায় ভালো পারফর্ম করেন, তাহলে টেস্টেও জায়গা হারায়ে পারেন রোহিত।
উমেশ যাদব-
মুখ্য নির্বাচক পদে বসে দলের বোলিং বিভাগে বড় বদল আনতে পারেন অজিত আগরকার (Ajit Agarkar)। পেসার উমেশ যাদবের (Umesh Yadav) পারফর্ম্যান্সে ভারতীয় বোর্ড যে খুশি নয় তা ইতিমধ্যেই বোঝা গিয়েছে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজ থেকে তাঁর বাদ পড়া থেকে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়ে দুই টেস্টে কেবল তিনটি উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। এরপর জসপ্রীত বুমরাহর (Jasprit Bumrah) অনুপস্থিতিতে কেনিংটন ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও উমেশকে প্রথম এগারোয় রেখেছিলেন কোচ দ্রাবিড়। কিন্তু কোচের আস্থার মর্যাদা দিতে পারেন নি তিনি। দুই ইনিংস মিলিয়ে ভাগ্যে জুটেছে কেবল দুই উইকেট। উমেশের (Umesh Yadav) অনিয়ন্ত্রিত বোলিং ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে ভারতকে।
মুকেশ কুমারের মত ঘরোয়া ক্রিকেটে জাত চেনানো প্রতিভাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় পেস বিভাগে। এছাড়া ফেরানো হয়েছে নভদীপ সাইনিকে। রয়েছেন জয়দেব উনাদকাটও। আসন্ন সিরিজগুলিতে খেলবেন শামি’ও (Mohammed Shami)। চোট কাটিয়ে সুস্থ হওয়ার পথে বুমরাহ। শামি ও সিরাজের (Mohammed Siraj) সাথে পেস ত্রয়ীতে বুমরাহকেই রাখা হবে আগামীতে। অতিরিক্ত পেসার হিসেবে থাকতে পারেন মুকেশ (Mukesh Kumar) বা নভদীপরা। ফলে জাতীয় দলে উমেশের প্রয়োজন ফুরাতে পারে খুব শীঘ্রই। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ছাড়া রাস্তা খোলা থাকবে না উমেশের সামনে।
ভুবনেশ্বর কুমার-
২০২২-এর জানুয়ারি মাসের পর থেকেই একদিনের দলে ব্রাত্য করা হয় ভুবনেশ্বরকে (Bhuvneshwar Kumar) । জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah)চোটের জন্য বাইরে গেলেও ফেরানো হয় নি ভুবিকে। বরং উমেশ যাদবকে একদিনের ম্যাচে সুযোগ দেওয়ার পথে হেঁটেছিলেন দ্রাবিড়। আইপিএলে ভালো পারফর্ম্যান্স করে টি-২০তে নিজের জায়গা টিকিয়ে রেখেছিলেন ভুবনেশ্বর (Bhuvneshwar Kumar) । কিন্তু এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে ১৯ রান খরচ করার পর থেকেই ভারতীয় দলের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর।
টি-২০ বিশ্বকাপে ভুবনেশ্বরকে প্রথম একাদশে ব্যবহার করেছিলেন দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। পাওয়ার প্লে’তে মিতব্যয়ী বোলিং করে নজর কেড়েছিলন তিনি। নিয়মিত নিয়েছিলেন উইকেটও। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পর দায় চাপানো হয় তাঁর ওপর। কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের ঠিক পর যে নিউজিল্যান্ড সফর ছিলো, তাতে ভুবনেশ্বর সুযোগ পেলেও এরপর ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে। ইংল্যান্ড ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া অর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh), মহম্মদ শামিরা (Mohammed Shami) এরপরেও নিয়মিত ভারতীয় জার্সি গায়ে চাপালেও ২০২৩-এ একটি ম্যাচে ভারতের হয়ে খেলা হয় নি ভুবনেশ্বরের। আগরকার মুখ্য নির্বাচক হিসেবে পদে বসলেও ভুবির জন্য সম্ভবত বন্ধই থাকতে চলেছে দরজা।
হর্ষল প্যাটেল-
ভারতীয় দলের বোলিং বিভাগ থেকে বাদ পড়তে পারেন হর্ষল প্যাটেলও। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর তাঁকে ছেঁটে ফেলে হর্ষলকে (Harshal Patel) স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছেন বিসিসিআই-এর নির্বাচকেরা। এরপর আইপিএলেও খারাপ পারফর্ম্যান্স তাঁর চাপ আরও বাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে পেস বোলিং বিভাগে একাধিক বড় নাম রয়েছে ভারতীয় শিবিরে। চোট কাটিয়ে প্রত্যাবর্তনের পথে জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprti Bumrah)। কিছুদিন পরেই তিন ফর্ম্যাটেই প্রথম পছন্দ হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে দুর্দান্ত উন্নতি করেছেন মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj)। অনুশীলনে নিজেকে মেজেঘষে তিন ফর্ম্যাটেই অন্যতম সেরা হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। এবারের আইপিএলে পাওয়ার প্লে’তে বল হাতে ঘাতক হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে সিরাজকে (Mohammed Siraj)। একদিনের ক্রিকেটেও হয়েছেন বিশ্বের এক নম্বর বোলার। তাঁকেও এই মুহূর্তে দলের বাইরে রাখা অসম্ভব।
বুমরাহ ও সিরাজ ছাড়াও রয়েছেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। জাতীয় দলের হয়ে আপাতত পেস ত্রয়ী হিসেবে বুমরাহ-সিরাজ ও শামিকেই ভাবা হচ্ছে। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে অর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh), জয়দীপ উনাদকাট, আকাশ মাধওয়াল, মুকেশ কুমারদেরও। এছাড়াও চতুর্থ পেসারের প্রয়োজনে ভারতের হাতে রয়েছে মুকেশ কুমার, শার্দুল ঠাকুরের (Shardul Thakur) মত তারকা।
এঁদের ভীড়ে আপাতত পিছনের সারিতেই থাকতে হচ্ছে হর্ষলকে। নির্বাচক প্রধান হিসেবে আগরকারের প্রথম দায়িত্ব হতে চলেছে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০ দল ঘোষণা। এছাড়া অগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজের জন্যও ঘোষিত হয় নি দল। এই দুই সিরিজে যদি হর্ষলের জায়গা না হয় তাহলে জাতীয় দলের দরজা চিরতরে বন্ধই হতে পারে তাঁর সামনে।
Also Read: Asia Cup 2023: এশিয়া কাপ জিততে তরুণদের উপরেই ভরসা রাখছেন রোহিত শর্মা, শিঘ্রই করবেন অভিষেক !!