TOP 5: ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে আইপিএল (IPL)। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের হাত ধরে বাইশ গজের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে গ্ল্যামার। এসেছে বিনিয়োগ। ভারতীয় ক্রিকেটকে একের পর এক তারকা ক্রিকেটারও উপহার দিয়ে এসেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ। রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া থেকে হালের যশস্বী জয়সওয়াল বা রিঙ্কু সিং-প্রত্যেকেই তারকার স্বীকৃতি পেয়েছেন আইপিএলের (IPL) আসরেই। দেখতে দেখতে আঠারো মরসুম সম্পূর্ণ করে ফেলেছে টুর্নামেন্ট। ব্র্যান্ড ভ্যালু টপকে গিয়েছে বিশ্বের তাবড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে। দর্শকসংখ্যার নিরিখেও গড়ে ফেলেছে একের পর এক রেকর্ড। আইপিএলকে অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে বিবিএল, সিপিএল বা পিএসএলের মত লীগগুলি। তবে বিসিসিআই আয়োজিত প্রতিযোগিতার গায়ে বিতর্কের আঁচ যে লাগে নি তা নয়। তেমনই পাঁচটি ঘটনার উল্লেখ রইলো এই প্রতিবেদনে।
Read More: নির্বাচকদের ভাবনায় নেই মহম্মদ শামি, তারকা পেসারকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া !!
শ্রীশন্থকে চড় হরভজনের-

আইপিএলের (IPL) প্রথম মরসুমেই বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন হরভজন সিং (Harbhajan Singh)। তিনি তখন ছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। মুম্বই বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচ শেষে যখন হাত মেলাচ্ছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়রা, তখন হঠাৎই প্রতিপক্ষ শিবিরের শান্তাকুমারণ শ্রীশন্থকে (S Sreesanth) একটি চড় মেরে বসেন তারকা অফস্পিনার। ঘটনার আকস্মিকতায় খানিক হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন কেরলের পেসার। তারপর কেঁদে ফেলেন তিনি। তাঁর সেই কান্নাভেজা মুখের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিলো সংবাদমাধ্যমে। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে সতেরো বছর। এতদিন আড়ালেই ছিলো চড় মারার ভিডিও। কিন্তু সম্প্রতি মাইকেল ক্লার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তা প্রকাশ করেছেন আইপিএলের তৎকালীন কমিশনার ললিত মোদী। ফলে আরও একবার চর্চার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে সেই কুখ্যাত ‘চড় কেলেঙ্কারি।’
দেখুন ভিডিও-
Harbhajan Singh slaps Sreesanth incident video out for the first time
Video credit beyond 23 cricket podcast and lalit modi pic.twitter.com/yv1WIuLYBt— Awara__Octopus (@awara__octopus) August 29, 2025
বিরাট-গম্ভীর বাগবিতণ্ডা-

২০১৩ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক পদে ছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) আর বিরাট কোহলি সামলাচ্ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দায়িত্ব। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে একটি লীগ ম্যাচ চলাকালীন কোহলি যখন আউট হয়ে ফিরছিলেন, তখন তাঁর উদ্দেশ্যে নাইটদের টিম হাড্ল থেকে সম্ভবত কিছু বলেছিলেন গম্ভীর। তা মোটেই পছন্দ হয় নি বিরাটের (Virat Kohli)। পথ বদলে সটান নাইট রাইডার্স অধিনায়কের সামনে হাজির হন তিনি। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ চলে বাগ্বিতণ্ডা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরোনর আগেই অবশ্য দুই তারকাকে নিরস্ত করেন মাঠে উপস্থিত অন্যান্য ক্রিকেটাররা। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিলো দুই আম্পায়ারকেও। কোহলি-গম্ভীর দড়ি-টানাটানির শুরুটা এই ঘটনা থেকেই, মনে করেন অনেকে।
নবীন-বিরাট জোর তরজা-

২০২৩ সালের ১ মে একানা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG) ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। সুপারজায়ান্টসের আফগান পেসার নবীন-উল-হকের সাথে তরজায় জড়িয়ে পড়েছিলেন আরসিবি সুপারস্টার বিরাট কোহলি। ম্যাচ চলাকালীনই একপ্রস্থ বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁদের মধ্যে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে খেলা শেষের পর। তর্কাতর্কিতে যোগ দেন লক্ষ্ণৌ দলের তৎকালীন মেন্টর গৌতম গম্ভীর’ও। এই ঘটনার রেশ ছিলো ম্যাচের বেশ কয়েকদিন পর অবধিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন কোহলি ও নবীন। আইপিএলের (IPL) শৃঙ্খলাবিধি ভাঙার জন্য শাস্তি পেয়েছিলেন দু’জনেই। কোহলির ম্যাচ ফি’র ১০০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। নবীন খোয়ান ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি। জরিমানা দিতে হয়েছিলো গম্ভীরকেও।
স্পট ফিক্সিং-এ কলঙ্কিত আইপিএল-

আইপিএলের (IPL) ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় স্পট ফিক্সিং। ২০১৩ সালে অর্থের বিনিময়ে গড়াপেটা করেছেন রাজস্থান রয়্যালসের (RR) তিন ক্রিকেটার, উঠেছিলো অভিযোগ। দিল্লী পুলিশ তদন্তে নেমে গ্রেপ্তারও করে শান্তাকুমারন শ্রীশন্থ (S Sreesanth), অঙ্কিত রাজপুত ও অজিত চাণ্ডিলাকে (Ajith Chandila)। সবধরণের ক্রিকেট থেকে আজীবন নির্বাসিত করা হয় তাঁদের তিনজনকেই। অবৈধ বেটিং চক্রে জড়িত থাকার অপরাধে ধরা পড়েন বিন্দু দারা সিং, হীরে ব্যবসায়ী প্রিয়াঙ্ক শেপানি ও চেন্নাই সুপার কিংস কর্ণধার এন শ্রীনিবাসনের জামাতা গুরুনাথ মইয়াপ্পন। সিএসকে’র টিম প্রিন্সিপাল পদেও আসীন ছিলেন গুরুনাথ। রাজস্থান রয়্যালসের তৎকালীন মালিক রাজ কুন্দ্রাকেও নেওয়া হয়েছিলো হেফাজতে। শাস্তি হিসেবে দুই বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয় রাজস্থান ও চেন্নাইকে।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রুষ্ট ধোনি-

‘ক্যাপ্টেন কুল’কেও মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে আইপিএলের (IPL) আসরে। ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল। জয়পুরের সোয়াই মানসিংহ্ স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে শেষ তিন বলে চেন্নাই সুপার কিংসের প্রয়োজন ছিলো ৮ রান। বেন স্টোকসের একটি ডেলিভারিকে প্রথমে নো-বল ঘোষণা করেন মাঠে উপস্থিত আম্পায়ার। কিন্তু হঠাৎই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন তিনি। আম্পায়ারের মত বদলে রুষ্ট হয়েছিলেন ধোনি (MS Dhoni)। স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই ডাগ-আউট ছেড়ে ঢুকে পড়েন মাঠে। দীর্ঘক্ষণ আম্পায়ারদের সাথে চলে তর্কাতর্কি। যখন মাঠ ছাড়েন, তখনও ক্ষোভ স্পষ্ট ছিলো তাঁর শরীরী ভাষায়। সেই ম্যাচ হেরে যায় চেন্নাই। অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছিলো ধোনি। পরে ঐ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছেন ক্রিকেট কিংবদন্তি।