TOP 3: আরও একটা ফাইনাল এবং আরও একটা হার। বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় নবতম ‘চোকার্স’ লেগেছে ভারতীয় দলেরই গায়ে। ২০১৩ সালে শেষবার বিশ্ব মঞ্চে কোনো বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া’। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে বারবার তীরে এসে তরী ডুবেছে। সাম্প্রতিক অতীতে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি,২০২১ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে হারের কথা স্মরণে রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। সেই তালিকায় গতকাল যুক্ত হলো ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নাম। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে লজ্জার হার জুটলো ভারতের কপালে। প্যাট কামিন্সের দলের বিরুদ্ধে ভারত হারলো ২০৯ রানের ব্যবধানে। হালফিলে ভারতের পারফর্ম্যান্সের ময়নাতদন্ত করলে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথা উঠে আসছে বারবার। বিসিসিআই-এর অন্দরে সচিব জয় শাহের অত্যধিক ক্ষমতা বৃদ্ধিকেই ভারতীয় ক্রিকেটের পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহের হাতে কিভাবে ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে ক্রিকেট সেই ব্যাপারে তিনটি প্রধান কারণ উঠে আসছে চুলচেরা বিশ্লেষণ থেকে।
Read More: WTC Final: “চুনোপুটিদের সবাই হারাতে পারে, বড় ম্যাচেই বোঝা যায়…”, চাঁচাছোলা ভাষায় ভারতীয় দলকে আক্রমণ করলেন সুনীল গাওস্কর !!
ক্রিকেট বিষয়ে অজ্ঞতা-
সাধারণত বিসিসিআই-এর বিভিন্ন পদে দেখা যায় প্রাক্তন ক্রিকেটারদেরই। সেখানে পূর্বে কোনো স্তরে ক্রিকেট খেলার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা ছাড়াই জয় শাহের সচিব পদে অভিষিক্ত হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। আপাদমস্তক রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা জয় শাহের ক্রিকেট প্রশাসনে উত্থান গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে। GCAতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থায় পা রেখেছেন। প্রথা ভেঙে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সচিব হিসেবে দ্বিতীয় টার্ম আদায় করে নিয়েছেন৷ প্রশাসনের অংশ হলেও জয় শাহ’র ক্রিকেটের হাতেকলমে অভিজ্ঞতা নেই। সেই কারণেই ক্রিকেটারদের সুবিধা-অসুবিধা,চাহিদা বুঝতে তিনি সমস্যায় পড়তে বাধ্য। যা আদপে ক্ষতিই করছে ভারতীয় ক্রিকেটের।
IPL-কে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান-
জয় শাহের আমলে ভারতীয় ক্রিকেটে আইপিএল এর ব্র্যান্ডভ্যালু বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। বোর্ডের তরফে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ট-২০ প্রতিযোগিতার দিকে। ২০২২সাল থেকে নতুন দুই দলকে নেওয়া হয়েছে টুর্নামেন্টে। ফলে বেড়েছে ম্যাচের সংখ্যা। গত বছর থেকে ৭০ টি লীগ ম্যাচ এবং চারটি নক-আউট ম্যাচ মিলিয়ে মোট ৭৪টি খেলা আয়োজিত হচ্ছে আইপিএলে। ২০২৩ সালে ৫৯ দিন চলেছে প্রতিযোগিতা। দুই মাসের এই অতিরিক্ত ক্রিকেটের ধকল সইতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। ফলে বাড়ত্র চোট-আঘাত। বাড়ছে ক্লান্তিও। এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ক্রিকেটারদের চোট-আঘাত ও ক্লান্তি ভারতের হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জয় শাহের আমলে আইপিএলের বাড়বাড়ন্তকে দুষেছেন রবি শাস্ত্রীর মত প্রাক্তনী।
ভারতীয় ক্রিকেটকে নিজের ইচ্ছায় চালিত করা-
জয় শাহের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারেরও অভিযোগ এনেছেন অনেকে। বিসিসিআই-এর প্রথা না থাকার দোহাই দিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও কি যুক্তিতে জয় শাহ দ্বিতীয় টার্মে দায়িত্ব পান,সে নিয়ে প্রশ উঠছে। এমনকি ক্রিকেট বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও কি করে তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC)-র সর্বেসর্বা হয়ে বসতে পারেন তা নিয়েও রয়েছে ধন্ধ। গত অক্টোবরে সচিব হিসেবে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হওয়ার পরেই তিনি জানিয়ে দেন এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তান যাবে না ভারতীয় দল। বোর্ড বা সরকারী আধিকারিকদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই কি করে তিনি এই ঘোষণা করতে পারেন,তা নিয়ে জয় শাহের দিকে উঠছে আঙুল। বিভিন্ন সময় এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করে ভারতীয় ক্রিকেটকে পিছনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন জয় শাহ।