TOP 3: ২০২৩ সালের বাকি অংশটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ভারতীয় দলের (Team India) কাছে। এই মুহূর্তে টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটাররা রয়েছেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। সেখানে চলছে টেস্ট সিরিজ। ডোমিনিকায় একটি টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। ত্রিনিদাদ-এর ক্যুইন্স পার্ক ওভালের মাঠে দ্বিতীয় টেস্টটি আয়োজিত হবে। এর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই তিনটি একদিনের ম্যাচ এবং পাঁচ টি-২০ খেলবে ভারতীয় দল। তারপর ক্রিকেটাররা উড়ে যাবে আয়ারল্যান্ডে। সেখানে রয়েছে তিনটি টি-২০ ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৭ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) খেলবে ভারত। দেশে ফিরে এরপর ‘মেন ইন ব্লু’ খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ওডিআই। আর তারপর রয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের মেগা টুর্নামেন্ট-একদিনের বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023)। দেশের মাটিতে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের আর্জি রয়েছে ভারতের সামনে।
২০১৩সালের পর আইসিসি ট্রফি জেতে নি ভারত। ২০১৮ এশিয়া কাপের পর তেমন বড় কোনো সাফল্যও নেই ভাঁড়ারে। বারবার সেমিফাইনাল বা ফাইনাল থেকে খালি হাতে ফেরাটাই যেন অভ্যেস করে নিয়েছে দল। ২০১৯ বিশ্বকাপ, ২০২২ এশিয়া কাপ, ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে শেষ চারের বাধা টপকাতে পারে নি টিম ইন্ডিয়া। আবার ২০২১, ২০২৩-এ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে (WTC) ফাইনালে গিয়ে পরাজিত হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তনটা দেশের মাটিতেই ঘটাতে বদ্ধপরিকর ভারতের ক্রিকেটাররা। আসন্ন মাসগুলিতে একাধিক বড় হার্ডল টপকাতে সেরা ফর্মে থাকা এগারো যোদ্ধাকে প্রয়োজন দলের। তবে বিসিসিআই-এর পক্ষপাতিত্ব এই স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে। অফ ফর্মে থাকা এই তিন ক্রিকেটারকে বয়ে নিয়ে চলা কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারতের (Team India) জন্য।
Read More: Asia Cup 2023: এশিয়া কাপের প্রস্তুতিতে অর্থের অভাব পাকিস্তান বোর্ডের, নাগরিকরা বিমানে ভিক্ষা করতে বাধ্য !!
কে এল রাহুল-
লম্বা সময় ফর্মে নেই কে এল রাহুল (KL Rahul)। গত দশটি টেস্ট ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ১২.৫। শেষ অর্ধশতকের গণ্ডী পেরিয়েছেন ২০২২-এর গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। একদিনের ক্রিকেট এবং টি-২০তেও ব্যাটিং পরিসংখ্যান আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি করে অর্ধশতক করলেও সাম্প্রতিক কালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচে ভালো খেলতে পারেন নি তিনি। এমনকি আইপিএলেও রানের দেখা পাওয়া যায় নি রাহুলের (KL Rahul) ব্যাট থেকে। মন্থর ইনিংস খেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের রোষানলে পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বর্তমানে হিপ ফ্লেক্সর পেশীতে চোট পেয়ে ক্রিকেট থেকে বাইরে রয়েছেন রাহুল। মনে করা হচ্ছে এশিয়া কাপ বা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে দলে ফিরতে পারেন তিনি।
চোটের জন্য বর্তমানে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অংশ না হলেও বিসিসিআই-এর অত্যন্ত পছন্দের ক্রিকেটার রাহুল (Kl Rahul)। একটানা রান খরার পরেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম দুই টেস্টে তাঁকেই প্রথম একাদশে রেখেছিলো দল। ফর্মে থেকেও দলে জায়গা হয় নি তরুণ শুভমান গিলের। নাগপুর এবং দিল্লী টেস্টে হতশ্রী পারফর্ম্যান্স করায় রাহুলদের (KL Rahul) বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সামনে। শেষ দুই টেস্টে না খেললেও স্কোয়াডে ছিলেন রাহুল। এমনকি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালের জন্য যে দল ঘোষনা হয়েছিলো তাতেও জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। চোট সারিয়ে ফেরার পরেই সোজাসুজি টিম ইন্ডিয়াতে যে জায়গা করে নেবেন তিনি, তা বলাই বাহুল্য।
রোহিত শর্মা-
এই তালিকায় থাকবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) নামও। ধুন্ধুমার ব্যাটিং-এর কারণে অনুরাগীদের কাছে ‘হিটম্যান’ বলে পরিচিত রোহিত। কিন্তু গত কয়েকমাসে তাঁর ব্যাটে পুরনো রোহিতের ছায়ামাত্র দেখা গিয়েছে। একেবারেই ফর্মে নেই তিনি। নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম ম্যাচে একটি শতরান করেছিলেন। এরপর অজিদের বিরুদ্ধে একটিও কার্যকরী ইনিংস দেখা যায় নি তাঁর ব্যাটে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ব্যর্থ হয়েছেন। হতাশ করেছেন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচেও বিশেষ রান পান নি তিনি। আইপিএলেও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন। দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দিনকয়েক আগে একটি টেস্ট শতরান করলেও বিশ্বকাপের বছরে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন কিনা রোহিত (Rohit Sharma), তা এখুনি বলা যাচ্ছে না।
ওপেনিং ব্যাটারের পাশাপাশি ভারতীয় দলের অধিনায়কও রোহিত (Rohit Sharma)। নেতা হিসেবেও তাঁর সাফল্যের ঝুলি মোটেও পরিপূর্ণ নয়। গত বছর এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় রোহিতের অধিনায়কত্বে বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি ভারতীয় দল। ছিটকে গিয়েছিলো সেমিফাইনাল থেকেই। এবারও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে প্রায় বিনা যুদ্ধেই খেতাব অস্ট্রেলিয়ার হাতে তুলে দিয়ে এসেছে রোহিতের টিম ইন্ডিয়া (Team India)। তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। উদ্ভাবনী শক্তির অভাব দেখছেন তাঁর মধ্যে অনেকে। ঘরে-বাইরে আক্রমণের মুখে পড়েও দলে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছেন রোহিত (Rohit Sharma)। বিসিসিআই আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে রোহিতকেই চাইছে অধিনায়ক হিসেবে।
হার্দিক পান্ডিয়া-
এই তালিকায় তৃতীয় নাম হার্দিক পান্ডিয়ার। ২০২২ সালে চোট সারিয়ে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন হার্দিক (Hardik Pandya)। আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম প্রচেষ্টাতেই ট্রফি এনে দিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্সকে (GT)। ব্যাটে-বলেও বেশ ক্ষুরধার দেখাচ্ছিলো তাঁকে। নতুন বলে গতি-স্যুইং’এর জাল বিছিয়ে পরাজিত করছিলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। ব্যাট হাতেও বেশ কিছু কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আইপিএলে আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের সুফল পান তিনি। হার্দিককে (Hardik Pandya) সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভবিষ্যতের নেতা চিহ্নিত করে বিসিসিআই। কুডি-বিশের ক্রিকেটে রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে হার্দিক বেশ কিছু সিরিজে অধিনায়কত্বও করেন।
কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার (Team India) পেস বোলিং অলরাউন্ডারের আগুনে ফর্ম বেশীদিন স্থায়ী হয় নি। ২০২৩-এর গোড়া থেকেই ফর্ম হারিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দলের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন। মুম্বইতে একটি একদিনের ম্যাচেও ভারতের নেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স তেমন আহামরি করতে পারেন নি। এছাড়াও বারকয়েক মাঠেই মেজাজ হারিয়ে সতীর্থদের গালিগালাজ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। অফ ফর্ম বা দুর্ব্যবহারের জন্য দল থেকে বাদ দেওয়া হয়, বরং বোর্ডের স্নেহধন্য হার্দিক (Hardik Pandya) বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছেন সীমিত ওভারের দলের অংশ হিসেবে।