TOP 3: শেষের পথে ২০২৩। রাত পোহালেন নববর্ষ। ২০২৪-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ২০২৩-কে ফিরে দেখার ব্যস্ত ক্রিকেটদুনিয়া। বাইশ গজের বিশ্বে একাধিক বড় ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে গত বারো মাসে। জমজমাট অ্যাসেজ প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখা গিয়েছে। আয়োজিত হয়েছে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনাল। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে তিনবার ক্রিকেটের ময়দানে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) জেতার খুব কাছে পৌঁছেও খেতাব হাতের মুঠোয় ধরতে পারে নি টিম ইন্ডিয়া। ফাইনালে বাজিমাত করেছে অস্ট্রেলিয়া। কামিন্স-ম্যাক্সওয়েলদের কুর্নিশ জানিয়েছেন দর্শকেরা। তারিফ কুড়িয়েছেন কোহলি-রোহিতরাও। ঘটনাবহুল ২০২৩-এ অফ ফর্মের অন্ধকার দূর করে নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রতিবেদনে উল্লিখিত তিন ক্রিকেটার।
Read More: TOP 3: ৩ তরুণ ক্রিকেটার যারা ২০২৩ সালে হয়ে উঠেছেন জলন্ত অগ্নিপিন্ড !!
কুলদীপ যাদব-

ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব’কে (Kuldeep Yadav) গত দুই বছর বেশ কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। জাতীয় দলের বৃত্তের বাইরে চলে গিয়েছিলেন ফর্ম হারিয়ে। ২০২১ সালে মাত্র ৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ৫৭ গড়ে নিয়েছিলেন মাত্র ৬ উইকেট। ২০২২-এর শুরুটাও বিশেষ ভালো হয় নি তাঁর। আইপিএল পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতীয় দলে ফেরেন। তা সত্ত্বেও ১১টির বেশী ম্যাচ খেলা হয় নি তাঁর। নেন ১৩ উইকেট। সেরা ছন্দ থেকে তখনও অনেকখানি দূরে ছিলেন কুলদীপ (Kuldeep Yadav)। বাম হাতি স্পিনার নিজেকে ফিরে পান ২০২৩ সালে এসে। বছরের শুরুতেই ইডেন গার্ডেন্সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে।
২০২৩-এ টেস্ট খেলার সুযোগ পান নি কুলদীপ (Kuldeep Yadav)। কিন্তু সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটে দুরন্ত পারফর্ম করেছেন তিনি। টি-২০তে ৫.৯৬ ইকোনমি ও ১৩.১৪ গড়ে মাত্র ৯ ম্যাচে কুলদীপ তুলে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেটের নজিরও রয়েছে। একদিনের ক্রিকেটে ৩০ ম্যাচে ৪.৬১ ইকোনমি রেট ও ২০.৪৮ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৪৯ উইকেট। ২০২৩ ক্যালেন্ডার বর্ষে ৫০ ওভারের ফর্ম্যাটে কুলদীপের (Kuldeep Yadav) চেয়ে বেশী উইকেট পান নি কেউই। একার হাতে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। জিতেছেন এশিয়া কাপের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কারও। হারিয়ে যেতে বসা কুলদীপ নতুন করে সেরাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ২০২৩-এ।
কে এল রাহুল-

ভারতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার কে এল রাহুলের (KL Rahul) ২০২৩ সালের পারফর্ম্যান্সকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। বছরের শুরুর দিকে একেবারেই রানের মধ্যে ছিলেন না তিনি। টেস্ট, একদিনের ম্যাচ হোক বা আইপিএল-রানের মুখ দেখছিলেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির শেষ দুই ম্যাচে তাঁকে বাদ দিতে বাধ্য হয় টিম ম্যানেজমেন্ট। কটা সময় শেষ ১০ টেস্ট ইনিংসে রাহুলের ব্যাটিং গড় দাঁড়িয়েছিলো ১২.৫০’র কাছাকাছি। শতরান বা অর্ধশতকেরও মুখ দেখেন নি লম্বা সময়। আইপিএল চলাকালীন ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট’ও পান তিনি। ছিটকে যান ক্রিকেট থেকে।লন্ডনে অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ রিহ্যাব চলেছিলো রাহুলের (KL Rahul)। বেঙ্গালুরুর এনসিএ থেকে ফিট সার্টিফিকেট পাওয়ার পর রাহুল কামব্যাক করেন এশিয়া কাপের ম্যাচে।
শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত টুর্নামেন্ট থেকে ভিন্ন অবতারে দেখা যায় তাঁকে। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করেন। তারপর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেন ম্যাচ জেতানো ৯৭* রান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শতরান করেন। ফাইনালেও লড়াকু অর্ধশতক আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ১০ ইনিংসে প্রায় ৭৬ গড়ে ৪৫২ রান করেন রাহুল (KL Rahul)। এরপর অধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতেন। টেস্টেও সেঞ্চুরিয়নের কঠিন উইকেটে ১০১ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে রাহুল বুঝিয়ে দেন যে জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছেন তিনি। ২০২২ সালে ৩০ ম্যাচে ২৫.৬৮ গড়ে তিনি করেছিলেন ৮২২ রান। ছিলো ৯টি অর্ধশতক। ২০২৩-এ সেই ৩০ ম্যাচ খেলেন রাহুলের সংগ্রহ ১২০৩ রান। গড় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭.২৮। ৭টি অর্ধশতকের সাথে যুক্ত হয়েছে ৩টি শতরান’ও।
বিরাট কোহলি-

তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই তালিকায় থাকবেন ভারতীয় মহাতারকা বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ২০১৯-এর শেষাংশ থেকে ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় বাইশ গজে কেরিয়ারের কঠিনতম পর্ব কাটিয়েছেন তিনি। ‘রান মেশিন’ নামে পরিচিত কোহলির ব্যাটে রানের ধারা শুকিয়ে গিয়েছিলো প্রায়। দেশে হোক বা বিদেশে, কিছুতেই চেনা ছন্দে ফেরা হচ্ছিলো না তাঁর। ২০২০-তে ৩৬, ২০২১-তে ৩৭-এর ঘরে নেমে গিয়েছিলো ব্যাটিং গড়। ২০২২-এর প্রথমার্ধেও রানের মুখ দেখেন নি তিনি। আইপিএলেও হয়েছিলেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। অবশেষে অফ ফর্মের শৃঙ্খল ভেঙে কোহলি (Virat Kohli) বেরোন এশিয়া কাপ চলাকালীন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসে কাঙ্ক্ষিত শতরান। এরপর আর রোখা যায় নি তাঁকে। নতুন উদ্যমে রানের শৃঙ্গ জয়ের পথে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
২০২২-এ বিরাট (Virat Kohli) শেষ করেছিলেন ৩৭ ম্যাচে ৩৮.৫১ গড়ে ১৩৪৮ রান সঙ্গে করে। ২০২৩-এর শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে তিনি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জোড়া ওডিআই শতক করেন। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আসে ১৮৬। আইপিএলেও করেন ৬৩৯ রান। এরপর বিশ্বকাপের আসর কোহলি মাতিয়ে দেন ব্যাট হাতে। ৩টি শতরান ও ৬টি অর্ধশতরান সহ করেন ৭৬৫। এক সংস্করণে রানের নিরিখে ছাপিয়ে যান শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) রেকর্ড। ‘মাস্টার ব্লাস্টারের’ সামনেই তাঁকে টপকে ৫০ ওডিআই শতকেরও মালিক হয়ে যান কোহলি। গত দুই-তিন বছরে একাধিকবার বিরাট অধ্যায় সমাপ্ত বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মুখে তালা লাগিয়ে ৩৫ ম্যাচে ৬৬.০৬ গড়ে ২০৪৮ রান ঝুলিতে নিয়ে বছরে ইতি টানলেন বিরাট।