বিগত কয়েক মাস ধরেই অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। বিরাট কোহলির হাত ধরে ভারত আইসিসি ট্রফি না জেতায় সরানো হয়েছিলো তাঁকে। বদলে অধিনায়ক করা হয়েছিলো রোহিতকে। কিন্তু নেতা হওয়ার পর তিনটি বড় টুর্নামেন্টে দেশের নেতৃত্বভার সামলালেও একটিও দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেন নি তিনি।
উলটে ২০২২-এর এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ ও ২০২৩-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে লজ্জার হার জুটেছে ভারতের ভাগ্যে। তিন প্রতিযোগিতাতেই রোহিতের দল নির্বাচন এসেছে প্রশ্নের মুখে। অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছেন ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাবনাচিন্তায় বদল আনতে পারেন না রোহিত (Rohit Sharma)। তাঁর অধিনায়কত্বে অভাব রয়েছে প্ল্যান-বি’র।
রোহিতের (Rohit Sharma) বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কালে কখনও উঠেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আবার কখনও প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যোগ্য খেলোয়াড়ের সামনে জাতীয় দলের দরজা বন্ধ রেখে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। এই প্রতিবেদনে রইলো তেমনই তিন ক্রিকেটারের হদিশ, যাঁরা রোহিত শর্মা নেতা হওয়ার পর হয় দলে নিজেদের জায়গা হারিয়েছেন, অথবা স্কোয়াডে থাকলেও নিজেদের দলে প্রতিষ্ঠা করতে লড়তে হচ্ছে অসম লড়াই ।
Rea More: বিসিসিআইয়ের উপেক্ষার জবাব দিতে এবার বিদেশে খেলছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান, প্রথম ম্যাচেই তুললেন ছয়-চারের ঝড় !!
শিখর ধাওয়ান-
২০২২ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষবার একদিনের ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছিলো শিখর ধাওয়ানকে (Shikhar Dhawan)। এরপর ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে। নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাত্র কয়েকটি ম্যাচের ব্যর্থতাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর সামনে। ওপেনার হিসেবে আচমকাই জাতীয় দলে আসন টলে যায় তাঁর। পরিসংখ্যান বলছে ২০২২ সালে ২২টি একদিনের ম্যাচে ৩৪.৪০ ব্যাটিং গড়ে ৬৮৮ রান করেছেন ধাওয়ান। রয়েছেন ৬টি অর্ধশতকও। তার আগের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ এবং ২০২১ সালে ধাওয়ানের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৫৮.০০ এবং ৫৯.৫০। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার পর পরিসংখ্যানের কথা মাথায় রাখে নি টিম ম্যানেজমেন্ট। সরাসরি বাইরের রাস্তা দেখানো হয়েছে বাঁ-হাতি ব্যাটারকে।
ওপেনার হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটে দ্বিতীয় সফলতম জুটি রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং শিখর ধাওয়ান (Shikhar Dhawan)। কিন্তু বর্তমান ভারত অধিনায়ক রোহিত, গত এক দশকের ওপেনিং পার্টনার শিখরকে ছেঁটে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি। শিখরের বদলে শুভমান গিলকে জায়গা দিয়েছেন ইনিংসের শুরুতে। অপর প্রান্তে ফর্ম বিশেষ ভালো না থাকা সত্ত্বেও ব্যাট হাতে নিজের জায়গা অবশ্য হারান নি রোহিত। বরং শুভমানের পাশাপাশি যশস্বী জয়সওয়াল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়দের মত তরুণদের সুযোগ দিয়ে শিখরকে (Shikhar Dhawan) অবসরের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি। আইপিএলে ভালো পারফর্ম করার পর শোনা গিয়েছিলো এশিয়ান গেমসের দলে ফিরবেন শিখর। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছে বিসিসিআই।
ভুবনেশ্বর কুমার-
ভারতের জার্সিতে অন্যতম সফল বোলার ভুবনেশ্বর কুমার (Bhuvneshwar Kumar) । ২১ টেস্টে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। ১২১ একদিনের ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৪১। কুড়ি-বিশের খেলায় ভুবি ৮৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৯০ উইকেট। একটা সময় টি-২০তে ভারতের সফলতম বোলার ছিলেন তিনিই। স্যুইং-এর জাদুতে প্রতিপক্ষকে মাত করতে সিদ্ধহস্ত ভুবনেশ্বরকে (Bhuvneshwar Kumar) বেশ পছন্দ করতেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। একদিনের ক্রিকেট এবং টি-২০তে নিয়মিত সুযোগ দিতেন তিনি। ২০১৯ সালে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও ছিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে মাত্র ৫.২০ ইকোনমি রেটে তুলে নেন ১০ উইকেট। ২০২১ সালের টি-২০ বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলে নিয়মিত ছিলেন তিনি।
তবে বিরট জমানা শেষে রোহিত অধিনায়ক হলে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের গতিপ্রকৃতি বদলে যায় ভুবনেশ্বরের। ২০২২-এর জানুয়ারি মাসের পর থেকেই একদিনের দলে ব্রাত্য করা হয় ভুবনেশ্বরকে। জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah) চোটের জন্য বাইরে গেলেও ফেরানো হয় নি ভুবিকে। বরং উমেশ যাদবকে একদিনের ম্যাচে সুযোগ দেওয়ার পথে হেঁটেছিলেন রোহিত। আইপিএলে ভালো পারফর্ম্যান্স করে টি-২০তে নিজের জায়গা টিকিয়ে রেখেছিলেন ভুবনেশ্বর (Bhuvneshwar Kumar) ।
কিন্তু এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে ১৯ রান খরচ করার পর থেকেই ভারতীয় দলের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। টি-২০ বিশ্বকাপে ভালো করলেও সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পর দায় চাপানো হয় তাঁর ওপর। কু ইংল্যান্ড ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া আর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh), মহম্মদ শামিরা (Mohammed Shami) এরপরেও নিয়মিত ভারতীয় জার্সি গায়ে চাপালেও ২০২৩-এ একটি ম্যাচে ভারতের হয়ে খেলা হয় নি ভুবনেশ্বরের।
অক্ষর প্যাটেল-
গত কয়েকটি ম্যাচে বেশ ভালো পারফর্ম্যান্স করেছিলেন ভারতের স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। ব্যাটে-বলে ভারতীয় দলীর ভরসা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের খেলায় জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া অস্টেরলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেও বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ ইনিংস এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। অক্ষরকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলেই মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে সুযোগ দিলেও উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওডিআই’তে তাঁকে নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার পথে হাঁটলেন না অধিনায়ক রোহিত এবং কোচ দ্রাবিড়ের জুটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে অক্ষর প্যাটেলকে খেলিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। কেনসিংটন ওভালের স্পিন সহায়ক উইকেটে তিন অলরাউন্ডাররের ভাবনা ছিলো ভারতের। রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja) এবং হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিলো অক্ষরকে (Axar Patel)। বিরাট-রোহিত না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারেও অনেকখানি তুলে আনা হয়েছিলো অক্ষরকে। চার নম্বরে মাঠে নামানো হয়েছিলো তাঁকে। অনভ্যস্ত পজিশনে মাত্র ১ রান করে রোমারিও শেপার্ডের (Romario Shepherd) বলের বাউন্স বুঝতে না পেরে উইকেটরক্ষক শে হোপের (Shai Hope) হাতে ক্যাচ তুলে দেন অক্ষর। এরপর তৃতীয় ম্যাচে তাঁকে ছেঁটে ফেলে দল। বুঝিয়ে দেওয়া হয় আসন্ন বিশ্বকাপে অক্ষরের উপর আস্থা রাখছে না ভারত।