TOP 3: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পরে হলিডে মোডে ছিলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ক্রিকেটারের। প্রায় এক মাসের বিরতির পর আসন্ন ১২ জুলাই থেকে মাঠে ফিরতে চলেছেন তাঁরা। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রেগ ব্রেথওয়েটদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ক্যারিবিয়ান সফর শুরু করতে চলেছে ভারতীয় দল। ডোমিনিকার মাঠে প্রথম টেস্টের পর ২০ তারিখ থেকে ত্রিনিদাদের ক্যুইন্স পার্ক ওভালে আয়োজিত হতে চলেছে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। এর পর টিম ইন্ডিয়া তিনটি একদিনের ম্যাচ এবং পাঁচটি টি-২০ও খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই তিন সিরিজের জন্যই দল বেছে নিয়েছে বিসিসিআই। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara), উমেশ যাদব (Umesh Yadav)। জায়গা পেয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল (Yashavi Jaiswal), ঋতুরাজ গায়কোয়াড়।
দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে সরফরাজ খানকে (Sarfaraz Khan) সুযোগ না দেওয়া নিয়ে একপ্রস্থ বিতর্ক হয়েছে। একদিনের সিরিজের দল বেছে নেওয়া হয়েছে আসন্ন বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। ফেরানো হয়েছে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (Ruturaj Gaikwad), সঞ্জু স্যামসনদের (Sanju Samson)। প্রথমবার জায়গা পেয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল, মুকেশ কুমার। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অধিনায়কত্বের ভার দুই ফর্ম্যাটেই ধরে রেখেছেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। গত বছরের এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ এবং এই বছরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারের পর অধিনায়কের আসন টলমল করছে। উঠছে সরানোর দাবী। নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মনেপ্রাণে জিততে চাইবেন ভারত অধিনায়ক। আর সেই কৃতিত্ব অর্জন করতে রোহিতের (Rohit Sharma) তুরুপের তাস হতে পারেন দলের তিন তারকা বোলার।
Read More: World Cup 2023: ভারতে আসার প্রশ্নে সটান ‘না’ পাক ক্রীড়ামন্ত্রীর, বিশ্বকাপ নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত !!
মহম্মদ সিরাজ-
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচে গতিময় ফাস্ট বোলিং-এর ক্ষেত্রে ভারতের বড় বাজি হতে পারেন মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj)। ভারতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে দেখা যাবে না জসপ্রীত বুমরাহ’কে (Jasprit Bumrah)। চোটের সাথে যুদ্ধ করে মাঠে ফেরার লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। বিশ্রামে রয়েছেন মহম্মদ শামি’ও (Mohammed Shami)। দুই সিনিয়র বোলারের অনুপস্থিতিতে সিরাজকেই দেখা যাবে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) পেস ব্যাটারির নেতার ভূমিকায়। জয়দেব উনাদকাট, মুকেশ কুমারদের সাথে নিয়ে ডোমিনিকা ও ত্রিনিদাদের পিচে আগুন ঝরাতে পারেন তিনি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের প্রথম কয়েক বছর ভারতের হয়ে কেবল টি-২০ খেলেছিলেন সিরাজ। বিশেষ সফল হন নি। ২০২০’র বক্সিং ডে টেস্টে প্রথম লাল বল হাতে মাঠে নামার সুযোগ হয় তাঁর। এরপর আর পিছন ফিরে দেখেন নি তিনি।
কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়কে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে সিরাজ (Mohammed Siraj) তিন ফর্ম্যাটেই টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অন্যতম সেরা বোলার হয়ে উঠেছেন। একদিনের ক্রিকেটে আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরেও উঠে এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। টেস্টে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে দুর্দান্ত বোলিং করার নজির আছে তাঁর। অজিদের বিপক্ষে ব্রিসবেনের গাব্বায় ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসে জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছিলো হায়দ্রাবাদের পেসারকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যা কোনো ভারতীয় বোলারের ‘ক্রিকেটের মক্কা’য় শ্রেষ্ঠতম পারফর্ম্যান্স। বর্তমানে বেশ ভালো ছন্দে আছেন সিরাজ (Mohammed Siraj)। নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বা তার বেশী গতিতে বল করছেন। সিরাজের অস্ত্র তাঁর লাইন এবং লেন্থ। নিজের পরিকল্পনার সফল রূপায়ন করতে পারলে উইন্ডিজের বিপক্ষে ভারতের বোলিং তারকা হতে চলেছেন সিরাজই।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন-
বল হাতে গত দশকে ভারতের সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনার নিঃসন্দেহে রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। ঘূর্ণির জালে ব্যাটারদের আটকে মুহূর্তে ম্যাচের রঙ বদলাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ৯২ টেস্টে ২৩.৯৩ গড়ে ৪৭৪ উইকেট নেওয়া অশ্বিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও হয়ে উঠতে পারেন ভারতের ট্রাম্প কার্ড। আইসিসি বিশ্বর্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে থাকা অশ্বিনকে (Mohammed Siraj) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কেনিংটন ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাইরে রেখে ভুগেছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। টানা দ্বিতীয়বার টেস্টে বিশ্বসেরা হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলো দল। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে একই ভুল দ্বিতীয়বার করবেন না রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। ডোমিনিকা এবং ত্রিনিদাদ, দুই ম্যাচেই প্রথম একাদশে জায়গা হবে অশ্বিনের। রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) সাথে স্পিনার হিসেবে থাকবেন তিনিই। বাইরে বসতে হতে পারে অক্ষর প্যাটেলকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বললেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে জোয়েল গার্ণার (Joel Garner), ম্যালকম মার্শাল (Malcolm Marshall), অ্যান্ডি রবার্টসদের স্মৃতি। আগুনের পেসের ধাক্কায় ব্যাটারদের কুপোকাত করতে জুড়ি মেলা ভার ছিলো তাঁদের। গতির স্বর্গরাজ্য ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) ঘূর্ণি কিন্তু যথেষ্ট সফল। মাত্র ৪ টেস্ট তিনি খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। নিয়েছেন ২৯ উইকেট। এক ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার নজিরও আছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অশ্বিনের অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষ। ১১ টেস্ট খেলে তাদের বিরুদ্ধে ৬০ উইকেট রয়েছে তাঁর। এমনকি ঘরে-বাইরে মিলিয়ে ব্যাট হাতে শতরানও রয়েছে চারটি। সুতরাং আসন্ন সিরিজেও উইন্ডিজের রথ অশ্বিনেই আটকাবে বলে মনে করাই যায়।
মুকেশ কুমার-
এই তালিকায় তৃতীয় নাম হতে পারে বাংলার মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। প্রথমবার সিনিয়র দলের হয়ে টেস্ট সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে জায়গা পেলেও মাঠে নামার সুযোগ আসে নি। তবে শামি, বুমরাহের মত অভিজ্ঞ পেসার না থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মুকেশের মাঠে নামার সম্ভাবনা যথেষ্টই। নতুন বল হাতে মহম্মদ সিরাজের (Mohammed Siraj) সঙ্গী হতে পারেন তিনি। মুকেশের লাইন এবং লেন্থ বেশ নিয়ন্ত্রিত। গত কয়েক বছর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
৩৯ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ঘরোয়া একদিনের ম্যাচে ২৪ ম্যাচে রয়েছে ২৬ উইকেট। ইকোনমিও বেশ ভালো। মাত্র ৫.১১। সুযোগ পেয়েছেন ভারতের ‘এ’ দলেও। গত মরসুমে ছিলেন দিল্লী ক্যাপিটালস (DC) দলের নেটবোলার। অবিশ্বাস্য উত্থানে এবার সেই দিল্লী দলেই ৫.৫ কোটি টাকার বিনিময়ে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার পেসার। খেলেওছেন নিয়মিত। ভারত-এ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশের-এ দলের বিরুদ্ধে ভালো বোলিং করেছেন তিনি। সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেও জাত চেনাতে পারেন তিনি।