গত কয়েক বছরে টি-২০ ক্রিকেটের ব্যকরণ যদি কেউ বদলে দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। মুম্বইয়ের ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা করেছিলেন বেশ খানিকটা দেরীতেই। কিন্তু সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখাতে বিশেষ অপেক্ষা করেন নি তিনি। নিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই ইংল্যান্ডের জোফ্রা আর্চারকে (Jofra Archer) আছড়ে ফেলেছিলেন ফাইন লেগ বাউন্ডারির বাইরে। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। আন্তর্জাতিক টি-২০’র বেতাজ বাদশাহ হয়ে উঠেছেন তিনি। এবি ডিভিলিয়ার্সের মতই মাঠের প্রতিটি কোণায় বড় শট মারতে সক্ষম সূর্যকুমার (Suryakumar Yadav)। ফলে অনুরাগীরা ভালোবেসে ‘মিস্টার ৩৬০’ তকমাও দিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে অনবদ্য পারফর্ম করে ইতিমধ্যেই বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে এর মধ্যে তিনটি শতরান করে ফেলেছেন সূর্যকুমার (Suryakumar Yadav)। এর মধ্যে দুটি এসেছে বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অন্যটি দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশী ছক্কা হাঁকানো বা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারের ১০০০ টি-২০ রানের গণ্ডী পেরোনোর মত রেকর্ডগুলিতেও নিজের অধিকার কায়েম করেছেন সূর্য। আইপিএলে এবার শুরুটা ভালো না হলেও সময় যত এগিয়েছে সেরা ছন্দ খুঁজে নিয়েছেন সূর্যকুমার (Suryakumar Yadav)।
তবে টি-২০তে তিনি যতটা দড়, অন্যান্য ফর্ম্যেটে তত সাবলীল মনে হয় নি সূর্যকুমারকে। একদিনের ক্রিকেটে পরপর তিন গোল্ডেন ডাক করে লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। টেস্টে সুযোগ পেয়েও করেছেন মাত্র ৯ রান। দীর্ঘতম ফর্ম্যাটগুলিতে ধারাবাহিক না হওয়ায় সূর্যকুমারের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার সীমিত হয়ে যেতে পারে টি-২০’র মধ্যেই। অন্য দুই ফর্ম্যাটে তাঁর জায়গা কেড়ে নিতে পারেন তিলক বর্মা (Tilak Varma)।
Read More: World Cup 2023: ভারতের বিশ্বকাপ দল বেছে নিলেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর, অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে ফেরানোর দাবী ভারতীয় প্রাক্তনীর !!
সতীর্থ তিলক হবেন সূর্যকুমারের বিকল্প-
হায়দ্রাবাদের বছর কুড়ির তরুণ তিলক বর্মা (Tilak Varma) বেশ নজর কেড়েছেন নিজের স্বল্প দিনের পেশাদার ক্রিকেট কেরিয়ারে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে সূর্যকুমারের সাথেই খেলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। মিডল অর্ডারে পাওয়ার হিটিং-এ তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এবারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮৪ রান করে মুম্বইকে লড়াইতে রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন তিনি। বিশেষ করে গুজরাত টাইটান্সের (GT) বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ১৪ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটি চোখে লেগে রয়েছে সকলের। অনেকেই তাঁকে বাঁ-হাতি এবি ডিভিলিয়ার্স বলেও ডাকতে শুরু করেছেন। আইপিএল কেরিয়ারে ২৫ ম্যাচে প্রায় ১৪৪ স্ট্রাইক রেট ও ৩৯ গড়-সহ ৭৪০ করেছেন তিনি।
সমগ্র টি-২০ কেরিয়ারে তিলক বর্মার (Tilak Varma) ব্যাট থেকে এসেছে ৪৭ ম্যাচে ১৪১৮ রান। ব্যাটিং গড় ৩৮-এর আশেপাশে। স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫১। তবে তাঁর সবচেয়ে ভালো দিক হলো টি-২০’র পাশাপাশি বাকি দুই ফর্ম্যাটেও ধারাবাহিক তিনি। লিস্ট-এ, অর্থাৎ ঘরোয়া একদিনের খেলায় ২৫ ম্যাচে ১২৩৬ রান রয়েছে তিলক বর্মার। ব্যাটিং গড় ৫৬.১৮। এর মধ্যে পাঁচটি শতরান এবং পাঁচ অর্ধ-শতকও সামিল।
প্রথম শ্রেণির খেলাতেও প্রায় ৩৭ ব্যাটিং গড় তাঁর। একটি শতরান ও ২টি অর্ধশতকও রয়েছে। ৯ ম্যাচে রান করেছেন ৫২৩। সদ্যসমাপ্ত দলীপ ট্রফি (Duleep Trophy) ফাইনালে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে পশ্চিমাঞ্চল দলের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে লড়াকু ৪০ রান করেন তিনি। অধিনায়ক হনুমা বিহারীর (Hanuma Vihari) সাথে জুটি গড়ে দলকে পতনের হাত থেকে বাঁচান। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল জার্সিতে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৯ এবং ৪ রান করেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। টি-২০তে আপাতত সূর্য এগিয়ে থাকলেও বাকি দুই ফর্ম্যাটে ফর্মে বিচারে এগিয়ে রয়েছেন তিলকই।
ইতিমধ্যেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তিলক-
হায়দ্রাবাদের তরুণের উপর জাতীয় দলের নজর যে রয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের টি-২০ দল ঘোষণার দিনই। প্রথমবার টিম ইন্ডিয়াতে ডাক পেয়েছেন তিলক বর্মা (Tilak Varma)। এখনও ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামতে পারেন নি তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় সুখবরও পেয়েছেন এরই মধ্যে। এবারই প্রথম এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দল পাঠাচ্ছে ভারত। বিশ্বকাপের জন্য ব্যস্ততা থাকার দরুণ সিনিয়র ক্রিকেটাররা যেতে পারছেন না এই টুর্নামেন্টে। সেহেতু দ্বিতীয় সারির পুরুষদের দল পাঠাচ্ছে বিসিসিআই। ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের (Ruturaj Gaikwad) নেতৃত্বে চীনের হাংঝৌয়ের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবে দল। ১৯তম এশিয়ান গেমসেও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিলক বর্মা (Tilak Varma)। ‘মেন ইন ব্লু’র জার্সিতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাঁর অভিষেক হয়, নাকি অপেক্ষা করতে হয় চীন সফর অবধি, সেদিকেই এখন থাকবে নজর।