Team India: ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে বর্তমানে চলছে টানাপোড়েন। গত বছরের এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল বিশেষ দাগ কাটতে পারে নি। হেরেছিলো সেমিফাইনালে গিয়ে। এই বছরেও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কেনিংটন ওভালের মাঠে হেরেছেন ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। গত বছর থেকেই রোহিতকে সরিয়ে নতুন অধিনায়কের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবীতে সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছিলো একদল সমর্থককে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের হারের পর থেকে সেই দাবীর সমর্থনে সুর আরও চড়িয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে রোহিত শর্মার বয়স ছুঁয়েছে ৩৬। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখনি নয়া অধিনায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হোক, চাইছেন তাঁরা। তবে ২০২৩ এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের আগে নেতা বদলের ভাবনা যে নেই তা বুঝিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
আপাতত অধিনায়ক পদে রোহিতের (Rohit Sharma) চাকরি সুরক্ষিত হলেও ভবিষ্যতের ভাবনা যে বোর্ডের অন্দরে চালু হয়ে গিয়েছে তা পরিষ্কার গত বছর থেকেই। সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলে টি-২০ ক্রিকেটে নতুন মুখদের জায়গা দেওয়ার পথে হেঁটেছে ভারত। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya)। তাঁর নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চারটি সিরিজ খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। অপরাজিত রয়েছেন নেতা হার্দিক। একদিনের ক্রিকেটেও নয়া সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁকে। রোহিত পরবর্তী সময়ে তাঁকেই যে অধিনায়ক ভাবা হচ্ছে তা একপ্রকার নিশ্চিত। বিসিসিআই-এর এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত হতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। মাঠে মাঝেমধ্যেই মাথা গরম করতে দেখা গেছে হার্দিককে। কখনও কখনও সতীর্থদের প্রতিও কটূক্তি করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। বদমেজাজি হার্দিক নয়, সাফল্যের জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) মত শীতল মস্তিষ্কের একজন নেতা দরকার, এমনটাই মত তাঁদের। একমাত্র সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson) সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করছেন তাঁরা।
Read More: “টেস্ট ক্রিকেটের সাথে ও…” লাল বলের ফর্ম্যাটে হার্দিক পান্ডিয়ার ভবিষ্যত সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য রবি শাস্ত্রীর !!
জাতীয় দলে অনিয়মিত সঞ্জু-
২০১৫ সালে ভারতের জার্সিতে পথচলা শুরু হয়েছিলো কেরলের সঞ্জু স্যামসনের (Sanju Samson)। কিন্তু আট বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৭টি। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পর আরও ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে একদিনের ক্রিকেটে মাঠে নামার জন্য। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলের আঙিনায় একের পর এক দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করা সত্ত্বেও জাতীয় দলে সুযোগ বারবার অধরা থেকে গিয়েছে তাঁর জন্য। দেখা গিয়েছে একটি বা দুটি ম্যাচে দলে তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। সেগুলিতে ব্যাট হাতে ভালো খেললেও কোনো অজ্ঞাত কারণে ছেঁটে ফেলা হয়েছে তাঁকে। সঞ্জুকে উইকেটরক্ষক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরি বলেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু ঈশান কিষণ, কে এস ভরতদের নিয়মিত জায়গা দেওয়া হলেও ফর্মে থাকা সঞ্জু (Sanju Samson) রয়ে গিয়েছেন বাতিলেরই খাতায়। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি একদিনের ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। কঠিন পিচে ৩৬ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেও পরের ম্যাচে বাদ পড়তে হয়। অবশেষে ২০২৩ সালে এসে তাঁর ভাগ্যাকাশে সামান্য আলো দেখা গিয়েছে। এই বছর বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পেয়েছেন তিনি। রয়েছেন ক্যাটেগরি-সি’তে।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবেও ভালো বিকল্প হতে পারেন সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। ইতিমধ্যেই নিজের অধিনায়কত্বের দক্ষতা আইপিএলের মঞ্চে প্রমাণ করেছেন তিনি। ২০২২ সালে তিনি তাঁর দল রাজস্থান রয়্যালসকে নিয়ে গিয়েছিলেন আইপিএলের ফাইনালে। অধিনায়ক হিসেবে তরুণদের সুযোগ দেওয়ার প্রতি বরাবর আগ্রহ রয়েছে তাঁর। এই বছর সঞ্জুর (Sanju Samson) অধিনায়কত্বেই নিজেদের মেলে ধরেছেন যশস্বী জয়সওয়াল,ধ্রুব জুড়েলরা। তাই বলা চলে সঞ্জু দেশের অধিনায়ক হলে ভারতীয় দলের দরজাও নবাগতদের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। নিজের কেরিয়ারের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই নবাগতদের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে পারেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেক যখন হয়েছিলো তখন নেতা ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এরপর বিরাট কোহলি জমানা গিয়েছে, নেতৃত্ব সামলেছেন রোহিত শর্মা। এবং বর্তমানে চলছে হার্দিকের সময়। তবুও অধিনায়কের আস্থা অর্জন করতে পারেন নি তিনি নিজে। গত জানুয়ারীতে শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম ম্যাচে খেলালেও চোটের কবলে পড়া সঞ্জুকে পরের সিরিজগুলিতে জায়গা দেন নি হার্দিক।
ভারতের হয়ে সঞ্জুর পরিসংখ্যান-
২০২১ সালে একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবার ভারতের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। এরপর খুব বেশী সুযোগ পান নি তিনি। স্বল্প সুযোগে বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেললেও বেশ কয়েকবার তাঁর নাম লেখা হয়েছে বাদের তালিকায়। এখনও অবধি তিনি মাত্র ১১ টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন ভারতের হয়ে। করেছেন ৩৩০ রান। সর্বোচ্চ ৮৬। ব্যাটিং গড় ৬৬.০০। ভারতীয়দের মধ্যেম তাঁর সমান ব্যাটিং গড় নেই কোনো তারকারই। কাছাকাছু রয়েছেন কেবল শুভমান গিল (Shubman Gill)। তাঁর গড় ৬৫.৫। ২ টি অর্ধশতরানসহ সঞ্জুর (Sanju Samson) স্ট্রাইক রেট’ও দুর্দান্ত। একদিনের ম্যাচে ১০৪.৭৬ স্ট্রাইক রেট তাঁর। টি-২০ ম্যাচ তিনি খেলেছেন ১৭ টি। করেছেন ৩০১ রান। রয়েছে একটি অর্ধশতক। বছরের গোড়ায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো তাঁকে। প্রথম ম্যাচে ৫ রান করে আউট হন তিনি। ফিল্ডিং করতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়ে ছিটকে যান। সঞ্জুর (Sanju Samson)বদলি হিসেবে জিতেশ শর্মাকে (Jitesh Sharma) দলের সাথে যুক্ত করা হয়।