T20 World Cup: কানাডার বিরুদ্ধে বড় রান তাড়া করে যখন সহজেই জিতেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তখনই বিশেষজ্ঞদের অনেককে বলতে শোনা গিয়েছিলো যে টুর্নামেন্টের ‘কালো ঘোড়া’ হতে পারে তারা। সেই ভবিষ্যদ্বাণী যে নেহাৎ অত্যুক্তি নয় তা আজ প্রমাণ করে দেখালো তারা। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আজ ভারতীয় বংশোদ্ভুর মোনাঙ্ক প্যাটেলের নেতৃত্বে ইতিহাস তৈরি করলো আমেরিকা দল। ২০০৯-এর টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) চ্যাম্পিয়ন, ২০০৭ ও ২০২২-এর ফাইনালিস্ট পাকিস্তানের সাথে সমানে সমানে লড়ে গিয়ে শেষমেশ সুপার ওভারে গিয়ে তাদের হারিয়েই মাঠ ছাড়লো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। টসে জিতে প্রথমে বোলিং করে বাজিমাত করলো তারা। ৯ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তার আগে আজকের হার নিঃসন্দেহে জোর ধাক্কা দিলো বাবর-বাহিনীকে।
Read More: IPL এর ফর্ম উধাও, প্রথম ম্যাচের পরেই কোহলিকে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন !!
জমজমাট ম্যাচে দেখা গেলো টাই-
খাতায়-কলমে অনেকখানি এগিয়ে থাকলেও মাঠে তার প্রতিফলন আজ শুরু থেকেই দেখাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোলিং-এর বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায় ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ানকে। মাত্র ৯ রান করেন তিনি। এরপর ৩ করে ফেরেন উসমান খান’ও। ফখর জামান, আজম খান-রান পান নি কেউই। প্রথমে হাল ধরেছিলেন বাবর আজম। তিনি ৪৪ করলেও খরচ করেন ৪৩ বল। আজকের ম্যাচে তাঁর মন্থর ইনিংস নিঃসন্দেহে আসবে আতসকাঁচের তলায়। শেষবেলায় শাদাব খানের ঝোড়ো ৪০ ও শাহীন শাহ আফ্রিদির ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে পৌঁছে দেয় ২০ ওভারে ১৫৯ রানে। ১৪ বলে ১৮ রান করেন ইফতিকার আহমেদও। আমেরিকার হয়ে নস্থুশ কেঞ্জিগে ৩টি ও সৌরভ নেত্রভালকার ২টি উইকেট নেন। আলি খান ও জসদীপ সিং-এর ঝুলিতে জমা পড়ে ১টি করে উইকেট।
১৬০-এর লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ ভাবে শুরুটা করেছিলো আমেরিকা। শাহীন-নাসিম-হারিস-আমিরের পেস চতুর্ভুজও বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি মোনাঙ্ক প্যাটেল, আন্দ্রিয়াস গাউসদের বিরুদ্ধে। ১২ রানের মাথায় ওপেনার স্টিভেন টেলর ফিরলেও অধিনায়ক মোনাঙ্ক ও আন্দ্রিয়াস গাউসের পার্টনারশিপে ভর দিয়ে জয়ের দিকে এগোচ্ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ম্যাচে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যায় তাঁরা আউট হওয়ার পর। আমিরের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এর দৌলতে ম্যাচে ফেরে তারা। শেষ ওভারে আমেরিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১৫ রান। হারিস রউফের ওভারে অ্যারন জোনস ও নীতিশ কুমার সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন ১৪ রান। শেষ বলে চার মেরে আমেরিকাকেও ১৫৯ রানে পৌঁছে দেন নীতিশ কুমার। ম্যাচ টাই হওয়ার দরুণ গড়ায় সুপার ওভারে। নামিবিয়া বনাম ওমানের পর দ্বিতীয় টাই দেখা গেলো টি-২০ বিশ্বকাপে।
সুপার ওভারে জয় পেলো আমেরিকা-
মহম্মদ আমিরের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। বাম হাতি পেসারের প্রথম ডেলিভারিটিই বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিলেন অ্যারন জোনস, দ্বিতীয় বলে আসে দুই রান। তৃতীয় বলে আমির খরচ করেন মাত্র এক রান। চতুর্থ বলে ফের নিয়ন্ত্রণ হারান। ওয়াইড-সহ খরচ করে বসেন দুই রান। অতিরিক্ত বল পাওয়ার পাশাপাশি স্ট্রাইকে ছন্দে থাকা অ্যারন জোনস ফেরার সুবিধাই হয়েছিলো আমেরিকার। যদিও বড় শট মারতে পারেন নি তিনি। ফের এক রানই নেন। এরপর আবার ভুল করে বসেন আমির। ফের ওয়াইড-সহ খরচ করে বসেন দুই রান। পঞ্চম বলে দুই তুলে ১৪তে পৌঁছায় মার্কিন দল। এরপরেও ওয়াইডের ধারা বজায় রেখে ৩ রান খরচ করে ফেলেন পাক পেসার। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ১৮ রানে শেষ করে আমেরিকা। যদিও একটি রান আউট করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।
১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করার জন্য পাকিস্তান বেছে নিয়েছিলো ইফতিকার আহমেদ ও ফখর জামানকে। … নেত্রভালকারের ওভারের প্রথম বলটিতে কোনো রান আসে নি। কিন্তু তার পরের বলে পরপর বাউন্ডারি মেরে পাকিস্তানকে লড়াইতে ফিরিয়েছিলেন ইফতিকার। বাউন্ডারি হজম করার পর ওয়াইড করে বসেন মার্কিন পেসার। এক রান অতিরিক্ত দেওয়ার পরেই অবশ্য সামলে নেন নিজেকে। তৃতীয় বলে ইফতিকার আউট হতে পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে আবার চালকের আসনে বসে পড়ে আয়োজক দেশ আমেরিকাই। শেষ তিন বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিলো ১৪ রান। নেত্রভালকার ওয়াইড করায় তা কমে দাঁড়ায় ১৩তে। তিন বলে মোট ৭ রান তুলতে পারেন শাদাব খান। হেভিওয়েট পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।