সময়টা ভালো যাচ্ছে সূর্যকুমার যাদবের (Suryakumar Yadav)। গত ২৯ জুন লং অনে তাঁর দুর্দান্ত ক্যাচেই টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) ট্রফি এসেছে ভারতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেদিন সূর্য সুপারম্যান না হয়ে উঠলে দ্বিতীয় বার কুড়ি-বিশের খেলায় যে বিশ্বসেরা হওয়া যেত না তা এককথায় স্বীকার করবেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। পারফর্ম্যান্সের পুরষ্কারও মিলেছে হাতেনাতে। রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) টি-২০ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাটে অধিনায়কত্বের ব্যাটন সূর্যের হাতে তুলে দিয়েছে বিসিসিআই। হার্দিক পান্ডিয়া, জসপ্রীত বুমরাহদের (Jasprit Bumrah) মত সুপারস্টারেরা ছিলেন নেতৃত্বের দৌড়ে। কিন্তু সবাইকে পিছনে ফেলে দায়িত্ব পেয়েছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটারই। ব্যাট হাতে তিনি যেমন সকলের থেকে আলাদা, অধিনায়ক হিসেবেও যে তেমনই, তা পূর্ণ সময়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম সিরিজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
অধিনায়ক সূর্যের (Suryakumar Yadav) প্রথম পরীক্ষা ছিলো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা ওড়াতে সফল হয়েছেন তিনি। কখনও রিয়ান পরাগের হাতে বল তুলে দিয়ে বাজিমাত করেছেন। আবার কখনও পার্ট টাইমার রিঙ্কু সিং ও নিজে যথাক্রমে ১৯ ও ২০তম ওভারে হাত ঘুরিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে চমকে দিয়েছেন। ৩-০ ফলে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করে সূর্যের ভারত। চমৎকার পারফর্ম্যান্সের সুবাদে সিরিজ সেরা হন তিনিই। এমনকি বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সর্বোচ্চ সংখ্যক ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’-এর রেকর্ডেও ভাগ বসাতে দেখা যায় তাঁকে। কুড়ি-বিশের খেলায় অবিসংবাদী চ্যাম্পিয়ন ভারতের ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রী।’ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে তেমনটাই। তবে সেখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। বাকি দুই ফর্ম্যাটেও রাখতে চান প্রতিভার স্বাক্ষার।
Read More: ‘না ঘর কা না ঘাট কা…’ উন্মুক্ত চাঁদের জন্য বন্ধই রইলো মার্কিন দলের দরজা !!
টেস্ট, ওডিআই’তে সফল নন সূর্য-
কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের ব্যকরণ বদলে দিয়েছেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। ক্যালেন্ডারের হিসেবে কেরিয়ারের বয়স মাত্র ৪ বছর। এর মধ্যেই রেকর্ডের মগডালে জায়গা করে নিয়েছেন। ৭১ ম্যাচে প্রায় ৪৩ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ২৪৩২ রান। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৬৯। করেছেন ৪টি শতরান, ২০টি শতরান। টি-২০’তে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছক্কা, প্রথম ভারতীয় হিসেবে ১০০০ রানের মত রেকর্ড রয়েছে তাঁর। ২০২২-এর নভেম্বর থেকে ২০২৪-এর জুন মাস অবধি ছিলেন আইসিসি র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষস্থানে। ধ্রুপদী শটের সাথে স্কুপ, ল্যাপ শটের মত অত্যাধুনিক টি-২০ অস্ত্র রয়েছে তাঁর তূণে। ভালোবেসে অনুরাগীরা নাম দিয়েছেন ‘মিস্টার ৩৬০।’ ভারতের সর্বকালের সেরা টি-২০ খেলোয়াড়দের তালিকায় ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন তিনি।
টি-২০’র ‘মায়েস্ত্রো’ হলেও বাকি দুই ফর্ম্যাটে আহামরি সাফল্য নেই সূর্যকুমারের (Suryakumar Yadav)। ওয়ান ডে’তে ফিনিশার হিসেবে তাঁকে প্রচুর সুযোগ দিয়ে দেখেছেন আগের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। সাফল্য পান নি তিনি। ৩৭ ম্যাচে ২৫.৭৬ গড়ে সংগ্রহ মাত্র ৭৭৩ রান। অর্ধশতকের সংখ্যা ৪টি। ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর ইনিংসটি রীতিমত ক্রিকেটজনতার চোখে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিলো তাঁকে। অজিদের বিপক্ষেই গত বছর একটি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছিলো তাঁর। মাত্র ৯ রান করেই ফিরেছিলেন সাজঘরে। টি-২০তে ‘অটোমেটিক চয়েজ’ হলেও বাকি দুই ফর্ম্যাটে এখনও নির্বাচকদের প্রথম পছন্দের তালিকায় নেই সূর্যকুমার (Suryakumar Yadav)। এই অবস্থার বদল চান তিনি। নিজেই জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানালেন সূর্যকুমার-
সম্প্রতি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সুযোগ পেলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দিয়েছে বিসিসিআই। জাতীয় দলের ভিত্তি শক্তপোক্ত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। দিনকয়েক আগে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার (MCA) এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে বোর্ডের নির্দেশ মেনেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরছেন টি-২০ অধিনায়ক। বুচিবাবু ট্রফিতে আসন্ন ২৭ থেকে ৩০ অগস্ট চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে মুম্বইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচটি। সেখানেই দেখা যাবে সূর্যকুমারকে (Suryakumar Yadav)। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তারকার উপস্থিতি দলের তরুণ তুর্কিদের যে উৎসাহ যোগাবে তাও সংবাদসংস্থাকে জানান ঐ কর্মকর্তা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে (TOI) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুচিবার ট্রফি খেলার সিদ্ধানে সিলমোহর দিলেন স্বয়ং সূর্যকুমার (Suryakumar Yadav)। তিনি খোলাখুলি জানিয়েছেন, “আমি ভারতের হয়ে তিন ফর্ম্যাটেই খেলতে চাই। আসন্ন বুচিবাবু ট্রফিতে লাল বলে ফর্ম্যাটের জন্য ভালো অনুশীলন হবে।” ইতিমধ্যেই ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করে দিয়েছে মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা। অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে (Ajinkya Rahane) ও সহ-অধিনায়ক শামস মুলানি’কে দেখা যাবে না এই টুর্নামেন্টে। পরিবর্তে তরুণ সরফরাজ খানের (Sarfaraz Khan) হাতে উঠছে নেতৃত্বের ব্যাটন। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট মরসুম। বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচকদের রেডারে থাকতে এই বুচিবাবু ট্রফি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরফরাজের কাছেও।