ভারত বনাম পাকিস্তান মানেই ক্রিকেট মাঠে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। চিরকালীন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমী জনতা। শুধু উপমহাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে এই ম্যাচের জন্য আলাদাই স্থান বরাদ্দ করা থাকে। বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতায় দুই দেশ মুখোমুখি হলে টিভি দর্শকের সংখ্যা ১০০ কোটির গণ্ডী ছাড়ানোর খবরও পাওয়া গিয়েছে এর মধ্যে। তবে কূটনৈতিক কারণে নিয়মিত বাইশ গজে দেখা হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর। শেষবার ভারত পাকিস্তান গিয়েছিলো ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ খেলতে। সেই বছর’ই ২৬শে নভেম্বর মুম্বই-এর তাজ হোটেল সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জঙ্গী নাশকতার পর আর পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-পাক দ্বৈরথ দেখা যায় নি। ২০০৯ সালে ওয়াঘার অপারে যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করে ‘মেন ইন ব্লু।’ ২০১২ সালে পাক দল শেষবার ভারতে এসেছিলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে। সেই শেষ। এরপর আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় নি দুই দেশের মধ্যে। রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও প্রশাসনিক দিক থেকেও এখন নারদ-নারদ চলছে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে। এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে বিবৃতি এবং পাল্টা বিবৃতিতে জমে উঠেছে বাকযুদ্ধ। এই আবহে দ্বৈরথের মাত্রা বাড়ালেন প্রাক্তন পাকিস্তানী পেসার সোহেল খান (Sohail Khan)। ইউটিউবে সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে ভারতের গৌতম গম্ভীরের বিপক্ষে একের পর এক কটূ কথা বলতে শোনা গেলো তাঁকে।
পাকিস্তানে ইউটিউব শো’তে বেলাগাম সোহেল-

নাদির আলি নামে এক ইউটউবারকে সাক্ষাৎকার দিতে বসেছিলেন সোহেল খান (Sohail Khan)। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। কথায় কথায় সঞ্চালক গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) প্রসঙ্গ তোলেন। ভারতকে জোড়া বিশ্বকাপ জেতানো বাঁ-হাতি ওপেনারের নাম শুনেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন সোহেল। গম্ভীরের সমালোচনা করতে গিয়ে সঞ্চালক টেনে আনেন বলিউডের রাজপাল যাদবকে। সঞ্চালক নাদির আলি (Nadir Ali) গম্ভীরকে সম্বোধন করেন, “৪ ফুট, রাজপাল যাদবের ভাই” বলে। যদিও ক্রিকেট খেলার সাথে শারীরিক গঠনের কি সম্পর্ক সেই সম্বন্ধে কোনো ব্যাখ্যা দিতে শোনা যায় নি তাঁকে। এরপর নাদির আলি (Nadir Ali) গম্ভীরকে “করলার খুড়তুতো ভাই” বলেও ব্যাঙ্গ করেন। বলেন গম্ভীর সবসময় তিক্ত মেজাজেই থাকেন। উত্তরে কটূ কথার বন্যা শোনা যায় সোহেলের মুখেও। তিনি বলেন, “ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বল? লোকে সেটা শোনেও!” এই অনুষ্ঠানে একাধিকবার ভারতীয় খেলোয়াড়দের দিকে ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে সঞ্চালক এবং সোহেল’কে। একটি স্লেজিং-এর ঘটনার কথা উল্লেখ করে নিজেকে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ‘বাপ’ বলে সম্বোধন করেন সোহেল। তবে বিশ্বকাপে মুখোমুখি লড়াইতে অবশ্য সোহেলের (Sohail Khan) পাকিস্তানকে ল্যাজেগোবরে করে হারিয়েছিলো কোহলির ভারত। সেই ম্যাচে শতরানও করেছিলেন কোহলি। এছাড়া ভারতের এক্সপ্রেস পেসার উমরান মালিকের মত গতি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে একাধিক বোলারের রয়েছে বলেও দাবী করেছেন তিনি।
দেখে নিন সেই বিতর্কিত ভিডিও-
চরম সমস্যায় রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট-

সমাজমাধ্যমে পাক প্রাক্তণী ও সেই দেশের ইউটিউবার যখন ভারতকে নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন তখন ভালো অবস্থায় মোটেই নেই সেই দেশের ক্রিকেটের হাল। একের পর এক প্রশাসনিক জটিলতা গ্রাস করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। ভারতবিরোধী নানা মন্তব্য করে আগেই বিশ্বক্রিকেটের মঞ্চে পাকিস্তানকে পায় একঘরে করে ফেলেছিলেন পিসিবি চেয়ারম্যান রামিজ রাজা (Ramiz Raja)। বাধ্য হয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে তাঁকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান বোর্ড। বদলে চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। শোনা যাচ্ছে এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়েও নিজেদের দাবী থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্তান। ভারতের জেদের কাছে হেরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এশিয়া কাপ আয়োজনের ব্যাপারে সম্মতি জানাতে চলেছে পিসিবি। মাঠের বাইরে যখন বেহাল অবস্থা পাক ক্রিকেটের, সেখানে মাঠেও বিশেষ সুবিধাজনক জায়গায় নেই তারা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩-০ ফলে টেস্ট সিরিজ হারতে হয়েছে ঘরের মাঠে। মন্দ আলোর দোহাই দিয়ে কোনোরকমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র রাখতে পারলেও একদিনের সিরিজে হেরেছে ২-১ ফলাফলে। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টি-২০ সিরিজ হেরেছেন বাবর আজমরা (Babar Azam)। একই সাথে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপেও ফাইনালে মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা। ২০২৩ সালে রয়েছে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তার আগে বাইশ গজে হতশ্রী পারফর্ম্যান্স চিন্তায় রেখেছে পাকিস্তানী ক্রিকেট অনুরাগীদের।