২০১৮ সালের অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রথম ক্রিকেটজনতার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন শুভমান গিল (Shubman Gill)। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর অসামান্য শতরান মুগ্ধ করেছিলো সকলকে। ২০১৯ সালে প্রথম বার ডাক পান সিনিয়র দলে। গাব্বা’র মাঠে অনবদ্য ইনিংস খেলে অবদান রেখেছিলেন ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে। এরপর যত সময় এগিয়েছে ততই পরিণত হয়েছেন শুভমান (Shubman Gill)। টপ-অর্ডারে ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসার মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। স্বল্প দিনের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারেই তিনি জিতেছেন এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। খেলেছেন ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল’ও। ইতিমধ্যেই বাইশ গজের দুনিয়ায় বহু রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি, গড়েছেন একঝাঁক নতুন রেকর্ড। তাঁর মধ্যে সর্বকালের সেরাদের একজন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে বিশেষজ্ঞমহল।
Read More: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ‘মিশন বিশ্বকাপ’, ওয়ান ডে রোডম্যাপ তৈরি টিম ইন্ডিয়ার !!
উপ্পলে দুরন্ত ব্যাটিং শুভমান গিলের-

২০২৩ সালের গোড়ায় হায়দ্রাবাদে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেদিন ঝড় তুলেছিলেন শুভমান গিল(Shubman Gill) । টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma) সাথে ওপেনিং জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৬০ রান যোগ করেছিলেন পাঞ্জাবের তরুণ। ৩৮ বলে ৩৪ করে অধিনায়ক সাজঘরে ফেরেন। বিরাট কোহলি, ঈশান কিষণ, সূর্যকুমার যাদব-সেদিন বড় রান করতে পারেন নি কেউই। কিন্তু থামানো যায় নি কেবল শুভমানকে (Shubman Gill)। হেনরি শিপলি, লোকি ফার্গুসন, ব্লেয়ার টিকনার, মিচেল স্যান্টনারদের বিরুদ্ধে রীতিমত তাণ্ডব চালান তিনি। হাফ সেঞ্চুরি করতে নিয়েছিলেন ৫২ বল। শতকের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেন ৮৭ বলে। এরপরেও অ্যাক্সিলারেটর থেকে পা সরান নি ডান হাতি ওপেনার। দেখতে দেখতে দ্বিশতকের গণ্ডীও পেরিয়ে যান শুভমান গিল।
ইনিংসের একদম শেষ ওভারে শুভমান গিল (Shubman Gill) যখন আউট হন হেনরি শিপলি’র বলে ততক্ষণে তাঁর নামের পাশে ২০৮ রান। ইনিংস সাজিয়েছিলেন ১৯টি বাউন্ডারি ও ৯টি বিশাল ছক্কায়। স্বদেশীয় ঈশান কিষণের রেকর্ড ভেঙে ওয়ান ডে ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম দ্বিশতরানকারী হওয়ার রেকর্ড নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। মূলত শুভমানের ২০৮-এর উপর ভর করেই নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ৩৪৯ রান স্কোরবোর্ডে তুলতে সক্ষম হয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। ‘মেন ইন ব্লু’ রানের পাহাড় গড়া সত্ত্বেও ম্যাচ অবশ্য একপেশে হয় নি। উপ্পলের ব্যাটিং বান্ধব বাইশ গজের ফায়দা নিয়ে ঝড় তোলে কিউই শিবির’ও। লোয়ার মিডল অর্ডারে মাত্র ৭৮ বলে ১৪০ রান করেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। মিচেল স্যান্টনার করেন ৫৭ রান। তাঁদের দুর্দান্ত লড়াই সত্ত্বেও ৪৯.২ ওভারে ৩৩৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ১২ রানে জেতে টিম ইন্ডিয়া।
বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষে শুভমান-

শচীন তেন্ডুলকরের পর ব্যাট হাতে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছেন বিরাট কোহলি। ‘কিং’ কোহলির উত্তরসূরি হিসেবেই ক্রিকেটদুনিয়া বেছে নিচ্ছে ফাজিলকার শুভমান গিল’কে (Shubman Gill)। ইতিমধ্যেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সেরাদের তালিকায়। ৫৫টি ম্যাচ খেলে ৫৯.০৪ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ২৭৭৫ রান। স্ট্রাইক রেট ৯৯.৫৬। শতরানের সংখ্যা ৮, অর্ধশতক ১৫টি। এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন ২০২৩ সালে। বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চেও উপহার দিয়েছেন একাধিক স্মরণীয় পারফর্ম্যান্স। মাত্র ৩৮টি ইনিংসের পর আইসিসি র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষস্থানে পৌঁছনোর রেকর্ড রয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনি’র। ভারতীয় হিসেবে দ্রুততম শুভমান’ই। ২০২৩ সালে মাত্র ৪১ ইনিংস খেলেই এই নজির গড়েন তিনি। এই মুহূর্তেও আইসিসি ওয়ান ডে র্যাঙ্কিং-এ ব্যাটারদের মধ্যে শীর্ষেই রয়েছেন শুভমান গিল (Shubman Gill)।