World Cup 2023: দশ বছর কেটে গেলেও ভারতের আইসিসি ট্রফি জেতার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ২০২৩-এর ওডিআই বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) জেতার সুবর্ণ সুযোগ চলে এসেছিলো টিম ইন্ডিয়ার সামনে। দেশের মাটিতে দাপুটে ক্রিকেট উপ্হার দিয়ে ফাইনালে পা রেখেছিলো ভারতীয় দল। ফেভারিট হিসেবেই রবিবার অন্তিম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলিরা (Virat Kohli)। কিন্তু কয়েক ঘন্টা অজি ঝড়েই বেসামাল হতে হলো ‘মেন ইন ব্লু’কে। দেশের ১৪০ কোটি জনতা গত অক্টোবরের শুরু থেকে বিশ্বজয়ের যে স্বপ্নকে যত্ন করে লালনপালন করেছিলো মনের মধ্যে, তা নিমেষে মিলিয়ে গেলো মহাশূন্যে। অপেক্ষা বাড়লো আরও। পরাজিতের তকমা গায়ে চাপিয়েই মাঠ ছাড়লো ভারত।
যে দাপট নিয়ে গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালের বাধা উতরে ছিলো টিম ইন্ডিয়া, তাতে রোহিত ব্রিগেড’ই বিশ্বকাপের (ICC World Cup) ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী দল কিনা তা নিয়ে চর্চা চলছিলো। ২০০৩ এবং ২০০৭-র অস্ট্রেলিয়ার সাথে তুলনা চলছিলো ‘মেন ইন ব্লু’র। কিন্তু যে পন্টিং, গিলক্রিস্ট’রা অজি ব্রিগেডকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিলেন তাঁদের উত্তরসূরিদের হাতেই থামলো টিম ইন্ডিয়ার জয়যাত্রা। মহম্মদ কাইফ (Mohammad Kaif), গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র শেহবাগদের (Virender Sehwag) মত অনেক ভারতীয় প্রাক্তনীকে প্রকাশ্যেই কঠিন সময়ে টিম ইন্ডিয়ার পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। কাইফ তো টেলিভিশন অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন যে ফাইনালে হারলেও বিশ্বকাপের সেরা দল ভারতই। উলটো কথা বলতে শোনা গেলো পড়শি দেশ পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার শাহীদ আফ্রিদিকে (Shahid Afridi)। তিনি টিম ইন্ডিয়ার দোষত্রুটি খুঁজে নিলেন ফাইনালের পরের দিনই।
Read More: World Cup 2023: বিশ্বকাপ জিততে না পেরে ট্রভিস হেডকে নোংরা আক্রমণ নেটপাড়ার, স্ত্রী ও মেয়েকে দিল ধর্ষণের হুমকি !!
টিম ইন্ডিয়ার সমালোচনায় শাহীদ আফ্রিদি-
রবিবাসরীয় ফাইনালে টসে জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। শুরুতে শুভমান গিলকে খুইয়ে চাপে পড়েছিলো ভারত। ধুন্ধুমার ৪৭ রানের ইনিংস খেলে উইকেট হারান অধিনায়ক রোহিত শর্মা’ও (Rohit Sharma)। ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই ফিরে যান শ্রেয়স আইয়ার। এরপর চতুর্থ উইকেটের জন্য ১৮.৩ ওভারে ৬৭ রানের মন্থর পার্টনারশিপ গড়েন বিরাট কোহলি (Virat Kohli) এবং কে এল রাহুল (KL Rahul)। দুজনেই অর্ধশতরান করলেও বাকি ব্যাটাররা সফল হন নি। ২৪০ রানে থেমে যায় টিম ইন্ডিয়া। এরপর বল হাতে ৪৭ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ভারতের পেসাররা। ট্র্যাভিস হেড (Travis Head) ও মার্নাস লাবুশেনের (Marnus Labuschagne) ১৯২ রানের জুটি টিম ইন্ডিয়ার বিশ্বজয়ের স্বপ্নে দাঁড়ি টেনে দেয়।
বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) ফাইনালে হারতে হয়েছে ভারতকে। পাকিস্তানী টেলিভিশন চ্যানেল সামা টিভি’তে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ভারতের পরাজয় নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক শাহীদ আফ্রিদিকে (Shahid Afridi)। রীতিমত সমালোচনার সুরেই কথা বলেছেন তিনি। ফাইনালে শ্রেয়স আইয়ারের শট চয়ন যে তাঁর মোটেই পছন্দ হয় নি, তা কোনো রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিয়েছেন আফ্রিদি (Shahid Afridi)। টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে যাওয়া যে কাল হয়েছে ‘মেন ইন ব্লু’র জন্য, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেন, “যখন আপনি একটার পর একটা ম্যাচ জিততে থাকেন, তখন আপনার অতি আত্মবিশ্বাস’ও বাড়তে থাকে। শেষমেশ সেটাই আপনাকে ডুবিয়ে দেয়।”
আহমেদাবাদের জনতাও আফ্রিদির রোষানলে-
ফাইনালের জন্য আহমেদাবাদকে বেছে নিয়েছিলো আয়োজক সংস্থা আইসিসি। তাদের সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় ৯৩ হাজার মানুষ ফাইনাল চাক্ষুস করেছে মাঠে বসে। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের দর্শকাসনে সত্যিই সেদিন দেখা গিয়েছিলো নীল রঙের সমুদ্র। প্রায় সকলের পরণেই ছিলো ভারতের জার্সি। দলে দলে দর্শকেরা মাঠে এলেও তাঁদের আচরণ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। ভারত বেকায়দায় পড়তেই যেন থম মেরে গিয়েছিলেন মাঠের জনতা। নিরন্তর চিৎকার, স্লোগানে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়ার যে পরিবেশ ইডেন, ওয়াংখেড়ের মত মাঠে দেখা যায় তার কাছে আহমেদাবাদ যেন বড়ই নিস্তেজ ছিলো রবিবার। অনেককে দেখা গিয়েছে খেলা শেষের আগেই মাঠ ছাড়তে। দর্শকদের আচরণ’ও শিকার হয়েছে আফ্রিদির (Shahid Afridi) কটাক্ষের।
সামা টিভি’কে প্রাক্তন পাক অধিনায়ক বলেন, “আমার মনে হয় যে আমরা সকলেই এমনটা অনুভব করেছি। যখনই আমরা একটা মেরেছি বা শতরান করেছি অথবা উইকেট নিয়েছি, (ভারতীয়) জনতার থেকে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া পাই নি। গতকাল যখন ট্র্যাভিস হেড শতরান করলো, গোটা মাঠ নিঃস্তব্ধ রইলো। কেন? একটা ক্রীড়াপ্রেমী দেশ সবসময় সব ক্রীড়াবিদ ও তাঁর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু ভারতীয় দর্শক, যাঁরা নাকি শিক্ষিত, তাঁদের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় আমি অবাক হয়েছি। এটা একটা বড় শতরান ছিলো। কিছু মানুষ তো অন্তত উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতেই পারতেন। ভারতীয় দলের শরীরী ভাষায় একটা গা ছাড়া ভাব চলে এসেছিলো, দর্শকদেরও তাই।”