দুর্ভাগ্য যেন বারবার তাড়া করে বেড়িয়েছেন সঞ্জু স্যামসনকে (Sanju Samson)। কেরলের ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে অনবদ্য পারফর্ম্যান্স করে ২০১৫ সালেই জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় দলে। কিন্তু স্থায়ী হতে পারেন নি। মাঝেমধ্যে সুযোগ পেয়ে ভালো পারফর্ম্যান্স করলেও বাদ পড়তে হয়েছে কোনো অজানা কারণে। গত বছরের গোড়ায় একটি স্টিং অপারেশনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৎকালীন বিসিসিআই মুখ্য নির্বাচক চেতন শর্মা’কে দেখা গিয়েছিলো স্পষ্টই জানাতে যে উইকেটরক্ষক-ব্যাটারদের পেকিং অর্ডারে বেশ নীচের দিকেই রয়েছেন সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। এরপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। পদ থেকে সরতে হয়েছে চেতনকে। নতুন নির্বাচক প্রধান হয়েছেন অজিত আগরকার। কিন্তু সঞ্জুর ভাগ্যের বিশেষ উন্নতি হয় নি। এখনও নিয়মিত হয়ে ওঠা হয় নি তাঁর।
Read More: IPL 2025: KL রাহুলকে পেতে মরিয়া রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স, ২৫ কোটি খরচেও রাজী বিরাটদের ফ্র্যাঞ্চাইজি !!
ধুন্ধুমার দ্বিশতরান সঞ্জু স্যামসনের-
কর্ণাটলের আলুরে বিজয় হাজারে ট্রফির ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো কেরল ও গোয়া। বাইশ গজে ইতিহাস লিখেছিলেন সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেরল অধিনায়ক রবিন উথাপ্পা। ৩১ রানের মধ্যে দুই ওপেনার উথাপ্পা ও বিষ্ণু বিনোদ ফিরেছিলেন সাজঘরে। এরপর ইনিংসের ভার কাঁধে তুলে নেন সঞ্জু স্যামসন। শচীন বেবি’র (Sachin Baby) সাথে জুটি বেঁধে রানের পাহাড়ে পৌঁছে দেন দল’কে। ১৩৫ বলে ১২৭ করেন শচীন, অপরপ্রান্তে দক্ষযজ্ঞ চালাতে দেখা যায় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সঞ্জু’কে (Sanju Samson)। মাত্র ১২৯ বলে ২১টি চার ও ১০টি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন ২১২ রানে। স্ট্রাইক রেট ছিলো প্রায় ১৬৫।
সঞ্জু-শচীন জুটির সৌজন্যে নির্ধারিত ৫০ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট খুইয়ে ৩৭৭ রান তুলে ফেলেছিলো কেরল। রান তাড়া করতে নেমে যথাসাধ্য লড়াইয়ের চেষ্টা করে গোয়া’ও। অর্ধশতক করেন আদিত্য কৌশিক ও তুনিষ সাউকার। তা সত্ত্বেও নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের ব্যবধানে ২৭৩ রানের বেশী এগোতে পারে নি তারা। ১০৪ রানের ব্যবধানে বিরাট বড় জয় পায় কেরল। সঞ্জুর (Sanju Samson) দুর্দান্ত ইনিংসটি সেদিন প্রশংসা পেয়েছিলো ক্রিকেটজনতার। বড় মঞ্চের জন্য তিনি যে প্রস্তুত তা ব্যাট হাতে আলুরের বাইশ গজে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন সঞ্জু স্যামসন।
দলীপ ট্রফিতে ডাক পান নি সঞ্জু-
৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে দলীপ ট্রফি (Duleep Trophy)। অন্ধ্রপদেশ ও কর্ণাটকে হবে ম্যাচগুলি। এই টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের একঝাঁক তারকা অংশ নিতে চলেছেন। ভারত-এ স্কোয়াডে রয়েছেন শুভমান গিল, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, কে এল রাহুল (KL Rahul) , ভারত-বি স্কোয়াডে রয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল, সরফরাজ খান, ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। ভারত-সি স্কোয়াডে রাখা হয়েছে রজত পতিদার, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, সাই সুদর্শন’দের। ভারত-ডি স্কোয়াডে থাকছেন ঈশান কিষণ (Ishan Kishan), শ্রেয়স আইয়ার।
আসন্ন টেস্ট মরসুমে যাঁরা গায়ে চাপাতে পারেন ভারতীয় জার্সি, তাঁদের অধিকাংশকেই রাখা হয়েছে টুর্নামেন্টে। কিন্তু চার দলের একটিতেও জায়গা হয় নি সঞ্জু স্যামসনের (Sanju Samson)। বাদই দেওয়া হয়েছে কেরলের উইকেটেরক্ষক-ব্যাটারকে। দিনকয়েক আগে সঞ্জু জানিয়েছেন যে তিন ফর্ম্যাটেই খেলতে চান তিনি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে আপাতত আন্তর্জাতিক অভিষেক যে হচ্ছে না তাঁর, তা স্কোয়াড থেকেই স্পষ্ট। আসন্ন রঞ্জি ট্রফিকেই পাখির চোখ করতে হতে পারে তাঁকে।
সঞ্জু স্যামসনের কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টি-২০ অভিষেক হয়েছিলো কেরলের সঞ্জু স্যামসনের (Sanju Samson)। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেন প্রথম একদিনের ম্যাচ। এখনও পর্যন্ত তিনি ৩০টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ও ১৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। কুড়ি-বিশের ফর্ম্যাটে করেছেন ৪৪৪ রান। ব্যাটিং গড় ১৯.৩০। অর্ধশতকের সংখ্যা ২। স্ট্রাইক রেট ১৩১.৬৬। পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে পরিসংখ্যান বেশ ভালো। ১৪ ইনিংসে করেছেন ৫১০ রান। গড় ৫৬.৬৬। স্ট্রাইক রেট ৯৯.৬০।ইতিমধ্যেই ৩টি অর্ধশতক ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি শতরান করেছেন তিনি।
কেরলের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন ৬২টি ম্যাচ। করেছেন ৩৬২৩ রান। ১০টি শতক ও ১৩টি অর্ধশতক রয়েছেন ঝুলিতে। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১২৮ম্যাচে সংগ্রহে ৩৪৮৭ রান। শতক ৩টি, অর্ধশতক ১৯টি। টি-২০তে ২৭৮ ম্যাচে সঞ্জু (Sanju Samson) করেছেন ৬৭৯১ রান। ৩টি শতক রয়েছে তাঁর। অর্ধশতক ৪৬টি। দস্তানা হাতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট-এ ও টি-২০তে তাঁর ক্যাচ ও স্টাম্পিং-এর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৯ ও ৭, ১২৫ ও ১৫ এবং ১৪০ ও ৩০। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়কত্ব করেছেন সঞ্জু। ২০২২ সালে খেলেছেন ফাইনাল’ও।