সাম্প্রতিক কালে এশীয় ক্রিকেটের মানচিত্রে নেপালের চমকপ্রদ উত্থানের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছিলেন সন্দীপ লমিছানে (Sandeep Lamichhane)। বছর ২৩-এর লেগস্পিনার মাত্র ৫১ একদিনের ম্যাচে তুলে নিয়েছিলেন ১১২ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-২০’র আঙিনাতেও ৫২ ম্যাচে ৯৮ উইকেট ছিলো তাঁর ঝুলিতে। গোটা বিশ্বের কাছে নেপাল ক্রিকেটের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সন্দীপকে (Sandeep Lamichhane) নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছিলেন নেপালী ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু শেষমেশ সেই স্বপ্ন আর সত্যি হচ্ছে না তাঁদের। ধর্ষণের অপরাধে গতকাল নেপালের আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে তাঁকে। লমিছানের ক্রিকেট কেরিয়ার এখন দাঁড়িয়ে ধ্বংসের মুখে।
গত প্রায় দুই বছর ধরে মামলা চলছিলো সন্দীপ লমিছানের (Sandeep Lamichhane) বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিলো বছর ১৭-র এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছেন নেপালের ক্রিকেটার। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর প্রায় এক মাস পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন সন্দীপ লমিছানে। পরে অবশ্য আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেন। ২০২২-এর ৬ অক্টোবর পুলিশ গ্রেপ্তার করে সন্দীপ’কে। প্রাথমিক শুনানির পর তাঁর ৭ দিনের জেল হেফাজত হয়েছিলো, পরে তা আরও ৫ দিন বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে তা আরও বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছিলো। তবে ২০২৩-এর ১২ জানুয়ারি পাটন হাইকোর্ট তাঁকে শর্তসাপেক্ষে বেল দেন। এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলেন সন্দীপ। কিন্তু গতকাল কাঠমান্ডু ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ফের একবার দোষী সাব্যস্ত হলেন তিনি।
Read More: Asia Cup 2023: “অধিনায়কের থেকে এটা কাম্য নয়…” ধর্ষণে অভিযুক্ত লমিছানের সাথে ছবি তুলে রোষের মুখে রোহিত শর্মা !!
ঠিক কি অভিযোগ সন্দীপের বিরুদ্ধে?
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সন্দীপ লামিছানের (Sandeep Lamichhane) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়, তাতে ১৭ বছরের নাবালিকা জানিয়েছিলেন যে ২১শে অগস্ট ক্রিকেট তারকা তাঁকে নিয়ে কাঠমান্ডু ও ভক্তপুরের নানা জায়গায় গিয়েছিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে কাঠমান্ডুর সিনামঙ্গল অঞ্চলের একটি হোটেলে যান সন্দীপ। সেখানেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। এই অভিযোগ সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেপাল ক্রিকেট দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয় লামিছানে’কে। নাবালিকা যখন এই অভিযোগ পুলিশ’কে জানান সন্দীপ (Sandeep Lamichhane) ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (CPL) খেলতে। সেখানেও লীগ থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলেন আয়োজক’রা। প্রথমে পুলিশের মুখোমুখি হতে চান নি তারকা ক্রিকেটার। বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য নানান পোস্ট করতে থাকেন।
তাতে কোনো সুরাহা না হওয়ায় শেষমেশ কাতার এয়ারওয়েজের বিমানে দোহা হয়ে কাঠমান্ডু পৌঁছান তিনি। নিজেই ধরা দেন পুলিশের হাতে। জেল হেফাজত হলেও তখনও নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছিলেন সন্দীপ। বলেছিলেন, “আমি নিশ্চিত আমি খুব দ্রুত সুবিচার পাবো। আমি যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ করে আবার মাঠে ফিরতে চাই। আবার আমার প্রিয় দেশের জার্সি গায়ে সন্মান আদায় করতে চাই ভক্তদের। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তদন্তকারী সংস্থাদের সাথে যে কোনো রকম সহযোগিতা করতে আমি রাজী। আইনি লড়াইয়ের জন্য আমি প্রস্তুত।” এক বছরেরও বেশী সময় আইনি দড়ি টানাটানি চললেও শেষমেশ রায় সন্দীপের (Sandeep Lamichhane) বিরুদ্ধেই গেলো।
দীর্ঘ হাজতবাস অপেক্ষা করছে সন্দীপের জন্য-
২০১৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই টি-২০ ফর্ম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সন্দীপ লমিছানের (Sandeep Lamichhane)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আইসিসি বিশ্ব একাদশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮তেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে খেলেন প্রথম একদিনের ম্যাচ। গত পাঁচ বছরে তিনি সব মিলিয়ে ১০০’র বেশী আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন ২০০’র বেশী উইকেট। ওডিআই ক্রিকেটে দ্রুততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের নজিরও গড়েছেন সন্দীপ লমিছানেই (Sandeep Lamichhane)। পিছনে ফেলেছেন আফগানিস্তানের তারকা রশিদ খান, পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কদের’ও।
দেশ-বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলিতেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন সন্দীপ (Sandeep Lamichhane)। প্রথম নেপালী ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএল খেলেন তিনি। ৯ ম্যাচে নেন ১৩ উইকেট। এছাড়াও বিগ ব্যাশ, সিপিএল-ও খেলেছেন। কিন্তু ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় থমকে যাওয়ার মুখে সম্ভাবনাময় তরুণের ক্রিকেট কেরিয়ার। কাঠমান্ডু টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী নেপালের কাঠমান্ডু ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মহামান্য বিচারপতি শিশির রাজ ধাকালের সিঙ্গল বেঞ্চ গতকাল সন্দীপকে (Sandeep Lamichhane)দোষী সাব্যস্ত করলেও এখনও অবধি সাজা ঘোষণা করে নি। পরবর্তী শুনানিতে তা ঘোষণা করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞমহলের ধারণা অন্তত ৩ থেকে ১০ বছরের হাজতবাস হতে পারে সন্দীপ লমিছানের।