SA vs IND: জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্সে আজ সিরিজের তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত (SA vs IND)। বৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিলো ডারবানে। এরপর পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত হেরে বসেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যা চাপ বাড়িয়েছে সূর্যকুমার যাদবের দলের উপর। তারুণ্যে ঠাসা টিম ইন্ডিয়াকে সিরিজে সমতা ফেরাতে গেলে আজ জিততেই হবে। না হলে হাতছাড়া হবে সিরিজ। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে টসে জিতেছে প্রোটিয়ারা। তাদের অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বেছে নিয়েছেন বোলিং। টসের সময় ভারতের কার্যনির্বাহী অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব জানিয়েছিলেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চান তিনি ও তাঁর দল। আজ জোহানেসবার্গের মাঠে কথা রাখলেন ‘মিস্টার ৩৬০’। ব্যাট হাতে দলের ভরসার স্থল হয়ে উঠলেন তিনি।
ভারতের হয়ে ওপেন করতে নেমে শুরুটা ভালো করেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল ও শুভমান গিল। দ্রুত গতিতে স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস ছিলো তাঁদের। কিন্তু বাধ সাধেন কেশব মহারাজ। দ্রুত দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। শুভমানের সাথে সাথে ফিরে যান তিনে নামা তিলক বর্মা’ও। এরপর যশস্বীর সাথে জুটি বেঁধে ভারতীয় ইনিংসকে পুনরায় গড়ে তোলার কাজটা করলেন সূর্যকুমার যাদব। প্রথমে যশস্বীকে আগ্রাসী ভূমিকায় খেলার সুযোগ করে দিয়ে নিজে রইলেন সহায়কের ভূমিকায়। পরে গিয়ার বদলান ভারত তথা বিশ্বের এক নম্বর টি-২০ ব্যাটার। তাঁদের দুইজনের দুর্দান্ত দুটি ইনিংসই বড় রানের ভিত গড়ে দেয় টিম ইন্ডিয়ার। যশস্বী অর্ধশতক করে ফিরলেও, শতকের আগে থামলেন না সূর্যকুমার যাদব। তাঁদের দুজনের ব্যাটিং তাণ্ডবে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে তুললো ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২০১ রান।
Read More: IPL 2024: নিলামের আগে অধিনায়ক বদল কেকেআরের, এই খেলোয়াড়কে দেওয়া হল দায়িত্ব!!
সূর্য-যশস্বীর তাণ্ডবে রানের পাহাড় ভারতের-
গত ম্যাচে শুভমান গিল ও যশস্বী জয়সওয়াল, দুই ওপেনারই আউট হয়েছিলেন শূন্য রান করে। আজ তা সত্ত্বেও ওপেনিং জুটিতে বদল করেন নি কোচ রাহুল দ্রাবিড়। আজ প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভঙ্গিমাতেই ব্যাটিং-এর প্রয়াস করতে দেখা গেলো দুজনকে। দ্রুত ১২ রানে পৌঁছে গিয়েছিলেন শুভমান। মেরেছিলেন ২টি চার’ও। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাড়া করলো তাঁকে। কেশব মহারাজের বলে লেগ বিফোর উইকেট হলেন তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে ছিলেন না মহারাজ। আজ মাঠে ফিরেই তুলে নিলেন জোড়া উইকেট। শুভমানকে ফেরানোর পরের বলেই তিনি আউট করেন তিলক বর্মাকে। আগের ম্যাচে ২৯ করলেও আজ শূন্য রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
শুভমান ও তিলক পরপর আউট হলেও তরুণ বাম হাতি ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের মনসংযোগে চিড় ধরে নি। সবলীল ভঙ্গিতে ইনিংস গড়ার কাজে মন দিতে দেখা যায় তাঁকে। গত ম্যাচের ব্যর্থতায় গুটিয়ে না থেকে ফ্রন্ট ফুটে এসে প্রতিপক্ষ বোলারদের বেশ কয়েকবার বাউন্ডারির ঠিকানায় পাঠাতে দেখা গেলো তাঁকে। ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারের সাহায্যে ৪১ বলে করলেন ৬০ রান। ১৪৬.৩৪ স্ট্রাইক রেটে খেলা ইনিংসটি ভারত’কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চালকের আসনে বসতে সাহায্য করলো আজ। তাবরেজ শামসির বলে আউট হন তিনি। যশস্বীর সাথে সাথে জোহানেসবার্গের মাঠে ঝলসে উঠলো সূর্যকুমার যাদবের ব্যাট’ও। দুজনে জুটি গড়েন ১১২ রানের।
টি-২০তে তিনিই শ্রেষ্ঠ, প্রমাণ করলেন সূর্য-
একদিনের ক্রিকেটে তাঁর ফর্ম নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালেও তাঁর মন্থর ইনিংস নিয়ে চলেছে বহু কাটাছেঁড়া। কিন্তু টি-২০ ক্রিকেটে যে তাঁর ধারেপাশেও কেউ নেই, তা আবার বুঝিয়ে দিলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। প্রোটিয়া বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করতে দেখা গেলো মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রীকে। ইনিংসের গোড়ার দিকে খানিক শান্ত, স্তিমিত’ই ছিলো তাঁর ব্যাট। যশস্বী জয়সওয়ালকেই বড় শট মারার ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ যত গড়ালো, ততই ডালপালা মেলে মহীরুহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলো সুর্যকুমারের ব্যাট। কেবের্হায় গত ম্যাচে ৫৬ রান করেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে পারেন নি। আজ সেই পারফর্ম্যান্সকে ছাপিয়ে গেলেন ভারত অধিনায়ক। ধুন্ধুমার ব্যাটিং-এ নান্দ্রে বার্গার, লিজাড উইলিয়ামসদের ফেললেন বেকায়দায়। আন্দিলে ফেলুকায়েও’র এক ওভার থেকে নিলেন ২৩ রান। ইনিংস সাজালেন ৭ চার ও ৮ ছক্কায়।
এর আগে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনটি আন্তর্জাতিক টি-২০ শতরান ছিলো সূর্যকুমার যাদবের। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কেরিয়ারের চতুর্থ শতকটিও এলো তাঁর ব্যাট থেকে। আন্তর্জাতিক টি-২০তে সর্বোচ্চ শতরানের নিরিখে সুর্যকুমার ছুঁয়ে ফেললেন রোহিত শর্মা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল’কে। এই নিয়ে তৃতীয়বার বিদেশের মাটিতে টি-২০ শতরান করলেন তিনি। ৫৬ বলে ১০০ রান করে ফিরলেন সাজঘরে। পাঁচে নেমে আজ বড় রান পান নি রিঙ্কু সিং। ১৪ বলে ১৪ রান করে আউট হন তিনি। রিঙ্কুকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের প্রথম উইকেট পেলেন নান্দ্রে বার্গার। শেষ ওভারে আউট হন জাদেজা। হিট উইকেট হন জিতেশ শর্মা’ও। গত ম্যাচে ১৫ ওভারে ১৫২-এর লক্ষ্য ৭ বল বাকি থাকতেই তাড়া করে দিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ তাদের সামনে লক্ষ্য ২০২ রানের। জিততে গেলে বোলিং-এর ধার বাড়াতেই হবে টিম ইন্ডিয়াকে।