SA vs IND: ২০২৩-এর শেষটা ভালো হয় নি ভারতীয় দলের। বক্সিং ডে টেস্ট হাতছাড়া হয়েছিলো আড়াই দিনেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে টিম ইন্ডিয়া (Team India) হেরেছিলো ইনিংস ও ৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে। ব্যাট হাতে কাগিসো রাবাডা, নান্দ্রে বার্গারদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়েছিলো অধিকাংশ ব্যাটারকে। ব্যাট হাতেও ভারতের সাফল্যের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেন ডিন এলগার। মার্কো ইয়ানসেনরা। এলগারের ১৮৫, ইয়ানসেনের অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংসের তলায় চাপা পড়ে ভারতীয় বোলিং লাইন আপ। টি-২০ সিরিজ ড্র রেখেছে ভারত, একদিনের সিরিজে এসেছে জয়। তারপর টেস্টের ব্যর্থতা অন্ধকারে ঢেকেছিলো ‘মেন ইন ব্লু’ সাজঘরকে। নতুন বছরের গোড়ায় কেপ টাউনে ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়েই মাঠে নেমেছিলো রোহিত-বাহিনী।
দ্বিতীয় টেস্ট’ও যে পাঁচ দিন গড়াবে না, তা দিব্যি বোঝা গিয়েছিলো কেপ টাউনের প্রথম সেশনেই। টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। মহম্মদ সিরাজের দাপটে ৫৫ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়া ইনিংস। ভালো বোলিং করেন বুমরাহ, মুকেশ কুমার’ও। ব্যাট হাতে টিম ইন্ডিয়া দ্রুত প্রতিপক্ষের রান টপকে গেলেও, দিনের শেষ সেশনে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিলো তাদের ব্যাটিং-ও। ১৫৩ রানের বেশী যোগ করা যায় নি স্কোরবোর্ড। ৯৮ রানে পিছিয়ে ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। মুকেশ-বুমরাহ’র দাপটে প্রথম দিনের খেলা শেষের আগেই তারা খোয়ায় আরও ৩ উইকেট। এরপর দ্বিতীয় দিনের সকালে লড়াই চললো এইডেন মার্করাম বনাম ভারতীয় পেসারদের। শতরান করে মার্করাম ফিরতেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো ম্যাচের ভাগ্য। ৭৯ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে চতুর্থ ইনিংসে নেমে টি-২০’র মেজাজে জয় ছিনিয়ে নিলেন রোহিত-বিরাটরা।
Read More: SA vs IND: “আজ দিনটা বুমরাহ’র…” কেপ টাউনে গতির আগুন ঝরিয়ে নেটমাধ্যমের শুভেচ্ছা কুড়োলেন ভারতীয় পেসার !!
বুমরাহ বিক্রমে ব্যাকফুটে প্রোটিয়ারা-
গতকাল ভারতের হয়ে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছিলেন মহম্মদ সিরাজ। ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৫ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। আজ সেই ভার কাঁধে তুলে নিতে দেখা গেলো জসপ্রীত বুমরাহকে। সেঞ্চুরিয়নে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। কেপ টাউনে প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট ছিলো তাঁর ঝুলিতে। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ক্ষুরধার লাগলো তাঁকে। গতকালই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ট্রিস্টান স্টাবসকে। আজ সকালে বুমরাহ’র গতি ও স্যুইং-এর ধাক্কায় সাজঘরের পথ ধরেন ডেভিড বেডিংহ্যাম, কাইল ভেরিয়ান, মার্কো ইয়ানসেন ও কেশব মহারাজ। এক প্রান্ত থেকে পরপর উইকেট পড়লেও অপরপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মার্কো ইয়ানসেন। গতকাল ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালে দুর্দান্ত এক ইনিংস দেখা গেলো তাঁর ব্যাটে।
বুমরাহ-সিরাজ-মুকেশ বনাম এইডেন মার্করাম। কেপ টাউনের সকালে এমন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দেখা গেলো আজ। একার কাঁধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেনে নিয়ে গেলেন মার্করাম। বাকিরা যেখানে স্যুইং-এর নাগাল পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে তিনি ওয়ান ডে ক্রিকেটের ভঙ্গিতে ব্যাট করে ১০৩ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন ব্যাট হাতে। মারেন ১৭ চার ও দুই ছক্কা। ভারতের লীড টপকে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাহায্য করেন মার্করাম’ই। একবার তাঁর ক্যাচ অবশ্য ছেড়েছিলেন কে এল রাহুল। দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে বেশ কিছু রান প্রোটিয়া স্কোরবোর্ডে যোগ করেন তিনি। শেষমেশ সিরাজ ফেরান মার্করামকে। নবম উইকেটের পতনের পর প্রতিরোধের প্রয়াস ছিলো রাবাডা ও বার্গারের। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এনে রাবাডাকে আউট করেন সেই বুমরাহ। ৬১ রানে ৬ উইকেট তাঁর। ১৭৬-এ থামে প্রোটিয়ারা।
প্রথমবার কেপ টাউনের মাঠে টেস্ট জয় ভারতের-
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার পর টিম ইন্ডিয়ার সামনে লক্ষ্য ছিলো ৭৯ রানের। বাইশ গজের মতিগতি দেখে অঘটনের আশঙ্কা একেবারে ছাড়তে পারছিলেন না সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁদের আশ্বস্ত করে যশস্বী জয়সওয়ালের ব্যাট। প্রতিপক্ষ বোলারদের মাথায় চড়ে বসার কোনো সুযোগই দেন নি তিনি। শুরু থেকেই বড় শট মারার দিকে লক্ষ্য ছিলো তাঁর। ৬টি চারের সাহায্যে ২৩ বলে ২৮ রান করে ভারতকে একটা লঞ্চপ্যাড উপহার দিয়ে যান তিনি। এরপর নান্দ্রে বার্গারের বলে ট্রিস্টান স্টাবসের হাতে ধরা পড়লেও বিশেষ সমস্যা হয় নি ভারতীয় দলের। তিনে নেমে ফের কম রানেই আউট হতে হলো শুভমান গিল’কে। ১১ বলে ১০ করেন তিনি। কাগিসো রাবাডার নীচু থেকে যাওয়া বল সামলাতে না পেরে বোল্ড হতে হয় শুভমানকে। ভারত যখন দ্বিতীয় উইকেট হারায়, তখন স্কোরবোর্ডে ৫৭।
রোহিত-বিরাটের জুটি দৃপ্ত পদক্ষেপে ভারতকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছিলেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২টি চোখধাঁধানো বাউন্ডারিও মেরেছিলেন কোহলি। কিন্তু ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড় হয় নি তাঁর। লক্ষ্য থেকে মাত্র মার্কো ইয়ানসেনের বলে তিনি আউট হন। করেন ১২ রান। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটেই শেষমেশ আসে জয়সূচক রান। অপরপ্রান্তে থাকা রোহিতের সংগ্রহ ২২ বলে ১৭* রান। আড়াই দিনে সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট হারতে হয়েছিলো ভারতকে। দেড় দিনে কেপ টাউন টেস্ট জিতে রোহিত শর্মা ও তাঁর সতীর্থরা দেখিয়ে দিলেন বিদেশের মাঠে জয়ের অভ্যেস ভোলে নি টিম ইন্ডিয়া। গত ৩১ বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ ড্র রাখতে পারলো ভারত। কেপ টাউনের মাঠে ম্যাচ জিতলো প্রথমবার।