এগিয়ে আসছে টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup)। জুন মাসের গোড়া থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসতে চলেছে প্রতিযোগিতার আসর। সাজসাজ রব ক্রিকেটদুনিয়া জুড়েই। প্রস্তুতি সারছে দলগুলো। পিছিয়ে নেই ভারতও। এগারো বছর আইসিসি ট্রফি নেই ক্যাবিনেটে। গত বছরই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে পরাজয়ের গ্লানি সঙ্গী হয়েছে টিম ইন্ডিয়ার। তাই এবার টি-২০ বিশ্বকাপই (T20 World Cup) পাখির চোখ রোহিত অ্যান্ড কোম্পানির।
খেতাব জয়ের লক্ষ্যে গত পরশু স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই। তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার সঠিক মেলবন্ধন খুঁজতে চেষ্টা করেছেন অজিত আগরকারের (Ajit Agarkar) নেতৃত্বাধীন নির্বাচকেরা। মূল স্কোয়াডে ১৫ জন ও ট্র্যাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে আরও ৪ জন’কে। গত কয়েক মাসে দেশের জার্সিতে ১৫ টি-২০তে ৮৯ গড়ে ৩৫৬ করা রিঙ্কু সিং (Rinku Singh) মূল স্কোয়াডে থাকবেন, আশায় ছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু তাঁর ঠাঁই হয়েছে অতিরিক্তের তালিকায়। মূল স্কোয়াডের তিন তারকার জায়গায় খেলা উচিৎ রিঙ্কুরই, উঠছে দাবী।
Read More: SRH vs RR, Match-50, Toss Report in Bengali: রাজস্থান বনাম হায়দ্রাবাদ লড়াই উপ্পলে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে টসের মুদ্রা !!
হার্দিক পান্ডিয়া-
আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya) দলে জায়গা দিয়েছেন ভারতীয় নির্বাচকেরা। একই সাথে অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ডেপুটি অর্থাৎ সহ-অধিনায়ক হিসেবেও তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অফ ফর্মে থাকা হার্দিক কি করে দলের অংশ হলেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। গোড়ালির চোটে লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। তারপর আইপিএলে (IPL) প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েও মোটেই সফল নন তিনি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেতা হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ। দল রয়েছে লীগ তালিকার নয় নম্বরে। একই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সের গ্রাফও ঠেকেছে মাটিতে।
চলতি আইপিএলে এখনও অবধি হার্দিক (Hardik Pandya) খেলেছেন ১০টি ইনিংস। তাঁর রান সংখ্যা ১৯৭। গড় ১৯.৭০। বল হাতে তিনি নিয়েছেন কেবল ৬টি উইকেট। ইকোনমি ১১-র বেশী। বোলিং গড়’ও প্রায় ৪৩। একটি ম্যাচেও আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেন নি তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপেও (T20 World Cup) তিনি দলের বোঝা হতে চলেছেন বলেই মত অধিকাংশ ক্রিকেটবোদ্ধার। সাধারণত পাঁচ বা ছয় নম্বরে ব্যাটিং করে থাকেন হার্দিক। তাঁকে বাদ দিয়ে ঐ জায়গায় মূল স্কোয়াডে রিঙ্কু সিং-কে (Rinku Singh) নেওয়া হলে টিম ইন্ডিয়া একজন যথার্থ ‘ফিনিশার’ পাবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবীন্দ্র জাদেজা-
তালিকায় দ্বিতীয় নামটি হতে পারে রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja)। টি-২০তে দীর্ঘ সময় উল্লেখযোগ্য পারফর্ম্যান্স নেই জাদেজার। তা সত্ত্বেও বিশ্বকাপের (T20 World Cup) মত মঞ্চে তাঁকে সুযোগ দেওয়ার পথে হেঁটেছে ভারতীয় বোর্ড। কেরিয়ারে ৬৬টি আন্তর্জাতিক টি-২০তে ২২.৮৫ গড়ে ৪৮০ করেছেন তিনি। একটি অর্ধশতকও করতে পারেন নি তিনি। লোয়ার অর্ডারে তিনি আদৌ ব্যাট হাতে ভরসা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। শেষ দশ ইনিংসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ১৮ বলে ৪৫ ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ২৯ বলে ৪৬ ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান নেই তেমন। তবে সেই পারফর্ম্যান্সগুলির বয়সও পেরিয়েছে দুই বছর।
জাদেজ্রার (Ravindra Jadeja) স্পিন বোলিং তাঁর পক্ষে কথা বলতে পারত। কিন্তু পরিসংখ্যান উল্টোচিত্রটাই দেখাচ্ছে। ৬৬ ম্যাচে নিয়ে মাত্র ৫৩ উইকেট। যা মোটেই আহামরি নয়। দলে অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav), যুজবেন্দ্র চাহালের মত স্পিনার থাকতেও অতিরিক্ত স্পিনার হিসেবে জাদেজাকে ১৫ জনের স্কোয়াডে জায়গা দেওয়া যৌক্তিকতা নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক টি-২০তে দীর্ঘসময় ছন্দ থেকে দূরে থাকা জাদেজার বদলে পরীক্ষিত ‘ফিনিশার’ রিঙ্কুকে (Rinku Singh) জায়গা দেওয়াই সঠিক হত। বোলিং না করলেও ফিল্ডিং-এ জাদেজার সমকক্ষ হয়ে নিঃসন্দেহে উঠতে পারতেন আলিগড়ের তরুণ।
যুজবেন্দ্র চাহাল-
এই আলোচনায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসছে যুজবেন্দ্র চাহালের (Yuzvendra Chahal) নাম। ২০২১ বা ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে কেরিয়ারের সেরা ফর্মে থাকার সময় যুজবেন্দ্র চাহালকে খেলানো হয় নি। ২০২১-এর টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে তো জায়গায় হয় নি হরিয়ানার লেগস্পিনারের। ২০২২-এর টুর্নামেন্টে দলে রাখা হলেও রিজার্ভ বেঞ্চেই সময় কেটেছিলো তাঁর। রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এবারও যুজবেন্দ্র চাহালের (Yuzvendra Chahal) প্রথম একাদশে খেলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যেখানে স্কোয়াডে আগে থেকেই জাদেজা, অক্ষর, কুলদীপের মত তিন স্পিনার রয়েছেন সেখানে চাহালকেও জায়গা দেওয়ার কোনো মানে হয় না বলছেন অনেকে।
লম্বা সময় জাতীয় দলের বাইরেই ছিলেন চাহাল (Yuzvendra Chahal)। গত বছরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-২০তে ব্যর্থ হওয়ার পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান সিরিজ থেকেও বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এছাড়া এশিয়া কাপ (Asia Cup), বিশ্বকাপের (ICC World Cup) সময়ও টিম ইন্ডিয়ার চৌহদ্দিতে দেখা যায় নি তাঁকে। আচমকা হরিয়ানার লেগস্পিনারকে দলে ফিরিয়ে কি বার্তা দিতে চাইলেন নির্বাচকেরা তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছেই। এক অতিরিক্ত স্পিনার না খেলিয়ে সেই জায়গায় গত কয়েক মাসে লাগাতার পারফর্ম করা রিঙ্কু সিং-কে (Rinku Singh) জায়গা দেওয়াই যেত বলে মনে করছেন ক্রিকেটবোদ্ধাদের একটা বড় অংশ।