ভারতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সের নিরিখে বলা যেতে পারে সাফল্যের চেয়ে হতাশার পরিমাণই বেশী। শেষবার টিম ইন্ডিয়া (Team India) বিশ্বকাপ জিতেছিলো ২০১১ সালে। এরপর কেটে গিয়েছে বারো বছর। ২০১৫ এবং ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো। শেষ আইসিসি ট্রফি জয়ের পরেও কেটে গিয়েছে দশ বছর। মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) হাত ধরে ২০১৩ সালে এসেছিলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এরপর এসেছে বিরাট কোহলি জমানা। ২০২২-এর গোড়ায় তিন ফর্ম্যাট থেকে সরে গিয়েছেন বিরাট। বর্তমানে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কোচের পদ থেকে রবি শাস্ত্রীকে (Ravi Shahstri) সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় রাহুল দ্রাবিড়’কে (Rahul Dravid)। তাঁদের আমলেও আশা জাগিয়ে শুরু করে খোয়াতে হয়েছে ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ। হাতছাড়া হয়েছে ২০২৩-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাবও।
গত বছরে কোচ দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) প্রথম বড় পরীক্ষা ছিলো এশিয়া কাপে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মাঠে টিম ইন্ডিয়া শেষ চারের যোগ্যতা অর্জন করলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার তাদের ছিটকে দিয়েছিলো প্রতিযোগিতা থেকে। টি-২০ বিশ্বকাপেও বদলায় নি চিত্রটা। গ্রুপ শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করেছিলো ভারত। কিন্তু ফাইনালের টিকিট আর মেলে নি। উলটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হেরে ছিটকে যেতে হয়েছিলো টুর্নামেন্ট থেকে। দ্রাবিড়-রোহিত জুটির নবতম ব্যর্থতার উপাখ্যান লেখা হলো গত জুন মাসে ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে ভারত হারলো ২০৯ রানের ব্যবধানে। ক্রমাগত ব্যর্থতার পর উঠছে দ্রাবিড়কে সরানোর দাবী। পরিবর্ত হিসেবে আলোচনায় উঠে আসছে প্রাক্তন অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং-এর (Ricky Ponting) নাম।
Read More: বিসিসিআইয়ের উপেক্ষার জবাব দিতে এবার বিদেশে খেলছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান, প্রথম ম্যাচেই তুললেন ছয়-চারের ঝড় !!
দ্রাবিড়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা-
২০১৮ সালে অনুর্দ্ধ-১৯ ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। কিন্তু সিনিয়র দলের দায়িত্ব পেয়ে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেন নি তিনি। বড় টুর্নামেন্টে ভারতের লাগাতার হতাশাজনক ফলই তার প্রমাণ। এর আগে এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপে তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিলো অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হওয়ার অভিযোগ। কুড়ি-বিশের খেলার আগ্রাসী ছন্দের সাথে তাঁর দলের ক্রিকেটাররা তাল মেলাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বিভিন্ন সিরিজে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়ার নীতির বিরুদ্ধেও আঙুল উঠেছিলো। সোচ্চার হয়েছিলেন সমর্থকেরাও। এই বছরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালের পর দ্রাবিড় (Rahul Dravid) বিরোধী আওয়াজ আরও তীব্র হয়েছে।
ওভালে দ্রাবিড়ের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত এসেছে আতসকাঁচের তলায়। প্রথমত টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো তা জানতে চাইছেন সমর্থকেরা। পাশাপাশি উইকেটে স্পিনারদের জন্য সাহায্য থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট বোলার রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে বাইরে রেখে কেনো চার পেসার নীতি নেওয়া হলো? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। হারের পর এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিলো দ্রাবিড়ের দিকে। তাঁর দেওয়া জবাব মনঃপূত হয় নি কারওরই। গত শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে বার্বাডোজের মাঠে ৬ উইকেটে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) হারও মানতে পারছেন না সমর্থকেরা। ট্যুইটারে ট্রেন্ড করেছে Sack Dravid হ্যাশট্যাগ।
পন্টিং-এর হাত ধরে সাফল্য পেতে পারে ভারত-
এক যুগ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট। দেখা যাচ্ছে একাধিক বড় রদবদল। টেস্ট, একদিনের ক্রিকেট এবং টি-২০ তিন দলেই সিনিয়রদের জন্য আস্তে আস্তে বন্ধ হচ্ছে দরজা। পরিবর্তে জুনিয়রদের সুযোগ দেওয়ার পথে হাঁটছে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara), উমেশ যাদবদের (Umesh Yadav) বাদ দেওয়া হয়েছে। সুযোগ পাচ্ছেন ঈশান কিষণ, যশস্বী জয়সওয়াল, মুকেশ কুমাররা। বদল এসেছে নির্বাচক মন্ডলীতেও। চেতন শর্মা স্টিং অপারেশনে জড়িয়ে ইস্তফা দেওয়ার পর নয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতীয় প্রাক্তনী অজিত আগরকারকে। এবার কোচের পদেও আসতে পারে বদল। ভারতের মধ্যমানের পারফর্ম্যান্সকে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাহুল দ্রাবিড়কে সরিয়ে কোচ করা হতে পারে রিকি পন্টিং-কে (Ricky Ponting)।
কোচিং জগতের সাথে পরিচিত অজি কিংবদন্তি পন্টিং (Ricky Ponting)। এর আগে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের পরামর্শদাতার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। বেশ কয়েক বছর দিল্লী ক্যাপিটালস (DC) দলেও রয়েছেন কোচের হটসিটে। দিল্লী দলে কাজ করার সুবাদে ভারতীয় পরিবেশ এবং ক্রিকেটারদের সম্বন্ধে সম্যক ধারণাও রয়েছে তাঁর। কোচ হিসেবে টিম ইন্ডিয়াকে সাফল্য এনে দিতে পন্টিং-এর পুঁজি হতে পারে তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতা। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। ঝুলিতে রয়েছে ৭১টি শতরান। এছাড়াও তিনি জিতেছেন তিনটি একদিনের বিশ্বকাপ। এরমধ্যে অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন দুটি। জয়ের জন্য প্রয়োজনে কিভাবে নির্মম হতে হয় তা ভালোই জানেন পন্টিং। তীরে এসে তরী ডোবা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা টিম ইন্ডিয়াকে (Team India) বৈতরণী পার করাতে পারেন পন্টিং’ই।