বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রানের ব্যবধানে শোচনীয় হারের পর এক মাস ক্রিকেট থেকে বিরতিতে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ক্রিকেটাররা। জুলাই মাসের গোড়ায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উদ্দেশ্যে উড়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২টি টেস্ট, ৩টি একদিনের ম্যাচ এবং ৫টি টি-২০ খেলবে ভারতীয় দল। ‘মেন ইন ব্লু’র জন্য সামনে অপেক্ষা করে রয়েছে এশিয়া কাপ, একদিনের বিশ্বকাপের মত বড় প্রতিযোগিতা। তাই জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের একদিনের দলের দিকে নজর ছিলো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের। গতকাল যে দল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে রয়েছে বেশ কিছু চমক। দীর্ঘ সময় পর ভারতীয় শিবিরে ফিরেছেন সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson)। ঈশান কিষণের পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসেবে তিনিও যে নজরে রয়েছেন তা বুঝিয়েছে বিসিসিআই। দলে ফিরেছেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ও (Ruturaj Gaikwad)। এছাড়াও বছর একুশের তরুণ যশস্বী জয়সওয়ালের ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়াও উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
২০১৯-২১ এবং ২০২১-২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) সাইকেলের ফাইনালে হেরেছে ভারত। নয়া সাইকেলের সূচনাতে টেস্ট দলেও বড় পরিবর্তনের পথে হেঁটেছে বিসিসিআই। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজের জন্য যে দল ঘোষণা করেছে তারা, তাতে জায়গা হয় নি মিডল অর্ডারের স্তম্ভ চেতেশ্বর পূজারার। জায়গা হয় নি উমেশ যাদবেরও। বদলে ঋতুরাজ (Ruturaj Gaikwad), যশস্বীদের (Yashasvi Jaiswal) নিয়ে বিসিসিআই বুঝিয়ে দিয়েছে যে লাল বলের ক্রিকেটেও এবার সামনের দিকে তাকাতে চাইছে তারা। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের আপাতত দলে রাখা হলেও তাঁদের ভবিষ্যত নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। টেস্ট ও একদিনের স্কোয়াডে একাধিক নতুন মুখের জায়গা হলেও জায়গা হয় নি সরফরাজ খানের (Sarfaraz Khan)। গত কয়েক মাস ধরেই টেস্ট দলে সরফরাজকে দেখতে চাইছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর উইন্ডিজ সিরিজেও তাঁকে দলে রাখার ভাবনা থেকে দূরেই থাকলেন নির্বাচকেরা।
Read More: Asia Cup 2023: এশিয়া কাপের জন্য নতুন ১১ জন সদস্য বেছে নিলো BCCI, প্রথম বারের জন্য বিদেশ ভ্রমণের পাবে সুযোগ !!
এই কারণেই বাইরে সরফরাজ খান-
ব্যাট হাতে ২০১৯ থেকে ২০২২ অবধি এর পর থেকে ১০০’র তলায় নামে নি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সরফরাজ খানের (Sarfaraz Khan) ব্যাটিং গড়। সমগ্র প্রথম শ্রেণির কেরিয়ারে ৭৯.৬৫ ব্যাটিং গড় তাঁর। ২০২১-২২ রঞ্জি ট্রফিতে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ৯৮২ রান। হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রজত পতিদারের (Rajat Patidar) থেকে ৩০০’র বেশী রানে এগিয়ে ছিলেন তিনি। মুম্বই ক্রিকেট সংস্থা থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত প্রদর্শনের জন্য ৭টি পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। তার আগের মরসুমেও ৬ ম্যাচে করেছিলেন ৯২৮ রান। ২০২২-২৩ রঞ্জি মরসুমেও সরফরাজের ব্যাটে দেখা গিয়েছে রানের বন্যা। রঞ্জি ট্রফিতে ৯২.৬৬ গড়ে ৫৫৬ রান করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কেরিয়ারে ৩৭ ম্যাচে ৩৫০৫ রান করেছেন সরফরাজ (Sarfaraz Khan)। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার নতুন সংজ্ঞা লেখা সরফরাজ (Sarfaraz Khan) ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। এক নম্বর স্বয়ং স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (Sir Don Bradman)।
পরিসংখ্যান তাঁর পক্ষে গেলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হচ্ছে না সরফরাজের (Sarfaraz Khan) প্রতি। সাধারণত মুম্বই দলের হয়ে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে দেখা যায় সরফরাজকে। ভারতীয় দলে সেই জায়গায় এতদিন খেলছিলেন শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)। যার ফলে জায়গা হচ্ছিলো না সরফরাজের। শ্রেয়স চোটের জন্য বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। ওভালগামী দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো অভিজ্ঞ ব্যাটার অজিঙ্কা রাহানেকে। ১৬ মাস পরে জাতীয় দলে ফিরে সেই সুযোগ দুই হাত দিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন রাহানে (Ajinkya Rahane)। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হারলেও দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৮৯ এবং ৪৬ রান করে ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন রাহানেই। চাপের মুখে তাঁর দৃঢ় ব্যাটিং লজ্জার হাত থেকে বাঁচায় টিম ইন্ডিয়াকে। সেই কারণে আপাতত রাহানেকেই পাঁচ নম্বরে সঠিক বিকল্প ভাবছে দল। উইন্ডিজ সফরে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সহ-অধিনায়কত্বও। রাহানের (Ajinkya Rahane) টেস্ট কেরিয়ারের পুনর্জন্মের ফলে বাইরেই থাকতে হচ্ছে সরফরাজ খান’কে (Sarfaraqz Khan)।
দেখে নিন উইন্ডিজ সফরের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দল-
টেস্ট-
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, বিরাট কোহলি, যশস্বী জয়সওয়াল, অজিঙ্কা রাহানে (সহ-অধিনায়ক), কে এস ভরত (উইকেটরক্ষক), ঈশান কিষণ (উইকেটরক্ষক), রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুর, অক্ষর প্যাটেল, মহম্মদ সিরাজ, মুকেশ কুমার, জয়দেব উনাদকাট, নবদীপ সাইনি।
একদিনের ম্যাচ-
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, যশস্বী জয়সওয়াল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, ঈশান কিষণ (উইকেটরক্ষক), সঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, জয়দেব উনাদকাট, উমরান মালিক, মহম্মদ সিরাজ, মুকেশ কুমার।