বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের হারের পরেই হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya) ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে ফেরানোর দাবী জোরালো হয়েছিলো। অনেক বিশেষজ্ঞই ম্যাচের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন শিবিরে ক্যামেরন গ্রিনের মত পেস বোলিং অলরাউন্ডার থাকায় অনেকটা এগিয়েছিলো অজিরা। ইংল্যান্ডের পরিবেশে কার্যকরী হতে পারত হার্দিকের বোলিং। সাথে ব্যাট হাতেও মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারে দলের পতন রোধ করতে পারতেন তিনি। আগামী জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০২৩-২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) সাইকেলের সূচনা করতে চলেছে টিম ইন্ডিয়া। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) কাছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের অনেকে অনুরোধ করেছিলেন হার্দিককে টেস্ট দলে ফেরানোর ব্যাপারে।
দেশের জার্সিতে ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। মাঝে চোটের কবলে পড়ে ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। ২০২২ সালে সীমিত ওভারের খেলায় দলে ফিরলেও দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে খেলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান নি তিনি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনাল শুরুর আগে তাঁকে টেস্ট ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যখন আমি মনে করবো আমি তৈরি তখনই টেস্ট ক্রিকেটে ফিরবো। যাঁরা দলকে ফাইনালে তুলেছেন, তাঁদের জায়গা কেড়ে আমি দলে ঢুকতে চাই না।” হার্দিকের মন্তব্যের পড়েও তাঁর কাছে টেস্ট খেলার আবেদন করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলেন, “টি–২০ স্পেশ্যালিস্ট অনেকে আসবে। হার্দিক পান্ডিয়া রয়েছে…যদিও আমি মনে করি যে হার্দিক টেস্ট ক্রিকেটে দলের সম্পদ এবং ওর উচিৎ টেস্টে প্রত্যাবর্তন ঘটানো। কারণ সেইটার জন্যই ওকে মনে রাখবে লোকে। ও একদিনের ক্রিকেট এবং টি–২০’র স্পেশ্যালিস্ট। কিন্তু আমার কাছে ও একজন স্পেশ্যাল ক্রিকেটার।” পরে অন্য একটি সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেছিলেন, “আমি আশা করি হার্দিক আমার কথা শুনছে…আমি চাই ও টেস্ট ক্রিকেট খেলুক।” তবে এই বিষয়ে সৌরভের (Sourav Ganguly) সাথে মতভেদ পোষন করছেন রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। হার্দিকের টেস্ট খেলার ব্যাপারে নেতিবাচক সুর শোনা গেলো তাঁর গলায়।
Read More: IND vs WI: “বোধগম্য হচ্ছে না…” উইন্ডিজ সফরের দল দেখে নির্বাচকদের একহাত নিলেন সুনীল গাভাস্কার !!
টেস্ট খেলার দরকার নেই হার্দিকের, মত শাস্ত্রীর-
শুধুমাত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নন, অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (Ricky Ponting), দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনারও (Lance Klusener) চেয়েছিলেন ভারতের ডান-হাতি অলরাউন্ডার ফিরুন টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে। কিন্তুম এই বিষয়ে ভিন্ন মত জানালেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। হার্দিকের চোটের বিষয়টি মাথায় রেখেছেন তিনি। টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন হেডস্যার বলছেন, “পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, ওর (হার্দিক পান্ডিয়ার) শরীর টেস্ট ক্রিকেটের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।” প্রসঙ্গত ভারতের হয়ে ২০১৮ সালে শেষবার সাদা জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন হার্দিক। ১১ টেস্ট ম্যাচে ১টি শতরান-সহ তিনি করেছেন ৫৩২ রান। নিয়েছেন ১৭ উইকেট। চোটের কারণে লম্বা স্পেলে বোলিং করতে পারছিলেন না পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। যা তাঁকে টেস্ট থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো। বর্তমানে অবশ্য চোট সারিয়ে সম্পূর্ন ফিট তিনি। সীমিত ওভারের খেলায় চুটিয়ে বোলিং করছেন। তবুও টেস্ট দলে দেখা যায় নি তাঁকে।
হার্দিকের টেস্ট ভবিষ্যতের পাশাপাশি সঞ্জু স্যামসনকে (Sanju Samson) নিয়েও মুখ খুলেছেন শাস্ত্রী। দ্য উইককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সঞ্জু (স্যামসন) আমি মনে করি এখনও নিজের দক্ষতার শিখরে পৌঁছায় নি। ও একজন ম্যাচ–উইনার। কিন্তু কিছু যেন একটা নিখোঁজ এখনও ওর খেলায়। আমি খুবি হতাশ হবো যদি না ও আগুনে ফর্মে থেকে নিজের কেরিয়ারে ইতি টানে। যেমন আমি যখন কোচ ছিলাম, আমার দলে রোহিত শর্মা নিয়মিত টেস্ট না খেললে যেমন হতাশ হতাম। তাই রোহিতকে দিয়ে টেস্টে ওপেন করিয়ে ছিলাম। সঞ্জুর ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম লাগবে ।”
নয়া নেতার পক্ষে সওয়াল রবি শাস্ত্রীর-
২০২২-এর কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের পর রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মত সিনিয়র ক্রিকেটারা ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাটে দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে আর মাঠে নামেন নি। অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। গত বছর গুজরাত টাইটান্সের হয়ে নেতা হিসেবে আইপিএল জয়ের পর থেকেই ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবে বিসিসিআই-এর রেডারে রয়েছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তাঁকে। এরপর নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও টি-২০ ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি একদিনের ম্যাচেও অধিনায়কত্ব করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ODI ক্রিকেটে ভারতের ২৭তম অধিনায়ক হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারের পর সমালোচনার শিকার হয়েছেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। দাবী উঠেছে অপসারণের। দেশজোড়া ‘রোহিত হটাও’ রবের মাঝে সাদা বলের ক্রিকেটে স্বাভাবিক উত্তরসূরি হিসেবে হার্দিককে (Hardik Pandya) প্রথম পছন্দ অনেক বিশেষজ্ঞের। এবার তাঁর হয়ে সওয়াল করতে দেখা গেলো প্রাক্তন জাতীয় কোচ রবি শাস্ত্রীকেও (Ravi Shastri)। ‘দ্য উইক’কে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বললেন তিনি। তবে এক্ষুণি রোহিতকে (Rohit Sharma) সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। সামনে ২০২৩-এর এশিয়া কাপ, একদিনের বিশ্বকাপ রয়েছে। এখন নেতা বদলের ফলে যে সমস্যায় পড়তে হতে পারে দল’কে, তা চাইছেন না তিনি। বলেন, “বিশ্বকাপের পর, যদি হার্দিকের শরীর ফিট থাকে, তাহলে সাদা বলের ক্রিকেটে ওরই নেতৃত্বভার কাঁধে তুলে নেওয়া উচিৎ। তবে বিশ্বকাপে নেতা থাকুন রোহিতই। এই ব্যাপারে কোনো দ্বিধা নেই”